শিশিরকুমার ঘোষ (১৮৪০ — ১০-১-১৯১১) পলুয়ামাগুরা–যশোহর। হরিনারায়ণ। কলিকাতা কলুটোলা ব্রাঞ্চ স্কুল (বর্তমান হেয়ার স্কুল) থেকে প্ৰবেশিকা পাশ করেন। কিছুদিন কলিকাতা প্রেসিডেন্সী কলেজে পড়ে স্বগ্রামে ফেরেন। ‘হিন্দু প্যাট্রিয়ট’ পত্রিকার সংবাদদাতারূপে ১৮৫৯–৬০ খ্রী. নীলকর-বিরোধী সংবাদ সরবরাহ করেন। এসময় তিনি অত্যন্ত নির্ভীকভাবে নীলকর সাহেবদের শোষণ ও পাশবিক অত্যাচারের সংবাদদি প্ৰকাশ করতেন। পরে কলিকাতায় মুদ্রণের কাজ শিখে একটি কাঠের মুদ্রাযন্ত্র কিনে নিজগ্রামে স্থাপন করেন। ১৮৬২–৬৩ খ্রী. ‘অমৃত প্রবাহিণী’ পাক্ষিক পত্রিকা চালান। পিতারমৃত্যুতে প্রেস বন্ধ করে শিক্ষকতা বৃত্তি নেন। ক্রমে ডেপুটি ইনস্পেক্টর অফ স্কুলস হন। কিন্তু কিছুকাল পরেই সাংবাদিকতায় ফিরে আসেন। ২০-২-১৮৬৮ খ্রী. সাপ্তাহিক ‘অমৃতবাজার পত্রিকা’ প্ৰকাশ করেন। পরের বছর এটি ইংরেজী-বাংলা দ্বিভাষিক হয়। ১৮৭১ খ্ৰী. সপরিবারে কলিকাতায় এসে এখান থেকেই পত্রিকা প্ৰকাশ করতে থাকেন। ২২-৫-১৮৭৪ খ্রী. এই পত্রিকায় নীলবিদ্রোহকে বাঙলাদেশের প্রথম বিপ্লব বলে উল্লেখ করেন। ২১-৩-১৮৭৮ খ্রী. ভার্নাকুলার প্রেস অ্যাক্ট চালু হলে এক সপ্তাহের মধ্যে পত্রিকাটিকে পুরোপুরি ইংরেজী সাপ্তাহিকে পরিণত করেন। তাঁর অবসর-গ্রহণের বহু পরে ১৮৯১ খ্রী. পত্রিকাটি দৈনিকে পরিণত হয়। সাংবাদিকতার মাধ্যমে দেশসেবার আন্তরিক চেষ্টা ছিল। ফলে তাঁর পত্রিকা শীঘ্রই রাজরোষে পড়ে। ১৮৬৮ খ্ৰী. তাঁর ও আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা শুরু হয়। মনোমোহন ঘোষ তাঁদের পক্ষে সওয়াল করেন। বিচারে তিনি মুক্তি পান কিন্তু চন্দ্রনাথ ঘোষ ও রাজকৃষ্ণ মিত্র দণ্ডিত হন। অমৃতবাজার পত্রিকাটি শীঘ্রই শিক্ষিত মধ্যবিত্তের মুখপত্র হয়ে ওঠে এবং তিনি সানুজ রাজনীতিতে অংশ নিতে শুরু করেন। পৌরসভার পরিচালনায় ভোটাধিকার প্রয়োগের কথা তিনিই প্ৰথম বলেন। ১৮৭০ খ্ৰী. পার্লামেন্টারী শাসনের দাবি জানান। ড্রামাটিক পারফরম্যান্স অ্যাক্ট, প্রেস অ্যাক্ট, আর্মস অ্যাক্ট প্রভৃতি দমনমূলক আইনের বিরোধিতা করেন। ৭-১২-১৮৭২ খ্রী. ন্যাশনাল থিয়েটার খোলায় উৎসাহী ছিলেন এবং পরের বছর তার পরিচালক নিযুক্ত হন। ভারতীয়দের শিল্প-বাণিজ্যে উৎসাহ দেন। শিক্ষা-বিস্তারে আগ্রহী ছিলেন। প্ৰথম যৌবনে ব্ৰাহ্ম-মতাবলম্বী হলেও ১৮৬৯ খ্রী. তিনি এই সংস্রব ত্যাগ করেন। এরপর বোম্বাই শহরে মাদাম ব্ল্যাভাটস্কী প্রতিষ্ঠিত থিওসফিক্যাল সোসাইটির সমর্থক হন। সবশেষে তিনি বৈষ্ণব. ধৰ্ম গ্ৰহণ করেন। তাঁর রচিত ৬ খণ্ড ‘অমিয়া-নিমাই-চরিত’ এবং ইংরেজীতে ‘Lord Gouranga or Salvation for All’ গ্রন্থ দুইটি নব্য বৈষ্ণবতন্ত্রের প্রচারে বিশেষ সাহায্য করে। ১৮৭৮ খ্রী. পত্রিকা ও রাজনীতি থেকে অবসর নিয়ে গ্ৰন্থ-রচনায় মন দেন। তাঁর রচিত। অন্যান্য গ্ৰন্থ: ‘শ্ৰীনরোত্তম চরিত’, ‘শ্ৰীকালাচাঁদ গীতা’ (কাব্য), ‘শ্ৰীনিমাই সন্ন্যাস’ ও ‘নয়শো রূপেয়া’ (নাটক), ‘সর্পাঘাতের চিকিৎসা’, ‘বাজারের লড়াই’ (প্ৰহসন), প্রভৃতি। বৈষ্ণবধর্ম প্রচারের জন্য তিনি ‘শ্ৰীশ্ৰীবিষ্ণুপ্রিয়া পত্রিকা’, শ্রীশ্রীগৌরবিষ্ণুপ্রিয়া পত্রিকা’, ‘হিন্দু স্পিরিচুয়্যাল ম্যাগাজিন’ প্রভৃতি পরিচালনা করতেন।
পূর্ববর্তী:
« শিশিরকুমার গুহ
« শিশিরকুমার গুহ
পরবর্তী:
শিশিরকুমার বসু »
শিশিরকুমার বসু »
Leave a Reply