সত্যেন্দ্ৰনাথ বসু (৩০-৭-১৮৮২ — ২১-১১-১৯০৮) মেদিনীপুর। অভয়চরণ। পৈতৃক নিবাস-বেড়াল–চব্বিশ পরগনা। বিখ্যাত রাজনারায়ণ বসুর ভ্রাতুষ্পুত্র। ১৮৯৭ খ্রী. মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুল থেকে এন্ট্রান্স ও মেদিনীপুর কলেজ থেকে ১৮৯৯ খ্রী. এফ.এ. পাশ করেন। কলিকাতা সিটি কলেজে বি.এ. পড়বার জন্য ভর্তি হয়েও দুর্বল স্বাস্থ্যের জন্য পরীক্ষা দিতে পারেন নি। অগ্ৰজ জ্ঞানেন্দ্রনাথ ও জ্যেষ্ঠতাত রাজনারায়ণের প্রভাবে মেদিনীপুরে একটি গুপ্ত বিপ্লবী সংগঠন গড়ে উঠেছিল (১৯০২); নেতা হেমচন্দ্ৰ দাস কানুনগো এবং সত্যেন্দ্রনাথ তাঁর সহকারী। ১৯০৫ খ্ৰী. বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের সময় মেদিনীপুরে তিনি ‘ছাত্ৰভাণ্ডার’ গড়ে তোলেন। এখানে তাত, ব্যায়ামচৰ্চা ইত্যাদি কর্মের অন্তরালে বিপ্লবীদের ঘাঁটি তৈরী হয়। বীর ক্ষুদিরাম তাঁর সাহায্যে বিপ্লবী দলভুক্ত হয়ে এখানে আশ্রয় পান। ১৯০৬ খ্ৰী. মেদিনীপুরে অনুষ্ঠিত কৃষি-শিল্প-প্ৰদৰ্শনীর তিনি সহ-সম্পাদক ছিলেন। এখানে ক্ষুদিরাম তাঁরই নির্দেশে ‘সোনার বাংলা’ শীর্ষক বিপ্লবাত্মক ইস্তাহার বিলি করে গ্রেপ্তার হন। তিনি ক্ষুদিরামকে মিথ্যা অছিলায় মুক্ত করার জন্য সরকারী চাকরি থেকে বরখাস্ত হন। হেমচন্দ্ৰ। ১৯০৬ খ্রী. বোমা প্ৰস্তুত শিক্ষার জন্য প্যারিস গেলে তিনি তাঁর স্থলে জেলা সংগঠক হন। ১৯০৭ খ্রী. মেদিনীপুর রাজনৈতিক সম্মেলনে বঙ্গবিভাগ-বিরোধী আন্দোলনের নরমপন্থী নেতাদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখান। ফলে সম্মেলন ভেঙ্গে যায়। একইভাবে এই বছরে সুরাটের জাতীয় কংগ্রেসের অধিবেশনও পাণ্ড হয়। এখানে তিনি বাল গঙ্গাধর তিলকের পক্ষে ছিলেন। ১৯০৮ খ্রী. বাংলার প্রথম বিপ্লবাত্মক কর্মকাণ্ড কিংসফোর্ড হত্যা প্রচেষ্টার আগেই তিনি বন্দুক রাখার অপরাধে মেদিনীপুর জেলে বিচারাধীন বন্দী ছিলেন। পরে বিখ্যাত আলীপুর বোমা মামলার আসামী করে তাকে নিয়ে আসা হয়। বিচার চলাকালে দলের নরেন গোসাই রাজসাক্ষী হলে হেমচন্দ্ৰ ও তিনি জেলে বসেই এই বিশ্বাসঘাতককে নিশ্চিহ্ন করার সিদ্ধান্ত নেন। দুইটি রিভলভারও জেলের মধ্যে সংগ্ৰহ করেন। কানাইলাল দত্ত একথা জানতে পেরে এই কাজে অংশ নিতে চান। সত্যেন্দ্ৰনাথ অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে সেখানে থেকে তিনিও রাজসাক্ষী হতে চান এই মর্মে পরামর্শের জন্য নরেনকে চিঠি দিয়ে ডেকে পাঠান। ৩০-৮-১৯০৮ খ্রী. কানাইলাল অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। পরদিন সকালবেলা নরেন একটি অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান সার্জেন্টের প্রহরায় তাদের কাছে আসা মাত্ৰ সত্যেন্দ্ৰনাথ গুলি করেন। আহত নরেন পলায়নের সময় কানাইলালের গুলিতে নিহত হন। এই অপরাধে তাঁদের ফাঁসির আদেশ হয়। তাঁর মাতা দেখা করতে এলে কারারক্ষীদের সামনে অশ্রুপাত না করার প্রতিশ্রুতি দিলে তিনি মাতার সঙ্গে দেখা করেন। তাঁর মৃতদেহ আত্মীয়দের হাতে দেওয়া হয় নি। আচাৰ্য শিবনাথ শাস্ত্রী তাঁর মৃত্যুর আগে জেল-প্রাঙ্গণে গিয়ে প্রার্থনা করেন।
পূর্ববর্তী:
« সত্যেন্দ্ৰনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়
« সত্যেন্দ্ৰনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়
পরবর্তী:
সত্যেন্দ্ৰনাথ বসু, বিজ্ঞানাচাৰ্য »
সত্যেন্দ্ৰনাথ বসু, বিজ্ঞানাচাৰ্য »
Leave a Reply