সত্যেন্দ্ৰনাথ বসু, বিজ্ঞানাচাৰ্য (১-১-১৮৯৪ -– ৪-২-১৯৭৪) কলিকাতা। সুরেন্দ্রনাথ। আদিনিবাস সুবর্ণপুর–নদীয়া। বিশ্ববরেণ্য বিজ্ঞানসাধক, কোয়ান্টাম স্ট্যাটিসটিক্সের উদ্ভাবক, পদার্থতত্ত্ববিদ ও মাতৃভাষায় বিজ্ঞানচর্চার অন্যতম প্ৰবক্তা। ১৯০৯ খ্রী. এন্ট্রান্স পরীক্ষায় পঞ্চম ও ১৯১১ খ্রী. আইএস-সি-তে প্ৰথম হয়ে উত্তীর্ণ হন। সে বছর দ্বিতীয় হন মানিকলাল দে এবং তৃতীয় হন মেঘনাদ সাহা। ১৯১৩ খ্রী. গণিতে অনার্স নিয়ে বি.এ.স-সি, এবং ১৯১৫ খ্রী. এম. এস-সি পাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের নবগঠিত বিজ্ঞান কলেজে মিশ্ৰগণিতে ও পদার্থবিদ্যায় পঠন-পাঠন ও গবেষণায় আত্মনিয়োগ করেন। এই সময়ে তিনি ড. মেঘনাদ সাহার সাহচর্য লাভ করেন। ১৯২১ খ্রী. নবপ্রতিষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যার রীডার হিসাবে যোগ দেন এবং ২৪ বছর একনিষ্ঠভাবে গবেষণায় নিযুক্ত থাকেন। তত্ত্বীয় পদার্থবিদ্যার মূল্যবান গবেষণা ও এক্সরে কৃস্টালোগ্রাফি সম্পর্কে যে গবেষণা করে বিজ্ঞানজগতে তিনি সমাদরণীয় হন, তাঁর সূচনা ও উন্মেষ হয় ঢাকাতেই। ১৯২৪ খ্রী. তাঁর ‘প্লাঙ্কসূত্র ও কোয়ান্টাম প্রকল্প’ নামে গবেষণামূলক একটি প্রবন্ধ পাঠ করে বিশ্ববিখ্যাত বৈজ্ঞানিক আইনস্টাইন চমৎকৃত হন এবং আইনস্টাইন নিজে জার্মান ভাষায় সেটি অনুবাদ করে বিখ্যাত বিজ্ঞান পত্রিকায় প্ৰকাশ করেন। প্ৰবন্ধটি প্রকাশিত হওয়ার পরেই বিজ্ঞানজগতে আলোড়ন পড়ে যায় এবং এই বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিটি ‘বোস-আইনস্টাইন সংজ্ঞা’ নামে সারা বিশ্বে সমাদৃত হয়। ১৯২৯ খ্রী. তিনি ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসে পদার্থবিদ্যা শাখার সভাপতি ও ১৯৪৪ খ্রী. মূল সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৪৫ খ্রী. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক পদে নিযুক্ত হন। ১৯৫৬ খ্রী. পর্যন্ত খয়রা অধ্যাপক পদে এবং কয়েক বছর। স্নাতকোত্তর বিজ্ঞান বিভাগের ডীন পদেও অধিষ্ঠিত ছিলেন। অবসর-গ্রহণের পর ১৯৫৮ খ্রী. বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ‘এমিরিটাস’ প্রফেসরের পদে নির্বাচিত করেন। দুই বছর তিনি বিশ্বভারতীর উপাচাৰ্য ছিলেন। ১৯৫৯ খ্রী. ভারত সরকার কর্তৃক জাতীয় অধ্যাপক পদে নিযুক্ত হন। বিশ্বভারতী তাকে ‘দেশিকোত্তম’ এবং ভারত সরকার ‘পদ্মবিভুষণ’ উপাধি দ্বারা সম্মানিত করেন। ১৯৫৮ খ্রী. তিনি লন্ডনের রয়্যাল সোসাইটির ফেলো নির্বাচিত হন। এছাড়া ১৯৫২ খ্রী. থেকে কিছুকাল রাজ্যসভার মনোনীত সদস্য ছিলেন। তিনি মূলত বিজ্ঞানী হিসাবে পরিচিত হলেও তাঁর ব্যক্তি-মানসে সাহিত্যের ধারা, সঙ্গীতের ধারা এবং বিশেষভাবে মানবিকতাঁর ধারা বর্তমান ছিল। তিনি উপলব্ধি করেছিলেন যে আধুনিক যুগে দেশের উন্নতির জন্য সাধারণ মানুষের মধ্যে বিজ্ঞানশিক্ষার ব্যাপক প্রসার ঘটানো দরকার এবং এই কাজটি মাতৃভাষার মাধ্যমেই সুষ্ঠুভাবে করা সম্ভব। এই উদ্দেশ্যে তিনি কলিকাতায় ‘বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদ’ প্রতিষ্ঠা করেন এবং তাঁর মুখপত্ররূপে মাসিক ‘জ্ঞান ও বিজ্ঞান’ পত্রিকা প্ৰকাশ করেন। জীবনের শেষদিন পর্যন্ত তিনি এই প্ৰতিষ্ঠানের মূল ধারক ও বাহক ছিলেন। মনে প্ৰাণে তিনি ছিলেন খাঁটি বাঙালী ও দেশপ্রেমিক। ‘সবুজপত্র’ ও ‘পরিচয়’ সাহিত্য-গোষ্ঠীর অন্যতম ছিলেন। বেহালা ও এসরাজ ভাল বাজাতে পারতেন। দেশের মুক্তিকামী বিপ্লবীদের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। তিনি নানাভাবে তাঁদের সাহায্যও করতেন।
পূর্ববর্তী:
« সত্যেন্দ্ৰনাথ বসু
« সত্যেন্দ্ৰনাথ বসু
পরবর্তী:
সত্যেন্দ্ৰনাথ মজুমদার »
সত্যেন্দ্ৰনাথ মজুমদার »
Leave a Reply