পাখী কখন যেন উড়ে যায়,
বদ হাওয়া লেগে খাঁচায়।
খাঁচার আড়া প’লো ধসে,
পাখী আর দাঁড়াবে কিসে?
এখন আমি ভাবি বসে,
সদা চমক জ্বরা বচ্ছে গায়।
কার বা খাঁচায় কার বা পাখী,
কার জন্যে বা ঝরে আঁখি।
(পাখী) আমারি আঙ্গিনায় থাকি,
আমারে মজাতে চায়।
(যেদিন) সুখের পাখী যাবে উড়ে,
খালি খাঁচা রবে পড়ে।
(সেদিন) সঙ্গের সাথী কেউ রবে না
লালন ফকির কেঁদে কয়।।
————
শ্রীসতীশচন্দ্র দাস, ‘হারামণি’, প্রবাসী, আষাঢ় ১৩২২; বাংলার বাউল ও বাউল গান, পৃ. ৩৬
রবীন্দ্র-সদনে রক্ষিত গানের খাতায় এর অনেক পাঠভেদ আছে। এজন্য পাঠটি সম্পূর্ণ তুলে দেওয়া হল:
পাখী কখন জানি উড়ে যায়।
বদ হাওয়া লেগে খাঁচায় ॥
খাঁচার আড়া পলো ধসে,
পাখী আর দাঁড়াবে কিসে,
ঐ ভাবনা ভাবছি বসে,
চমক জুরা বইছে গায়।
ভেবে অন্ত নাহি দেখি,
কার বা খাঁচা কেবা পাখী,
আমার এই আঙ্গিনায় থাকি
আমারে মজাতে চায়।
আগে যদি যেত জানা,
জঙ্গলা কভু পোষ মানে না,
তবে উহার প্রেম করতাম না,
লালন ফকির কেন্দে কয়।।
লালন ফকির : কাব্য ও কাব্য, পৃ. ১৫১; লালন-গীতিকা, পৃ. ৬২; বাউল কবি লালন শাহ, পৃ. ২৭৬
‘খাঁচার ভিতর অচিন পাখী’ সূচনাত্মক গানের ভাবের সাথে এ গানের ভাবের মিল আছে। উভয় গানে ‘পাখী’ পরমাত্মা এবং ‘খাঁচা’ মানবদেহের প্রতীক। মরমিয়া সাধনা অন্তর্মুখী ভাবাত্মক হওয়ায় রূপক প্রতাঁকের আশ্রয়ে তা প্রকাশ করা হয়। বাউল সাধনা গুহ্য সাধনা হওয়ায় বাউল গানে নানা রূপক প্রতাঁকের আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। লোকগীতি-স্বরলিপি’, ২য় খণ্ডে স্বরলিপিসহ এর উল্লেখ আছে। – পৃ. ৪৫
Leave a Reply