শিবনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ১ (১৮৯৯ — ২০-৬-১৯৭২) গঙ্গাটিকুরী–বর্ধমান। অতীন্দ্রনাথ। রসসাহিত্যিক ও বর্ধমানের প্রখ্যাত আইনবিদ ইন্দ্রনাথ তাঁর পিতামহ। ১৯২৭ খ্ৰী. বি. এল. পাশ করে কিছুদিন কলিকাতা হাইকোর্টে ওকালতি করেন। পরে তিনি পল্লী বাঙলার উন্নতিসাধনের উদ্দেশ্যে ওকালতি ছেড়ে স্বগ্রামে এসে বসবাস করতে থাকেন। তিনি ৩২ বছর কাটোয়ার প্রথম শ্রেণীর অবৈতনিক ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন। জেলার বিভিন্ন জনহিতকর প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ছিল। ১৯৪৩ খ্রী. দারুণ দুর্ভিক্ষের সময় গঙ্গাটিকুরীতে লঙ্গরখানা খুলে আর্ত দরিদ্রের সেবা করেন। ১৯৬১ খ্রী. তাঁর আহ্বানে গঙ্গাটিকুরী গ্রামে ‘ইন্দ্ৰালয় প্রাঙ্গণে’ বঙ্গসাহিত্য সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। গ্রামে পিতার নামে তিনি মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন করেছিলেন।
শিবনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ২ (১১-৭-১৮৯৭ — ১৬-১২-১৯৮২) ব্ৰাহ্মণরাংদিয়া-খুলনা। দ্বারকানাথ। স্বাধীনতা সংগ্ৰামী, বিশিষ্ট শ্রমিক নেতা এবং প্রথম সোশ্যালিস্ট ইন্টারন্যাশনালের সদস্য। বাল্যকালেই হুগলী জেলায় চলে আসেন। সেখানে মহসীন কলেজে পড়েন। গণিত বিষয়ে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এম. এস. সি. । ছাত্রাবস্থায় বিপ্লবী যুগান্তর দলে যোগ দেন। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে সোভিয়েত সাহায্য পাবার উদ্দেশ্যে ১৯২১ খ্ৰী-পায়ে হেঁটে আফগানিস্তানের মধ্য দিয়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের পথে যাত্রা করেন। মস্কোতে লেনিনের মরদেহ নিয়ে শোক মিছিল বার হবার দিনটিতে (২১-১-১৯২৪) তিনি সেখানে পৌঁছান এবং মিছিলে অংশগ্রহণ করেন। আফগানিস্তানে থাকা কালে সেখানে হাবিবিয়া কলেজে বিজ্ঞানের অধ্যাপনা করেছেন। সে সময় আফগানিস্তানের রাজা আমানুল্লার মাধ্যমে রাজা মহেন্দ্ৰপ্ৰতাপের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। কাবুলে তিনি এক অস্থায়ী ভারত সরকার গঠন করেন। সম্ভবত ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী শাসনের বিরুদ্ধে এটিই ছিল প্ৰথম ‘স্বাধীন ভারত সরকার’। মস্কোতে বলশেভিক পার্টির তদানীন্তন প্ৰায় সব নেতার সংস্পর্শে আসেন। কিছুদিন মস্কোর টয়লার্স ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতা করেছেন। অক্টোবর ১৯২৪ খ্ৰী. লন্ডনে যাবার পথে পূর্ব ইউরোপের অনেক অঞ্চল ভ্ৰমণ করেন। লন্ডনে পৌছে ভারতে ফেরার পাশপোর্ট না পেয়ে আটকে যান। এ সময় ইংলন্ডপ্রবাসী ভারতীয় সাপুরজী সাকলাতওয়ালার নির্বাচনে অভিযান সংগঠন করেন। সাকলাতওয়ালা জয়লাভ করে হাউন অফ কমন্স-এর সদস্য হন। মি. এটলির চেষ্টায় ১৯২৫ খ্রী. ভারতে ফিরতে পারেন। ১৯২৯ খ্রী. লিলুয়ায় রেলওয়ে ধর্মঘট পরিচালনা করেন। মীরাট ষড়যন্ত্র মামলায় তাঁকে অন্যতম আসামী বলে অভিযুক্ত করা হয়। ১৯৩৫ খ্রী. কংগ্রেস সোশ্যালিস্ট পার্টি গঠিত হলে তিনি তাতে যোগ দেন। ১৯৩৭ খ্রী. চটকল শ্রমিক ধর্মঘটের নেতৃত্ব দেন। ১৯৩৭–৫২ খ্রী. বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক আইন পরিষদের সদস্য, অল ইন্ডিয়া ট্রেড ইউনিয়ন ও হিন্দ মজদুর সভার সভাপতি, ক্যালকাটা ট্রাম ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন ও বেঙ্গল চটকল মজদুর ইউনিয়নের প্রথম সম্পাদক, রেলওয়ে মেনস ফেডারেশন এবং রেলওয়ে মেনস ইউনিয়নের সভাপতি ছিলেন। বিভিন্ন সময়ে প্ৰায় ১০ বছর কারাবাস করেছেন। ১৯৭৫ খ্রী. রাজনীতি থেকে অবসর নিয়ে হাওড়া কুষ্ঠকুটীর ও বিভিন্ন ত্ৰাণ সংস্থার সঙ্গে যুক্ত থাকেন। ১৯৫৪ খ্রী. সরকারী আমন্ত্রণে চীন ভ্ৰমণ করেন। আফগানিস্তানের অভিজ্ঞতা নিয়ে তাঁর লেখা পুস্তিকা ‘স্মৃতি-বিস্মৃতি’।
পূর্ববর্তী:
« শিবনাথ ঘোষ
« শিবনাথ ঘোষ
পরবর্তী:
শিবনাথ শাস্ত্রী »
শিবনাথ শাস্ত্রী »
Leave a Reply