শ্ৰীমতী ঠাকুর (৩-৯-১৯০৩ — ১৭-৭-১৯৭৮)। আমেদাবাদের বিখ্যাত শিল্পপতি পুরুষোত্তম ও লীলা হাতি সিং-এর কন্যা। খ্যাতনামী নৃত্যকলাবিদ। অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দিয়ে সরকারী কলেজ ত্যাগ করেন ও আমেদাবাদের ন্যাশনাল কলেজে ভর্তি হন। রবীন্দ্রনাথের কাছে বিশ্বভারতী ও শান্তিনিকেতনের কথা শুনে সেখানে গিয়ে শিল্পকলা শেখবার ইচ্ছা প্ৰকাশ করেন ও ১৯২১ খ্রী. সেখানে যান। ১৯২২ খ্রী. শান্তিনিকেতনে কলাভবনের ছাত্রীরূপে স্থায়িভাবে যোগ দেন। নন্দলাল বসু ও অসিতকুমার হালদারের ছাত্রী ছিলেন। কলাভবনের ছাত্রী হলেও সিলভ্যাঁ লেভির দর্শনের ক্লাসও করতেন। প্রতিমা ঠাকুরের তত্ত্বাবধানে তাঁর নৃত্য-শিক্ষা। পরে ১৯২৫ খ্রী. শান্তিনিকেতনে মণিপুরী শিক্ষকের কাছে নাচ শিখে মণিপুরী নৃত্য ও গুজরাটী গরবা নাচের সংমিশ্রণে এক নূতন নৃত্যের সৃষ্টি করেন। তাছাড়া বিভিন্ন স্থানে, বিশেষ করে দক্ষিণ ভারতে ভালভাবে নাচ শিখেছিলেন। নৃত্য-পরিকল্পনাতে তাঁর একটি বিশিষ্ট ক্ষমতা ছিল। ১৯২৭ – ২৮ খ্রী. শিল্প-শিক্ষা-সংক্রান্ত বিষয় পড়তে জার্মানীতে যান। সেখানে থাকার সময় পোলান্ডে যে যুব সম্মেলন হয়, তাতে তিনি ভারতের শিল্প-সম্পর্কে তত্ত্বসমৃদ্ধ একটি ভাষণ দেন। ১৯৩২–৩৩ খ্রী. কলিকাতার এম্পায়ার থিয়েটারে রবীন্দ্রনাথ কর্তৃক ‘ঝুলন’ ও ‘হৃদয় আমার নাচেরে আজিকে’—এই দুটি কবিতার আবৃত্তির সঙ্গে অপূর্ব নৃত্যকলা প্রদর্শন করেছিলেন। নৃত্যের পরিকল্পনা ও সাজসজ্জা সম্পূর্ণ অভিনব ছিল। দিল্লীতে একটি শিশু-প্রতিষ্ঠানে কাজ করার সময় ১৯৩৭ খ্রী. সৌম্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে তাঁর বিবাহ হয়। স্বামীর সঙ্গে রাজনৈতিক কর্মে যুক্ত হয়ে ১৯৪২-এর আন্দোলনে কারাবরণ করেন। কলিকাতায় তাদের এলগিন রোডের বাড়িতে বহুদিন ধরে একটি নাচের স্কুল চালিয়েছিলেন। ইন্দিরা দেবী চৌধুরানী প্রতিষ্ঠিত বিখ্যাত রবীন্দ্রসঙ্গীত শিক্ষার আসর ‘বৈতানিক’-এর সভানেত্রী এবং অবনীন্দ্রনাথ স্থাপিত ‘ওরিয়েন্টাল আর্ট সোসাইটি’র সম্পাদিকা ছিলেন। শিল্পকলাই তাঁর জীবনের প্রধান চর্চার বিষয় ছিল। অনেক বিখ্যাত শিল্পীর ছবি ও মূর্তি এবং নানারকমের শিল্প-সম্ভার সংগ্রহ করেছিলেন। তাঁর আঁকা ‘Garland’ ছবিটি The Golden Book of Tagore-এ মূদ্রিত হয়েছে। নৃত্য ও চিত্ৰকলা-চৰ্চার সঙ্গে তিনি সঙ্গীতচর্চাও করেছেন। তাঁর কয়েকটি গানের রেকর্ডও বার হয়েছিল। ‘রবীন্দ্ৰ প্ৰসঙ্গ’ নামে একটি পত্রিকা প্ৰকাশ করতেন।
পূর্ববর্তী:
« শ্ৰীবাস দাস
« শ্ৰীবাস দাস
পরবর্তী:
শ্ৰীমন্ত মাইতি »
শ্ৰীমন্ত মাইতি »
Leave a Reply