আকার নিরাকার সেই রব্বানা।
আহমদ আর আহাদ নামের বিচার
হলে যায় জানা।
খুঁজিতে বান্দার দেহে
খোদা সে রয় লুকাইয়ে
আহাদে মিম বসায়ে
আহমদ
হল সে জনা।
আহমদ নামে দেখি
মিম হরফ লেখে নবি
মিম গেলে আহাদ বাকি
আহমদ
নাম থাকে না।
এই পথের অর্থ ঢুঁড়ে
কারও জ্ঞান বসবে ধড়ে
কেউ কবে লালন ভেড়ে
ফাকড়াম বই বোঝে না।।
————
লালন ফকির : কবি ও কাব্য, পৃ. ২৪৪; লালন-গীতিকা, পৃ. ১৯০ (এখানে অন্তরা ও সঞ্চারী স্তবকের স্থান বদল হয়েছে। এ ছাড়া শব্দগত সামান্য কথান্তর আছে।) ‘হারামণি’ ১ম ও ৫ম খণ্ডে গানটি সংকলিত হয়েছে। ১ম খণ্ডে সঞ্চারী এভাবে সংকলিত হয়েছে :
যখন সাঁই নৈরাকারে
ভেসেছিল ডিম্ব ওরে
আহমদে মিম বসায়ে
আহমদ
নাম হল সে না।
আভোগের ২য় চরণ ‘যার জ্ঞান বচ্ছে ধরে’ রূপে লেখা হয়েছে।– পৃ. ৩৮-৩৯; মনসুরউদ্দীন গানটি ‘শাহ লালন ফকিরের গান’ শিরোনামে বঙ্গবাণী, অগ্রহায়ণ ১৩৩৩ (পৃ. ৪৫৩) সংখ্যায় পূর্বেই প্রকাশ করেন। ৫ম খণ্ডের আভোগটি নিম্নরূপ :
আহমদের তত্ত্ব জেনে
কারও জ্ঞান বসবে ধড়ে
সিরাজ সাঁই কয়, লালন ভাইরও
ফাতরামি
সাঁই গেল না।।– পৃ. ১-২
এ পাঠটি শুদ্ধ নয়। এতে অন্ত্যমিল রক্ষিত হয়নি। তিনি গানটিকে ‘হামদ-নাত’ শ্রেণীভুক্ত করেছেন। লালন ঠিক এরূপ আঙ্গিকে কোন গান রচনা করেননি। আমরা একে নবীতত্ত্বের গান বলেছি। আহাদ আল্লার নাম; আহমদ হজরত মহম্মদের নাম। উভয়ের নামের বানানে একটি মিম হরফের পার্থক্য। অর্থাৎ স্রষ্টার আর জীবের মধ্যে দেহ বা রূপগত পার্থক্য। আল্লা নিরাকার, মানুষ সাকার; তবে আত্মারূপে উভয়ে অভিন্ন। গানটির মৌলিক বক্তব্য এটাই। লালন আহাদ-আহমদের রূপ-অরূপের এই সম্পর্কের কথা, একাধিক গানে উল্লেখ করেছেন।
Leave a Reply