শ্ৰীশচন্দ্ৰ বসু, বিদ্যার্ণব (২১-৩-১৮৬১ –- ২৩-৬-১৯১৮) পৈতৃকনিবাস-টেংরা-ভবানীপুর-খুলনা। পিতার কর্মক্ষেত্র পাঞ্জাবের লাহোরে জন্ম। পিতা শ্যামাচরণ পাঞ্জাবের শিক্ষা-অধিকর্তার প্রধান কর্মচারিরূপে সেখানে উচ্চশিক্ষা বিস্তারে প্রভূত সাহায্য করেন। বাল্যে পিতৃবিয়োগ ঘটলে মাতা ভুবনেশ্বরীর যত্নে পড়াশুনা করেন। লাহোরে পাঠরত থেকে ১৮৭৬ খ্রী. কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এন্ট্রান্স পরীক্ষায় তৃতীয় স্থান অধিকার করেন। লাহোরের সরকারী কলেজ থেকে ১৮৮১ খ্ৰী. বি.এ. পাশ করেন। ১৮৮২ খ্রী. পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে ১৮৮৩ খ্রী. তিনি সেখান থেকে শিক্ষক-শিক্ষণ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে শিক্ষকতা বৃত্তি গ্ৰহণ করেন। লাহোর মডেল স্কুলের প্রধান শিক্ষক থাকা কালে তিনি উর্দু ভাষায় প্রাকৃতিক ভূগোল-বিষয়ে একখানি পুস্তক লেখেন। এই সময়ে ‘স্টুডেন্টস ফ্রেন্ড’ নামে ইংরেজী পত্রের পরিচালনা ও সম্পাদনা করেন। কলিকাতার ‘ইণ্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন’-এর অনুসরণে পাঞ্জাবে ‘ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল সোসাইটি’ (১৮৮৩) গঠনে অন্যতম প্ৰধান উদ্যোক্তা ছিলেন। ১৮৮৬ খ্রী. এলাহাবাদ হাইকোর্ট-পরিচালিত আইন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তিনি আইন ব্যবসায়ে নিযুক্ত হন এবং অল্পদিনেই এলাহাবাদ হাইকোর্টে দক্ষ আইনজীবিরূপে প্ৰতিষ্ঠা লাভ করেন। ইতিমধ্যে তিনি পিটুম্যান উদ্ভাবিত পদ্ধতিতে আশুলিখন (Shorthand) শিক্ষা করে বিচারপতিদের ‘রায়’গুলির আশুলিখনের ভার গ্ৰহণ করেছিলেন। পরবর্তী কালে তিনি সরকারী বিচার বিভাগে যোগ দেন। বহুভাষাবিদ ছিলেন। হিন্দু আইন উত্তমরূপে আয়ত্ত করার উদ্দেশ্যে সংস্কৃত অধ্যয়ন করেন। বাইবেল গ্রন্থের যথাযথ মৰ্মগ্রহণের জন্য হিব্রু ও গ্ৰীক ভাষা শিখেছিলেন। আরবী ও ফারসী ভাষা শিখে ইসলাম ধর্মের মর্ম গ্ৰহণ করেন। ল্যাটিন, ফরাসী ও জার্মান ভাষায়ও তাঁর দক্ষতা ছিল। পাণিনীয় অষ্টাধ্যায়ীর ইংরেজী অনুবাদ (১৮৯১) তাঁর প্রধানতম কীর্তি। তাঁর অন্যান্য অনূদিত গ্ৰন্থ: ভট্টোজী দীক্ষিত প্ৰণীত ব্যাকরণ গ্ৰন্থ ‘সিদ্ধান্ত কৌমুদী’, ‘শিবসংহিতা’, শাঙ্কর-ভাষ্যসহ ‘ঈশোপনিষদ’ এবং প্রধান প্রধান উপনিষদসমূহ, মধবাচার্যকৃত ভাষ্যসহ ‘ছান্দোগ্য উপনিষদ’, বলদেব বিদ্যাভূষণকৃত ভাষ্যসহ ‘বেদান্তসূত্র’, বিজ্ঞানেশ্বররচিত ‘মিতাক্ষরা ভাষ্য’, বলমভট্ট-রচিত টীকাসহ ‘যাজ্ঞবল্ক্য স্মৃতি’, ফরাসী ভাষায় লিখিত দারা শিকোহর ‘ইবন শাজাহান’ প্রভৃতি। এছাড়া যাবতীয় হিন্দুধর্মশান্ত্রের সার সঙ্কলন করে প্রশ্নোত্তরে ইংরেজীতে একটি গ্ৰন্থ, হিন্দী ভাষায় একটি বর্ণপরিচয় এবং হিন্দী ভাষায় আশুলিখন প্ৰণালী বিষয়ে পুস্তক রচনা করে প্ৰকাশ করেন। ‘সেখ চিল্লী’ ছদ্মনামে তিনি উত্তর ভারতে প্রচলিত কতকগুলি উপকথা সংগ্ৰহ করে ইংরেজীতে লিপিবদ্ধ করেন! এই গ্ৰন্থটি শান্তা দেবী ও সীতা দেবী কর্তৃক ‘হিন্দুস্থানী উপকথা’ নামে বাংলায় অনূদিত হয়। ১৯০১ খ্রী. এলাহাবাদের নিজ বাড়িতে (বাহাদুরগঞ্জস্থ ভুবনেশ্বরী আশ্রমে)। তিনি প্রাচীন হিন্দুশাস্ত্র প্রচারের উদ্দেশ্যে ‘পাণিনি কাৰ্যালয়’ স্থাপন করেন। এখান থেকে দুর্লভ বা অপ্রকাশিত হিন্দুশাস্ত্ৰগ্ৰন্থসমূহ ‘সেক্রেড বুকস অফ দি হিন্ডুজ’ নামক সিরিজে প্রকাশের ব্যবস্থা হয়। অনুজ মেজর বামনদাস তার সম্পাদনার ভার গ্ৰহণ করেন। ১৯০৯ খ্রী. এই গ্ৰন্থমালা প্রবর্তিত হয়। ১৮৮৮ খ্ৰী. এলাহাবাদে তাঁর প্রতিষ্ঠিত বালিকা বিদ্যালয়টি ঐ স্থানে দেশীয়দের দ্বারা পরিচালিত প্ৰথম বালিকা বিদ্যালয়। ১৯১১ খ্রী. সরকার কর্তৃক রায়বাহাদুর এবং বিদ্যাবত্তার জন্য কাশীর পণ্ডিতমণ্ডলী কর্তৃক ‘বিদ্যার্ণব’ উপাধি দ্বারা সম্মানিত হন।
পূর্ববর্তী:
« শ্ৰীশচন্দ্ৰ পাল
« শ্ৰীশচন্দ্ৰ পাল
পরবর্তী:
শ্ৰীশচন্দ্ৰ বিদ্যারত্ন »
শ্ৰীশচন্দ্ৰ বিদ্যারত্ন »
Leave a Reply