ক্ষম অপরাধ ওহে দীননাথ,
কেশে ধরে আমায় লাগাও কিনারে।
তুমি হেলায় যা কর তাই করতে পার,
তোমা বিনে পাপী তারণ কে করতে পারে।
শুনতে পাই পরম পিতে গো তুমি,
তোমার অতি অবোধ বালক গো আমি।
যদি ভজন ভুলে কুপথে ভ্ৰমি,
তবে দাও না কেনে সুপথ স্মরণ করে।
পতিতকে তরাও হে পতিতপাবন নাম,
তাইতে তোমায় ডাকি গুণধাম।
এবার আমার বেলায় কেনে হলে বাম,
আমি আর কতকাল ভাসব দুঃখ-সাগরে।
অথায়(১) তরঙ্গ আতঙ্গে(২) মরি,
কোথায় হে অপারের কাণ্ডারী।
ফকির লালন বলে, তরাও তো তরী
নইলে দয়াল নামে দোষ্য রবে সংসারে।।
————
সরলাদেবী, ‘লালন ফকির ও গগন’, ভারতী, ভাদ্র ১৩০২
‘লালন ফকির : কবি ও কাব্যে’ একটি অতিরিক্ত স্তবকও আছে :
না বুঝে পাপ-সাগরে ডুবে খাবি খাই
শেষ কালে তোর দিলাম গো দোহাই।
এবার আমায় যদি না তরাও গো সাঁই
তোমার দয়াল নামের দোষ রবে সংসারে।
এ ছাড়াও ৩য় স্তবকের শেষ চরণে “আমি আর কতদিন ভাসব দুঃখের পাথারে।” এবং ভনিতার শেষ চরণে “নামের মহিমা জানাও ভব-সংসারে।” কথান্তর আছে।– পৃ. ১৪৩-৪৪
লালন-গীতিকা (পৃ. ২৭৮) ও বাংলার বাউল ও বাউল গান (পৃ ১৫-১৬) গ্রন্থ দুটির পাঠ রবীন্দ্রসদনে রক্ষিত গানের খাতার উপরোক্ত পাঠের অনুরূপ।
যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত কর্তৃক সংগৃহীত এবং প্রবাসী, চৈত্র ১৩৩১ সংখ্যায় ‘পল্লীসঙ্গীতে ভক্তকবি ফকির লালন সা’ নামে প্রবন্ধে প্রকাশিত পাঠটি এরূপ :
ক্ষম অপরাধ, ও হে দীননাথ,
কেশে ধরে আমায় লাগাও কিনারে।
তুমি হেলায় যা কর
তাই করতে পার
দয়াল! তোমা বিনে পাপীর
কে তারণ করে ৷
শুনতে পাই পরম পিতা গো তুমি
অতি অধম বালক আমি
ভজন ভুলে কুপথে ভ্ৰমি
তবে দাও না কেন কুপথ সরল করে।
হেথায় তরঙ্গ আতঙ্কে মরি
কোথায় হে ভবপারের কাণ্ডারী
ফকির লালন বলে, তরাও হে তরী
ও তোর দয়াল নামের দোসর রবে সংসারে৷– পৃ ৭৫৫
‘বাউল কবি লালন শাহ’ গ্রন্থে অন্তরা ও সঞ্চারী স্তবকের পাঠে ভিন্নতা আছে। নিচে তা তুলে দেওয়া হল :
পাপীকে তরাতে পতিতপাবন নাম
তাইতে তোমায় ডাকি গুণধাম
আমার বেলায় কেন হলে বাম
তোমার দয়াল নামের দোষ রবে সংসারে।
শুনতে পাই পরম পিতা গো তুমি
অতি অবোধ বালক আমি
তোমার সুপথ ভুলে কুপথে ভ্রমি
দাও না কেন সুপথ স্মরণ করে।।– পৃ. ৩১৭-১৮
১. অথায়– অথই, অগাধ, গভীর; ২. আতঙ্গে– আতঙ্কে। উভয় শব্দ আঞ্চলিক উচ্চারণের ফল।
Leave a Reply