নজর একদিক গেলে আর দিক অন্ধকার হয়।
নূরে নরে দুটি নেহার কেমনে ঠিক রাখা যায়।।
আইন জারি জগৎ জোড়া
সেজদা হারাম খোদা ছাড়া
মুরশিদ বরজক (১) সামনে বেড়া
কোথা থুই সেজদার সময়।।
সকলে রাবেতা (২) বলে
বরজক লেখে দলিলে
কারে রাখি কারে ফেলে
একমনে দুই কৈ দাঁড়ায়।
বেলায়েতের৩ হলে বিচার
ঘুচে যেত ঘোর অন্ধকার
লালন বলে, এধার ওধার
দুই ধারাতে খাবি খায়।।
————
৩০৯. লালন ফকির : কবি ও কাব্য, পৃ. ২৪৫; লালন-গীতিকা, পৃ. ১৯৮-৯৯
১. বরজক<বরজখ (আরবি)– মৃত্যুর পর মহাবিচারের পূর্ব পর্যন্ত অন্তবর্তী সময়কে বরজক বলে। সুফিবাদে এর বহুল ব্যবহার আছে।
২. রাবেতা<রোবিতা (আরবি)– সম্পর্ক, মিলন, বেলায়েত<বিলায়ৎ (ফারসি)– বিদেশ।
কথান্তর :
নজর একদিকে দিলে আর একদিকে
অন্ধকার হয়।
নরে নূরে
দুটি নেহার কেমনে ঠিক রাখা যায়।।
সকলের আত্মা বলে
বর্জোক লিখিলেন দলিলে
কারে থুয়ে কারে নিলে
দুই দিকে
মন কই দাঁড়ায়।।
আইন করলেন জগৎ জোড়া
সেজদা হারাম খোদা ছাড়া
মুরশিদ বর্জোক সামনে খাড়া
সেজদার সময় তুই কোথায়।।
যদি বিলায়েতে হতো বিচার
ঘুচে যেতো মনের আঁধার
লালন বলে, এধার-ওধার
দুই ধারে
মন খাবি খায়।।
বাংলার বাউল ও বাউল গান, পৃ. ১১৮ এখানে অন্তরা ও সঞ্চারীর স্থান-বদল হয়েছে। শুধু পদ নয়, পদ-বিন্যাসেও হস্তক্ষেপ হয়েছে। “ঈশ্বর এবং গুরু দুই দিকেই নজর ঠিক রাখিতে হইবে। খোদা ব্যতীত কাহাকেও সেজদা করিতে নাই, কিন্তু মুরশিদ গুরু বরজখের মত ঈশ্বর এবং মানবের মধ্যে রহিয়াছেন, ঈশ্বরকে সেজদা করিবার সময় মুরশিদের উপর নজর যায়। এই দুই রূপ (খোদা এবং মুরশিদ) ঠিক রাখিতে হইবে। ঈশ্বরোপলব্ধি এবং গুরুতে নির্দেশ দুই দিকে সমান ভাবে দৃষ্টি রাখিয়া সাধনার পথে অগ্রসর হইতে হইবে।”–লালন-গীতিকা, পৃ. ৩৩৮
Leave a Reply