সতীশচন্দ্ৰ দাশগুপ্ত (১৪-৬-১৮৮০ — ২০-১২-১৯৭৯) কুঁড়িগ্রাম-রংপুর। ডাঃ পূৰ্ণচন্দ্র। প্রখ্যাত গান্ধীবাদী নেতা। আমৃত্যু রাজনীতি থেকে দূরে থেকে সংগঠনমূলক কাজ করে গেছেন। শিক্ষা কুঁড়িগ্রাম স্কুলে, কলিকাতার রিপন কলেজ ও প্রেসিডেন্সী কলেজে। রসায়ন শাস্ত্রের ছাত্র সতীশচন্দ্ৰ আচার্য প্ৰফুল্লচন্দ্র রায়ের চিন্তা ও জীবনচর্চার প্রভাবে প্রভাবান্বিত ছিলেন। এম.এ. পরীক্ষা দিয়েই আচাৰ্য প্ৰফুল্লচন্দ্র রায়ের সদ্য প্রতিষ্ঠিত ‘বেঙ্গল কেমিক্যাল ওয়ার্কস’-এর কাজে ম্যানেজার নিযুক্ত হন। সুপারিনটেন্ডেন্ট ছিলেন আচার্যের অপর ছাত্র রাজশেখর, বসু (পরশুরাম)। আচার্যের প্রেরণায় ও এই দুই কর্মীর অনলস চেষ্টায় বঙ্গভঙ্গ নিরোধ ও স্বদেশী আন্দোলনের আবহাওয়ায় গড়ে ওঠা বেঙ্গল কেমিক্যাল অল্পদিনেই ভারতবর্ষের অগ্রগণ্য রসায়নশিল্প প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছিল। এখানে কাজ করার সময় তাঁর ছোট-বড় নানা আবিষ্কার ও উদ্ভাবনের মধ্যে অগ্নি-নির্বাপক যন্ত্রটি বিশেষ উল্লেখযোগ্য। ‘ফায়ার কিং’ নামে এটি এখনও বাজারে সমাদৃত। প্রথম ভারতে-তৈরী এই যন্ত্রটি বিক্রি করে বেঙ্গল কেমিক্যাল প্রভূত অর্থলাভ করে। কোকনদ কংগ্রেসে শিল্প প্রদর্শনীতে যোগ দিতে গিয়ে গান্ধীজীর সঙ্গে পরিচিত হন ও তাঁর নির্দেশে কলিকাতায় ফিরে কারখানার মধ্যে কর্মীদের দিয়ে চরকায় সূতা কাটানো, তাত চালানো ও কাপড়-বোনার কাজ শুরু করেন। কিছুদিন পরে বেঙ্গল কেমিক্যাল ছেড়ে পুরোপুরি গান্ধীজীর কাজে আত্মনিয়োগ করেন। খাদি ও কুটির শিল্পের উন্নতি এবং প্রচারকল্পে ‘ফায়ার কিং’ থেকে প্ৰাপ্ত দুই লক্ষ টাকা দিয়ে ১৯২৬ খ্রী. ‘খাদি প্রতিষ্ঠান’ গড়ে তোলেন। ঘরে ঘরে চরকা পৌঁছে দেবার জন্য অল্পমূল্যের বাঁশের চরকা তৈরি করেন। বাঙলার বিভিন্ন স্থানে কর্মকেন্দ্ৰ স্থাপিত হয়। প্ৰধান কর্মকেন্দ্ৰ কলিকাতার নিকটবর্তী সোদপুর আশ্রমটি ‘গান্ধীজীর বাঙলাদেশের বাড়ি’ বলে আখ্যা পেয়েছিল। কুটির শিল্পে বিভিন্ন দিক নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও গবেষণা করেছেন। এই প্রতিষ্ঠানের কটেজ ট্যানিং ইন্ডাস্ট্রি এক সময়ে বড় বড় ট্যানারির সঙ্গে প্ৰতিযোগিতা করেছে। নিরক্ষর ও অল্পশিক্ষিত মানুষকে লেখাপড়া শিখিয়ে হাতেকলমে কাজের মাধ্যমে দক্ষকামী-রূপে গড়ে তোলার অসাধারণ ক্ষমতা ছিল। গান্ধীজীর অনুগামী হয়ে কারাবরণ করেছেন। আলীপুর জেলে থাকার সময় স্বেচ্ছায় সেখানে গো-শালা রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর রচিত ‘দি কাউ ইন ইন্ডিয়া’ (২ খণ্ড) পরবর্তীকালে ভেটেরিনারী কলেজের পাঠ্যপুস্তকরূপে নির্বাচিত হয়। ব্যাধি জর্জরিত দরিদ্র ভারতবাসীর জন্য লেখেন ‘হোম অ্যান্ড ভিলেজ ডক্টর’ গ্রন্থটি। তাঁর অন্যান্য গ্ৰন্থ: ‘খাদি ম্যানুয়েল’, ‘কটেজ ম্যাচ ফ্যাক্টরি’, ‘ফাউন্টেন পেন ইঙ্ক’, ‘বোন মিল ফার্টিলাইজার’, ‘গোবর গ্যাস প্ল্যান্ট’, মূল গুজরাতি ভাষা থেকে অনূদিত ‘গান্ধীজীর আত্মকথা’, ‘রবীন্দ্রনাথ ও গান্ধী’, ‘গান্ধীভাষ্য গীতা’, ‘জীবনব্রত ও গান্ধীবাদ’, ‘বিলাতে গান্ধীজী’, ‘ভারতের সাম্যবাদ’, ‘কুটির চর্মশিল্প’, ‘রামচরিত মানস’, ‘হিন্দু স্বরাজ্য’ (অনুবাদ) প্রভৃতি। ৮৬ বছর বয়সে প্রস্তরখণ্ডময় উষর ভূমিকে সুফলা করার প্রচেষ্টায় বাঁকুড়ার গোগরা গ্রামে তাঁর কর্মক্ষেত্র স্থাপন করে কৃষি-গবেষণার কাজ শুরু করেন ও সফল হন। আজীবন গঠনমূলক সেবাকার্য ও পল্লী উন্নয়নে বৈজ্ঞানিক প্রয়োগ-পদ্ধতি আবিষ্কারের জন্য ১৯৭৮ খ্রী. তাকে ‘বাজাজ পুরষ্কার’ দিয়ে সম্মানিত করা হয়।
পূর্ববর্তী:
« সতীশচন্দ্ৰ চৌধুরী
« সতীশচন্দ্ৰ চৌধুরী
পরবর্তী:
সতীশচন্দ্ৰ দে »
সতীশচন্দ্ৰ দে »
Leave a Reply