সরলাদেবী চৌধুরানী (৯-৯-১৮৭২ — ১৮-৮-১৯৪৫) জোড়াসাঁকো-কলিকাতা। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা জানকীনাথ ঘোষাল। মাতা স্বর্ণকুমারী দেবী ছিলেন রবীন্দ্রনাথের জ্যেষ্ঠ ভগিনী এবং প্রখ্যাত লেখিকা। পিতারবিলাত প্ৰবাসকালে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে তাঁর শৈশব কাটে। বেথুন স্কুলে ভর্তি হয়ে কবি কামিনী রায় (সেন), লেডী অবলা বসু (দাস) প্ৰমুখের সাথী হন। ১৮৮৬ খ্রী. এন্ট্রান্স ও ১৮৯০ খ্রী. ইংরেজীতে অনার্সসহ বি.এ. পরীক্ষায় মেয়েদের মধ্যে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে ‘পদ্মাবতী স্বর্ণপদক’ লাভ করেন। ফারসী ও সংস্কৃত ছাড়া তিনি ফরাসী ভাষাও জানতেন। তৎকালীন প্রচলিত প্রথানুযায়ী অল্প বয়সে বিবাহ হয় নি। সঙ্গীতজ্ঞা হিসাবে প্রথম জীবনে খ্যাতি অর্জন করেন। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সম্মেলনে বঙ্কিমচন্দ্রের বিখ্যাত ‘বন্দেমাতরম’ সঙ্গীতটি সপ্তকোটির পরিবর্তে ‘ত্রিংশকোটি’ শব্দ যোগ করে গেয়েছিলেন। প্ৰথম দিকে বালিকাদের জাতীয় সঙ্গীত শিক্ষা দিতেন। স্বভাবসুলভ দুঃসাহসিকতার সঙ্গে সুদূর মহীশূরে গিয়ে মহারাণী স্কুলে শিক্ষকতা করেন। ১৯০৩ খ্রী. কলিকাতায় ‘প্ৰতাপাদিত্য উৎসব’ এবং শক্তির আরাধনায় ‘বীরাষ্টমী ব্ৰত’-উৎসব পালন করেন। এইসব কাজের মাধ্যমে সর্বসাধারণের মধ্যে জাতীয়তাবোধ জাগ্রত করতেন। যতীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়কে (নিরালম্ব স্বামী) বাঙলার প্রথম গুপ্ত বিপ্লবী দল গঠনে সাহায্য করেন। স্বদেশী দ্রব্য সাধারণের মধ্যে চালু করার জন্য তিনি ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ স্থাপন করেছিলেন (১৯০৪)। স্বদেশ-প্ৰেমোদীপক বহু সঙ্গীতেরও তিনি রচয়িতা। তিনিই ভারতীয় নারীদের মধ্যে প্ৰথম মহাত্মা গান্ধীর অসহযোগ প্ৰস্তাবকে অভিনন্দন জ্ঞাপন করেছিলেন। ১৯০৫ খ্রী. উর্দু পত্রিকা ‘হিন্দুস্থান’ (লাহোর)-এর সম্পাদক ও ব্যবহারজীবী রামভুজ দত্তচৌধুরীর সঙ্গে তাঁর বিবাহ হয়। ব্রিটিশ রাজরোষে স্বামী গ্রেপ্তার হলে সরলা দেবী পত্রিকার সম্পাদনা-ভার গ্ৰহণ করেন এবং এর একটি ইংরেজী সংস্করণও প্রকাশ করেন। এছাড়া পাঞ্জাবের গ্রামে গ্রামে পর্দানশীন মহিলাদের মধ্যে শিক্ষাপ্রচারের কাজেও উদ্যোগী হন। ১৯১০ খ্রী. এলাহাবাদ কংগ্রেসে এবিষয়ে তিনি নিজ পরিকল্পনা পেশ করেন। তাঁর চেষ্টার ফলে ‘ভারত-স্ত্রী-মহামণ্ডল’ প্রতিষ্ঠিত হয় ও সারা ভারতে তার শাখা বিস্তারলাভ করে। ৬-৮-১৯২৩ খ্রী. স্বামীর মৃত্যু হয়। ১৯৩০ খ্রী. তিনি কলিকাতায় ‘ভারত-স্ত্রী-শিক্ষাসদন’ স্থাপন করেন। ১৯৩৫ খ্রী. শিক্ষাজগৎ থেকে অবসর নেন এবং ধর্মীয় জীবনে ফিরে যান। প্রথম জীবনে থিওসফিক্যাল সোসাইটি ও পরে রামকৃষ্ণ ও বিবেকানন্দের শিক্ষায় অনুপ্রাণিত হলেও শেষ-জীবনে তিনি বিজয়কৃষ্ণ দেবশর্মাকে গুরুপদে বরণ করেন। রাজনৈতিক জীবনে লালা লাজপৎ রায়, গোখলে, তিলক ও গান্ধীজীর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। কিছুদিন ‘ভারতী’ পত্রিকা সম্পাদনা করেন। তাঁর রচিত ১০০টি জাতীয় সঙ্গীতের সঙ্কলন ‘শতগান’ নামে প্রকাশিত হয়। বীরভূম ও লক্ষ্ণৌ শহরে বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলনে পৌরোহিত্য করেন। মহিলাদের মধ্যে তলোয়ার ও লাঠিখেলার প্রচলন করেন। জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের নেত্রীরূপে বাঙালীদের মধ্যে তিনি এক অবিস্মরণীয় চরিত্র। তাঁর অন্যান্য রচিত গ্ৰন্থ : ‘নববর্ষের স্বপ্ন’, ‘জীবনের ঝরাপাতা’, ‘শিবরাত্রি পূজা’, প্রভৃতি।
পূর্ববর্তী:
« সরলা রায়
« সরলা রায়
পরবর্তী:
সরলাবালা দাসী »
সরলাবালা দাসী »
Leave a Reply