সত্যব্রত সামশ্রমী (২৮-৫-১৮৪৬ — ১-৬-১৯১১) কালনা-ধাত্রীগ্রাম-বর্ধমান। পিতা রামদাস চট্টোপাধ্যায়ের কর্মস্থান পাটনায় জন্ম। প্ৰসিদ্ধ বৈদিক পণ্ডিত ও বেদ-প্রচারক। তিনি আট বছর বয়সে প্রাচীন কালের আদর্শে গুরু গৌড়স্বামীর অধীনে কাশীর সরস্বতী মঠে থেকে বেদ অধ্যয়ন শুরু করেন। ১৮৬৬ খ্ৰী. পাঠ শেষ হলে কাশ্মীরসহ সমগ্ৰ উত্তর-ভারত ভ্ৰমণকালে তিনি বহু পণ্ডিতমণ্ডলীর সঙ্গে শাস্ত্রালোচনা করেন। এই সময়ে বুন্দীরাজ তাঁর বেদ-পারঙ্গমতায় চমৎকৃত হয়ে তাকে ‘সামশ্রমী’ উপাধি দেন। তখন থেকে এই নামেই তিনি পরিচিত হন ও প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। কাশীতে পিতৃগৃহে ফিরে এসে তিনি বিনা পারিশ্রমিকে ছাত্র পড়াতেন। ১৮৬৮ খ্রী. নবদ্বীপের প্রসিদ্ধ স্মার্ত পণ্ডিত ব্ৰজনাথ বিদ্যারিত্বের পৌত্রীকে বিবাহ করেন। বৈদিক সাহিত্যের প্রচারের উদ্দেশ্যে তিনি ৮ বছর কাল (১৮৬৭–১৮৭৪) কাশী থেকে ‘প্রত্নকম্রনন্দিনী’ নামে সংস্কৃত ভাষায় একটি সাময়িক পত্রিকা প্ৰকাশ করেন। রাজেন্দ্রলাল মিত্রের অনুরোধে তিনি বিব্লিওথেকা ইণ্ডিকা গ্ৰন্থমালার জন্য সামবেদ-সংহিতা সম্পাদনা করেছিলেন। ভারতবর্ষে সামবেদ প্রথম প্রকাশের কৃতিত্ব তাঁরই প্ৰাপ্য। এছাড়া ঐ গ্রন্থমালায় সায়ণভাষ্যসহ ঐতরেয় ব্ৰাহ্মণ (৪ খণ্ড), সায়ণভাষ্যসহ শতপথ ব্ৰাহ্মণ (২ খণ্ড) ও যাস্কের নিরুক্ত (৪ খণ্ড) সম্পাদনা করেন। ১৮৭৫ খ্ৰীষ্টাব্দের পর তিনি সপরিবারে কলিকাতায় এসে বাস করতে থাকেন। এখানে বেদপ্রচারের উদ্দেশ্যে একটি মুদ্রাযন্ত্র কেনেন। বিক্লিওথেকা ইণ্ডিকা গ্রন্থমালায় সম্পাদিত গ্রন্থগুলি ছাড়া তাঁর সম্পাদিত ও অনূদিত সমস্ত গ্ৰন্থই নিজের তত্ত্বাবধানে এই মুদ্রাযন্ত্রে মুদ্রিত হয়ে প্রচারিত হয়। তিনি নিজ গৃহে অনেক ছাত্রকে অন্নদান করে বেদশিক্ষা দিতেন। ১৮৮৯–১৯০৫ খ্রী. পর্যন্ত তিনি ‘প্রত্নকম্রনন্দিনী’র অনুরূপ ‘ঊষা’ নামে একটি সাময়িক পত্রিকা প্ৰকাশ করেছিলেন। একটি প্রবন্ধে তিনি প্ৰমাণ করেন–বৈদিক মতে বাল্যবিবাহ গৰ্হিত। অপর এক প্ৰবন্ধে তিনি স্ত্রীজাতির বেদপাঠের অধিকার সমর্থন করেন। তিনি বাংলা অক্ষরে সভাষ্য সামবেদ, যজুর্বেদ, ব্ৰাহ্মণ ও অঙ্গগ্ৰস্থাদি সম্পাদনা করে প্রকাশ করেন। বৈদিক গ্ৰন্থ ছাড়া তিনি ‘কারণ্ডব্যূহ’ নামে সংস্কৃত ভাষায় রচিত একটি বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থ বঙ্গানুবাদসহ এবং সংস্কৃত সাহিত্য ও দর্শন-সংক্রান্ত বহু গ্ৰন্থ-অধিকাংশই বাংলা অক্ষরে ও অনেক স্থলে বঙ্গানুবাদসহ প্ৰকাশ করেন। তিনি এশিয়াটিক সোসাইটির অ্যাসোসিয়েট মেম্বার ও অনারারি ফেলো এবং কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ছিলেন।
পূর্ববর্তী:
« সত্যপ্রিয় রায়
« সত্যপ্রিয় রায়
পরবর্তী:
সত্যরঞ্জন বকসি »
সত্যরঞ্জন বকসি »
Leave a Reply