ললিতমোহন সেন (১৮৯৮ — ১-১০-১৯৫৪) শান্তিপুর—নদীয়া। কুঞ্জবিহারী। অল্প বয়সে শান্তিপুরের তাঁতের কাপড়ের নকশা ও নিকটবর্তী কুমোরপাড়ার প্রতিমা ও পুতুল তৈরি দেখে ছবি আঁকা ও পুতুল গড়ার প্রতি আকৃষ্ট হন। স্বাস্থ্যের কারণে ১৯১১ খ্রীঃ লক্ষ্ণৌতে অগ্রজের কাছে গিয়ে স্থানীয় কুইন্স উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। লক্ষ্ণৌ সরকারী চারু-কারু বিদ্যালয় ১৯১২ খ্ৰী প্রতিষ্ঠিত হওয়ার প্রথম দিন থেকেই তিনি সেখানে যোগ দেন। চিত্রবিদ্যায় পাঁচ বৎসর শিক্ষাকাল সমাপ্ত করে প্ৰথম দলে ডিপ্লোমাপ্ৰাপ্ত হন। তাকে ঐ বিদ্যালয়ে শিক্ষক-পদে নিযুক্ত করার উদ্দেশ্যে ১৯১৮ খ্ৰী কর্মাসিয়াল আর্টস ক্লাস খোলা হয়। পাঁচ বৎসর এই পদে কাজ করার পরে উত্তরপ্রদেশ সরকারের উচ্চতর শিল্পসংক্রান্ত শিক্ষাবৃত্তি লাভ করে ১৯২৩ খ্রী. ইংল্যান্ডে যান। লন্ডনের রয়েল কলেজ অব আর্টসের তিন বৎসরের ডিপ্লোমা কোর্স আড়াই বছরে সমাপ্ত করে এআরসি-এর উপাধি লাভ করেন। কাঠ-খোদাই শিক্ষার জন্যও বিশেষ প্ৰশংসাপত্ৰ পান। দেশে ফিরে লক্ষ্ণৌ সরকারী চারু-কারু বিদ্যালয়ের ড্রইং শিক্ষকদের শিক্ষণের জন্য গঠিত বিভাগটির পরিচালক-পদে নিযুক্ত হন। ভারত সরকারের লন্ডনস্থ অফিস সদ্যনির্মিত ‘ইন্ডিয়া হাউসে’ প্রাচীর-চিত্র আঁকবার জন্য ১৯২৮ খ্রী. নির্বাচিত চারজন শিল্পীর মধ্যে তিনি অন্যতম ছিলেন। ১৯২৯ খ্রী ঐ চারজন শিল্পী লন্ডনে যান এবং ইন্ডিয়া হাউসে প্রাচীরচিত্র আঁকবার আগে ইটালী ও ইউরোপের বিভিন্ন চিত্রসংগ্রহশালা পরিদর্শন করেন। বিলাতে থাকার সময়ে রয়াল একাডেমী অব আর্টের চিত্ৰপ্ৰদৰ্শনীতে চারজন শিল্পীর চিত্ৰ প্ৰদৰ্শিত হলে ইংল্যান্ডের রানী মেরী ললিতমোহনের একটি চিত্ৰ ক্ৰয় করেছিলেন। লন্ডনের ফাইন আর্ট সোসাইটি তাঁর জলরঙে আঁকা ‘পাহাড়ের রানী’ নামক চিত্রটির একশত কপি বিক্রয়ের জন্য ছাপিয়ে শিল্পীকে সম্মানিত করেছিল। ভারতে ফিরে আসার কিছুকাল পরে লক্ষ্ণৌ সরকারী চারু-কারু বিদ্যালয়ের শিল্প-প্ৰযুক্তি বিভাগের পরিচালক হিরন্ময় রায়চৌধুরি এআরসিএ অবসর গ্রহণ করলে সেই পদে তাকে নিযুক্ত করা হয়। তাঁর কয়েক বৎসর পরে এই বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষপদ লাভ করেন। তাঁর চিত্রে পাশ্চাত্য ও প্রাচ্যের করণ-কৌশলের অপূর্ব সমন্বয় দেখা যায়। কতকগুলি কাঠের সুন্দর মূর্তিও একসময়ে গড়েছিলেন। ফটোগ্ৰাকী বিদ্যাও তাঁর ভাল জানা ছিল। লক্ষ্ণৌতে মৃত্যু।
পূর্ববর্তী:
« ললিতমোহন সিংহ
« ললিতমোহন সিংহ
পরবর্তী:
লাকি আখন্দ »
লাকি আখন্দ »
Leave a Reply