সত্যেন সেন (২৮-৫-১৯০৭ — ৫-১-১৯৮২) সোনারং–ঢাকা। ধরণীমোহন। বিপ্লবী, গণসঙ্গীত রচয়িতা ও লেখক। ছাত্রজীবনে অগ্নিযুগের বিপ্লবীদের সংস্পর্শে এসে স্বাধীনতা সংগ্রামে ব্ৰতী হন। একটি রাজনৈতিক মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে ১৯৩১–৩৮ খ্রী. কারাগারে এবং অন্তরীণ অবস্থায় কাটান। বন্দীনিবাসে থাকার সময়ে এম.এ. পাশ করেন। ১৯৩৮ খ্রী. কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যপদ নিয়ে মুন্সীগঞ্জ ও নবাবগঞ্জে কৃষক সংগঠন গড়ে তোলেন। এই সময় ঢাকা জেলা প্ৰগতি লেখক ও শিল্পী সংঘের বিশিষ্ট উদ্যোক্তা এবং গণসঙ্গীত রচনা ও হাটেমাঠে কলকারখানায় নবজীবনের গান পরিবেশনে উদ্যোগী হন। দেশবিভাগের পর পূর্ববঙ্গে ব্যাপক ধরপাকড়ের সময় আত্মগোপন করেন। পরে ১৯৪৯–৫৩ খ্রী. কারারুদ্ধ থাকেন। ১৯৫৪ খ্রী. সাধারণ নির্বাচনের প্রাক্কালে পূর্ববঙ্গের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় খোলা-অফিসের সংযোজকের দায়িত্বে ছিলেন। গভর্নরের শাসন জারি হবার পর আবার গ্রেপ্তার হয়ে ১৯৫৫ খ্রী. মুক্তি পান। ১৯৫৬ – ৫৭ খ্ৰী. ’দৈনিক সংবাদ’ পত্রিকায় সহকারী সম্পাদক হিসাবে যোগ দেন। বাংলার কৃষক আন্দোলন সম্বন্ধে ফিচার লিখতে শুরু করেন। এই সময়েই লেখেন তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘ভোরের বিহঙ্গী’ এবং সিপাহী বিদ্রোহের শতবার্ষিকী উপলক্ষে ‘মহাবিদ্রোহের কাহিনী’। ১৯৫৮ খ্ৰী আইয়ুব খাঁ-র সামরিক শাসন জারী হবার সঙ্গে সঙ্গে কারারুদ্ধ হয়ে ১৯৬৩ খ্রী. পর্যন্ত আটক থাকেন। জেলে বসে লেখেন ‘রুদ্ধদ্বার মুক্তপ্রাণ’ ও আরও কয়েকটি উপন্যাস। ১৯৬৯ খ্রী. আন্দোলনে বই লেখার পাশাপাশি গণসঙ্গীত রচনার ধারাকে উজ্জীবিত রাখেন। তরুণ-তরুণীদের নিয়ে গণসঙ্গীতশিল্পীগোষ্ঠী ‘উদীচী’ স্থাপন করেন। ইতিমধ্যে কারাবাসে স্বাস্থ্যভঙ্গ, চোখের দৃষ্টি ক্ষীণ হওয়ায় চিকিৎসার জন্যে ১৯৭১ খ্রী. ‘উদীচী’র মুক্তিযোদ্ধা ছেলেরা তাঁকে নৌকায় বুড়ীগঙ্গা পার করে কলিকাতায় পৌঁছে দেয়। সেখান থেকে মস্কো পাঠান হয়। কিন্তু দৃষ্টিশক্তি আর ফিরে পান না। ১৯৭২ খ্ৰী. স্বাধীন বাংলা দেশে ফিরে ‘দৈনিক সংবাদ’ পত্রিকায় যোগ দেন এবং মস্কোতে যাঁদের সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল তাঁদের উপর ধারাবাহিক আলেখ্য রচনা করেন। ১৯৭৩ খ্রী. স্বাস্থ্যের আরও অবনতি ঘটায় শান্তিনিকেতনে তাঁর ভগিনীর কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এখানে প্ৰায় অন্ধ অবস্থায় অসংখ্য নিবন্ধ রচনা করেন। বিজ্ঞানী জেডি, বার্নালের ‘সায়েন্স ইন হিষ্ট্ৰী’ অবলম্বনে ডিক্টেশন দিয়ে ‘ইতিহাস ও বিজ্ঞান’ গ্রন্থটি রচনা করেন। রচিত। অন্যান্য গ্ৰন্থ: ‘গ্রাম বাংলার পথে পথে’, ‘কৈবর্ত বিদ্রোহী’, ‘অভিযাত্রী’, ‘মেহনতি মানুষ’, ‘উত্তরণ’, ‘নাগিনীরা চারিদিকে ফেলিছে নিঃশ্বাস’ (১৯৭৯) প্রভৃতি। ‘পদচিহ্ন’ তাঁর অপ্রকাশিত উপন্যাস।
পূর্ববর্তী:
« সত্যানন্দ রায়
« সত্যানন্দ রায়
পরবর্তী:
সত্যেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায় »
সত্যেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায় »
Leave a Reply