ডুবে দেখ দেখি মন কিরূপ লীলাময়।
যারে আকাশ-পাতাল খুঁজি, এ দেহে সে রয়।
শুনতে পাই চার-কারের আগে
সাঁই শাস্ত্র করেছিল রাগে
এবে সে অটল রূপ ঢাকে
মানুষ-রূপ লীলা জগতে দেখায়।
লামে আলেফ লুকায়(১) যেমন
মানুষে সাঁই আছে তেমন
তা নইলে কি সব নূরী-তন
আদম তনে সেজদা সালাম করায়।
আহাদে আহমদ হল(২)
আদমে সে জন্ম নিল
লালন মহা ঘোরে পলো
সিরাজ সাঁই কয়, লীলার অন্ত না পাওয়ায়।।
————
লালন ফকির : কবি ও কাব্য, পৃ. ১৫৯
লালন-গীতিকা’য় অন্তরার ২য় চরণে ‘শাস্ত্র’ স্থলে ‘আশ্রয়’ এবং সঞ্চারীর ৩য় চরণে ‘নূরি-তন’ স্থলে ‘নূরী-স্তোন’ কথান্তর আছে।– পৃ. ২৫৯
‘বাউল কবি লালন শাহ’ গ্রন্থে শব্দে ও চরণে পাঠভেদ আছে। যথা–
অন্তরা– শুনতে পাই এই চার কারের আগে
অশ্রু বার করেছিল রাগে
সেই বেশে অটল রূপ
এই মানবলীলা জগৎময়।
সঞ্চারী– লাম আলেফে লুকায় যেমন
মানুষে সাঁই আছে তেমন
তা না হলে সব নূর রতন
আদম রতনকে সেজদা জানায়। -পৃ. ৯০
বস্তুত এরূপ পাঠ ত্রুটিপূর্ণ। ‘লালন-সঙ্গীতে’ অন্তরার ২য় চরণ “আশ্রয় করেছিল রাগে” এবং আভোগের ৩য় চরণ “লালন মহা ফ্যারে পল”- এরূপ কথার আছে।
১. ‘লাম’ আরবি ভাষার নবম হরফ, ‘আলেফ’ প্রথম হরফ। আলেফ দাড়ির মতো একটি রেখা বিশেষ; লামে ঐ রেখার নিচের দিকে একটু বাঁক আছে। হরফের এ রূপ গঠনগত রূপ থেকে বলা হয়েছে ‘লামে আলেফ লুকায়’।
২. আহাদ– আল্লার নাম; আহমদ হজরত মহম্মদের নাম। আরবিতে আহাদ ও আহমদ লেখার মধ্যে মিম হরফের পার্থক্য আছে। আহাদ শব্দে মিম যুক্ত হরলে আহমদ শব্দ পাওয়া যায়। সুফিরা আহাদ ও আহমদ তথা পরমাত্ম ও জীবাত্মার মধ্যে এরূপই পার্থক্য করে থাকেন। রূপগত পার্থক্য আছে, কিন্তু আত্মা অভিন্ন।
Leave a Reply