সতীশচন্দ্র ঘোষ ১ (১৮৮০ — ২৫-১০-১৯২৯) চট্টগ্রাম। তাঁর রচিত ‘চাকমাজাতি’ গ্রন্থটি বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ প্রকাশ করে তাঁকে পরিষদের সহায়ক সদস্যের পদ প্ৰদান করে। মৌলিক গবেষণার জন্য এই গ্রন্থটি রয়্যাল এশিয়াটিক সোসাইটি অফ গ্রেট বৃটেন অ্যান্ড আয়ার্ল্যান্ডের মুখপত্রে বিস্তৃতভাবে সমালোচিত হয়। বঙ্গীয় প্ৰাদেশিক অভিধান সঙ্কলনের জন্য তিনি বাঙলার বিভিন্ন স্থানের প্রায় ৬ হাজার আঞ্চলিক শব্দ সংগ্ৰহ করেছিলেন। কলিকাতার পণ্ডিতসভা তাকে ‘প্ৰত্নতত্ত্ববারিধি’ উপাধি দেন। রয়্যাল এশিয়াটিক সোসাইটি, আমেরিকান সোসাইটি অফ আর্টস ও বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈদেশিক সহায়ক সদস্য ছিলেন। রচিত অপর উল্লেখযোগ্য গ্ৰন্থ : ‘চট্টগ্রামের বিবরণী’। এছাড়া কয়েকটি স্কুলপাঠ্যপুস্তকও তিনি রচনা করেছিলেন।
সতীশচন্দ্র ঘোষ ২ (৯-১০-১৮৯০ — ২-৭-১৯৬৭) ময়মনসিংহ। ১৯০৯ খ্রী. হিন্দু কলেজ ফাউন্ডেশন স্কলারশিপ নিয়ে প্রেসিডেন্সী কলেজ থেকে স্নাতক হন। পরে প্রথম শ্রেণীতে প্ৰথম হয়ে এম.এ. পাশ করেন। ১৯১৩ খ্রী. স্কটিশচার্চ কলেজে অধ্যাপনা দিয়ে কর্মজীবন শুরু। স্যার আশুতোষের আহ্বানে ১৯১৭ খ্ৰী. কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর ফলিত গণিত বিভাগে যোগ দেন। সেই থেকে ১৯৬৬ খ্রী. পর্যন্ত প্ৰায় ৫০ বছর কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে নানাভাবে যুক্ত ছিলেন। ১৯৪৮–৫১ খ্রী. রেজিস্ট্রর ছিলেন। ১৯৫১ খ্রী. অবসর নিলেও তাকে ‘বিশেষ অফিসার’ পদে নিয়োগ করা হয়। ১৯৫৩ খ্রী. বিশ্ববিদ্যালয়ের নূতন সংবিধান অনুসারে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ পদে নিযুক্ত হয়ে ১৯৬৬ খ্ৰী পর্যন্ত এই পদে আসীন থাকেন। কোষাধ্যক্ষ পদে থাকাকালে তিনি বিভিন্ন সময়ে উপাচার্যের অনুপস্থিতিতে তাঁর দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯২৬ খ্রী. কংগ্রেসে যোগ দেন। ১৯২৭–৩৬ খ্রী. কংগ্রেস মনোনীত প্ৰাৰ্থী হিসাবে কলিকাতা কর্পোরেশনের কাউন্সিলার ছিলেন। দেশপ্ৰিয় যতীন্দ্রমোহনের সহযোগী হিসাবে কর্পোরেশনের কার্যকলাপে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৫২ খ্রী. অল্ডারম্যান এবং ১৯৫৫ ও ১৯৫৬ খ্রী. কলিকাতার মেয়র ছিলেন। তাঁর সময়েই চীনের প্রধানমন্ত্রী চৌ এন লাই, রাশিয়ার ক্রুশ্চেভ ও বুলগানিন ভারত পরিদর্শনে কলিকাতায় এলে মেয়র হিসাবে তিনি তাদের নাগরিক সংবর্ধনা জানান। ‘ক্যালকাটা ম্যাথামেতিক্যাল সোসাইটি’র কোষাধ্যক্ষ এবং ‘শহর পরিকল্পনা ও উন্নয়ন কমিটি’র চেয়ারম্যান ছিলেন। সাহিত্য ও ইতিহাসেও তাঁর পাণ্ডিত্য ছিল। নিজস্ব পাঠাগার থেকে তিনি কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়কে ৪০০০ পুস্তক দান করেছেন। মরণোত্তর ডিলিট. উপাধিতে তাকে সম্মানিত করা হয়।
সতীশচন্দ্র ঘোষ ৩ (১৯০৮ — ২৬-১১-১৯৭৮) খুলনা। ছাত্রাবস্থা থেকেই তিনি তৎকালীন বিপ্লবী সংগঠনের সংস্পর্শে আসেন। যশোহর-খুলনা যুবসংঘের অন্যতম সংগঠক। বিপ্লবীদের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত থাকায় ১৯৩০ খ্রী. গ্রেপ্তার হয়ে আট বছর বন্দী শিবিরে বিনা বিচারে আটক থাকেন। মুক্তিলাভের পর সমাজগঠনমূলক কাজে এবং দক্ষিণ ভারতে অস্পৃশ্যতা-বিরোধী আন্দোলন সংগঠিত করার কাজে উদ্যোগী হন। পরে দক্ষিণ ভারতের একাধিক সংবাদপত্রের সাংবাদিক এবং বেঙ্গল ইমিউনিটির প্ৰতিনিধি হিসাবে উত্তর ভারতে দীর্ঘকাল কাজ করেন। বহুদিন দিল্লীপ্রবাসী ছিলেন। শেষ-জীবনে যশোহর-খুলনার প্রাক-স্বাধীনতা যুগের রাজনৈতিক ইতিহাস রচনার কাজে তাঁর অবদান উল্লেখযোগ্য।
পূর্ববর্তী:
« সতীশ সামন্ত
« সতীশ সামন্ত
পরবর্তী:
সতীশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় »
সতীশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় »
Leave a Reply