সীতানাথ দত্ত, তত্ত্বভূষন (১৮৫৬ — ১৯-৮-১৯৪৫) সাংঘর–শ্ৰীহট্ট। মুন্সী জগন্নাথ। ১৮৭২ খ্ৰী. কলিকাতায় আসেন এবং কেশবচন্দ্ৰ সেন প্রতিষ্ঠিত ‘ব্রাহ্মনিকেতন’-এ থেকে ১৮৭৪ খ্রী. কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশিকা পরীক্ষা পাশ করেন এবং জেনারেল অ্যাসেমব্লিজ (বর্তমান স্কটিশ চাৰ্চ) কলেজে ভর্তি হন। নানা কারণে কলেজের শিক্ষা সম্পূর্ণ না হলেও ব্ৰাহ্মসমাজের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত হয়ে ক্রমে হিন্দু শাস্ত্ৰাদি এবং ভারতীয় ও পাশ্চাত্য দর্শন পাঠ করে অল্পকালের মধ্যে পণ্ডিত হিসাবে প্ৰথমে কলিকাতায় ও পরে সারা ভারতে পরিচিতি লাভ করেন। ১৮৭৮ খ্ৰী. ভারতবর্ষীয় ব্ৰাহ্মসমাজে ভাঙন দেখা দিলে তিনি নব প্রতিষ্ঠিত সাধারণ ব্ৰাহ্মসমাজে যোগ দেন। ৬ এপ্রিল ১৮৭৯ খ্ৰী. কলিকাতায় সিটি স্কুল প্রতিষ্ঠিত হলে সেখানে শিক্ষকতা গ্ৰহণ করেন। সমাজসংস্কার আন্দোলনের একজন সক্রিয় সমর্থক ছিলেন। ১৮৮৫ খ্রী. বিধবা নগেন্দ্ৰবালাকে বিবাহ করেন। পত্নীর মৃত্যুর পর তিনি পুনরায় বিবাহ করেন ব্রাহ্ম বালিকা শিক্ষালয়ের শিক্ষয়িত্রী কাদম্বিনী মুখোপাধ্যায়কে। সিটি স্কুলের পর কেশব একাডেমীতে যোগদান করেন। ১৮৮২ খ্রী. ব্ৰাহ্মসমাজে প্ৰথম আচার্যের কাজ শুরু করেন। ক্ৰমে প্রখ্যাত আচার্য ও ভক্তরূপে তাঁর সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। তবে মূলতঃ একজন দর্শনশাস্ত্রের পণ্ডিত হিসাবেই তাঁর খ্যাতি। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্ৰন্থ: ‘ব্রহ্মজিজ্ঞাসা’, ‘শাস্ত্রীয় ব্ৰহ্মবাদ ও ব্ৰহ্মসাধন’, ‘ব্ৰহ্মপ্রেমসুধাসিন্ধু’, ‘Philosophy of Brahmoism’, ‘Hindu Theism’, ‘Shastric Theism’, ‘Social Reform in Bengal’, ‘Vedanta and its Relation to Modern Though’t প্রভৃতি। বাংলাদেশে উপনিষদ-চর্চার একজন পথিকৃৎ। তাঁর বৃহৎ গ্রন্থ ‘Brahmo sutras’ ১৯৩২ খ্রী. প্রকাশিত হয়। ১৮৯৬ খ্রী. ব্ৰাহ্মসমাজ থেকে ‘ব্ৰহ্মতত্ত্ব’ নামে ত্রৈমাসিক পত্রিকা প্রকাশ করেন। পণ্ডিত সত্যব্ৰত সামশ্রমী কর্তৃক ‘তত্ত্বভুষণ’ উপাধিতে ভূষিত হন। ইংরেজি ও বাংলা উভয় ভাষাতেই তাঁর পারদর্শিতা ছিল। সুগায়ক ছিলেন। ‘ব্রহ্মসঙ্গীত’ পুস্তকে তাঁর দশটি সঙ্গীত আছে। ধর্ম ও দৰ্শন-বিষয়ক তাঁর অনেক প্ৰবন্ধ বিভিন্ন পত্রিকায় প্ৰকাশিত হয়েছে। আজীবন দারিদ্র্যের সঙ্গে সংগ্ৰাম করে প্রতিষ্ঠালাভ করেছেন।
পূর্ববর্তী:
« সীতা দেবী
« সীতা দেবী
পরবর্তী:
সীতানাথ সিদ্ধান্তবাগীশ »
সীতানাথ সিদ্ধান্তবাগীশ »
Leave a Reply