সহায়রাম বসু (১৫-২-১৮৮৮ — ৬-১২-১৯৭০) নাগবোল—হুগলী। বেণীমাধবী। হুগলী কলেজিয়েট স্কুল থেকে প্ৰবেশিকা, ১৯০৭ খ্রী. কলিকাতা প্রেসিডেন্সী কলেজ থেকে বি.এ. ১৯০৮ খ্রী. এম. এ ও ১৯১০ খ্রী. বি.এল. পাশ করে ছয় বছর ওকালতি করেন। শিক্ষাবিদ। অধ্যক্ষ গিরিশ বসুর ইচ্ছায় বঙ্গবাসী কলেজে উদ্ভিদবিদ্যার অধ্যাপক হন। ১৯১৬ খ্ৰী. কারমাইকেল কলেজে উদ্ভিদবিদ্যার অধ্যাপক নিযুক্ত হয়ে বিখ্যাত অধ্যাপক একেন্দ্ৰনাথ ঘোষের প্রেরণায় বাঙলা ও নিকটবর্তী অঞ্চলের ‘পলিপোরস’-এর গবেষণায় মনোনিবেশ করেন। প্রাথমিক ফলাফল (Observations on the Taxonomy of Polypores) প্রকাশিত হলে ১৯১৮ খ্রী. বিশেষজ্ঞের নির্দেশে সিংহল যান। এখানে টম পেচের অধীনে কাজ করে Bracket fungi (বিশেষ শ্রেণীর ছত্রাক) নিজের গবেষণার বিষয় নির্বাচন করেন। দেশে ফিরে ব্যাপক গবেষণার ফলে ডক্টরেট উপাধি পান। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভ্ৰমণ বৃত্তিতে বার্লিন, সরবোন ইত্যাদি ইউরোপীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করেন। পরে লন্ডনের ‘কিউ গার্ডেনে’ এবং প্যারিসের ‘ন্যাচারাল হিস্টরী মিউজিয়মে’ গবেষণা করেছেন। দেশে ফিরে আচার্য জগদীশচন্দ্রের সহকারী হিসাবে ১৯২৫ – ২৬ খ্রী. কাজ করেন। ফটোপ্রিন্ট সমেত Polyporacae of Bengal in Parts I-XI’ (143 Supp) প্রকাশ করেন। গবেষণার সময় ১৯১৮ – ৪৭ খ্রীঃ। ‘নেচার’ পত্রিকায় প্রকাশিত Golgibodies in fungi-র ওপর তাঁর নিবন্ধ বিতর্ক সৃষ্টি করে এবং শেষ পর্যন্ত তাঁর মতই নির্ভুল বলে প্রমাণিত হয়। ‘সায়েন্স’ ও ‘নেচার’ পত্রিকায় গমের ছত্রাক রোগ (Wheat Rust) বিষয়ে নিবন্ধ লেখেন। চিল্কা হ্রদের উইঢিবির ছত্রাক নিয়েও গবেষণা করেছেন। উদ্ভিদবিদ্যার অন্যান্য বিষয়েও কিছু গবেষণা করেন। খাদ্যের উপযোগী ভারতের বিভিন্ন প্রকার ব্যাঙের ছাতা নিয়ে গবেষণা করে ভারত সরকারের কৃষি-বিভাগকে তা চাষ করার জন্য অবহিত করেন। বাঙলা ও ব্রহ্মের আলোক-বিকিরণকারী fungi-র ওপর কিছু কিছু গবেষণা করেন। চিকিৎসক ছাত্রদের সহায়তায় Polyporin নামে অ্যান্টিবায়োটিকের অস্তিত্ব আবিষ্কার করেন। পরবর্তী গবেষণায় Campestrin নামে আরেকটি অ্যান্টিবায়োটিকের অস্তিত্ব আবিষ্কৃত হয়। ৪৪ বছরের গবেষক জীবনে ১৯৬৩ খ্রী. পর্যন্ত ১১৭ টি নিবন্ধ প্ৰকাশ করেন। নিবন্ধগুলি ইউরোপ, আমেরিকা ও এশিয়ার বিখ্যাত বৈজ্ঞানিক পত্রিকায় মুদ্রিত হয়। তিনবার কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রিফিথ পুরস্কার, বিহার সরকারের উডহাউস স্মৃতি পুরস্কার, এশিয়াটিক সোসাইটির ২টি পদক ও ৩ বার লন্ডন রয়্যাল সোসাইটির গবেষক বৃত্তি পান। তিনি জাতীয় বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট, ভারতীয় Phytopathological সোসাইটি এবং বোটানিক্যাল সোসাইটি অফ বেঙ্গলের ফেলো, এডিনবরার রয়্যাল সোসাইটি ও ইটালীর আন্তর্জাতিক বোটানিক্যাল কংগ্রেসের (স্টকহোম ১৯৫০) মাইকলজী শাখার সহ-সভাপতি ছিলেন। ১৯৫৭–৫৯ খ্রী. ফরাসী সরকারী শিক্ষা-দপ্তরের আমন্ত্রণে ঐ দেশের Director of Research in C.N.S.R. হন। দেশে ফিরে স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিন-এ মাইক’লজীর এবং আর. জি. কর মেডিক্যাল কলেজে বোটানীর এমিরিটাস অধ্যাপকরূপে কাজ করেন।
পূর্ববর্তী:
« সহদেব মাহাতো
« সহদেব মাহাতো
পরবর্তী:
সহায়সম্পৎ চৌধুরী »
সহায়সম্পৎ চৌধুরী »
Leave a Reply