লতিকা সেন (২৭-৫-১৯১১ –- ২৭-৪-১৯৪৯) পাইকপাড়া-ঢাকা। নিবারণচন্দ্ৰ দাস। পিতামহ প্ৰখ্যাত আইনজীবী প্ৰফুল্লকুমার দাসের নারায়ণগঞ্জের বাড়িতে জন্ম। শৈশবে শিক্ষারম্ভ তাঁর দৃঢ়চেতা উদার মনোভাবাপন্ন মাতা কিরণবালার নিকট। ঢাকার ইডেন স্কুলে ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত পড়েন। পরে ১৯৩০ খ্রী. ঢাকার বিপ্লবী নেত্রী লীলা নাগ (রায়) প্রতিষ্ঠিত ‘নারী শিক্ষা মন্দির’-এর দশম শ্রেণীতে ভর্তি হয়ে সেই স্কুল থেকে ‘ঢাকা বোর্ড অব সেকেন্ডারী এড়ুকেশন’-এর হাই স্কুল পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। ঐ স্কুলের প্রথম পরীক্ষার্থীদের অন্যতম। ঢাকা ইডেন কলেজ থেকে আই.এ. পাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বি.এ. পড়েন। পারিবারিক কারণে মাতার তত্ত্বাবধানের জন্য কলিকাতায় আসতে হয়। এখানে বেলতলা গার্লস হাই স্কুলে। শিক্ষকতা করতে থাকেন। স্কুল জীবনেই ঢাকায় লীলা রায় প্রতিষ্ঠিত ‘দীপালী সঙ্ঘ’-এর সদস্য হিসাবে নানা বৈপ্লবিক ও সমাজসেবামূলক কাজে অংশ গ্ৰহণ করেন। গোপন বৈপ্লবিক সংস্থা ‘শ্ৰী সঙেঘও তাঁর ভাইদের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। লীলা রায়ের অন্তরঙ্গ কর্মী রেণুকা সেনের সঙ্গে বিশেষ ঘনিষ্ঠতা ছিল। তাঁর তিন ভাই অনিল, সুনীল ও পরিমল সকলেই বিপ্লবী দলভুক্ত ছিলেন। অনিল দাস ১৯৩২ খ্রী. ঢাকায় গ্রেপ্তার হয়ে পুলিস হাজতে অত্যাচারের ফলে মারা যান। ঢাকায় থাকার সময়েই আত্মগোপনকারী কমিউনিস্ট কর্মীদের সংস্পর্শে এসে কমিউনিস্ট মতবাদের দিকে আকৃষ্ট হন। কলিকাতায় বসবাসের সময় তিনি ‘বেঙ্গল লেবার পার্টি’র সংস্পর্শে আসেন। ১৯৩৬ খ্ৰী. কমিউনিস্ট আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পার্টির সদস্য হন। বাঙলাদেশে তিনিই কমিউনিস্ট পার্টির প্রথম মহিলা সদস্য। কিছু মহিলার সহযোগিতায় কুটিরশিল্প ও সেলাই শিক্ষার ব্যবস্থা করেন। ১৯৩৯ খ্রী. কমিউনিস্ট পার্টির ডাঃ রণেন সেনের সঙ্গে তাঁর বিবাহ হয়। তখনকার রাজনৈতিক আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে রণেন সেনকে পুলিসের নির্দেশে কলিকাতা থেকে বহিষ্কার করা হয়। ১৯৪১ খ্রী. তাঁর পুত্রসন্তান জন্মাবার পরে কমিউনিস্ট আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত থাকার অপরাধে বেলতলা স্কুল থেকে তিনি কর্মচ্যুত হন। সৈ সময়ে তাঁর স্বামী হিজলী জেলে বন্দী। একমাত্ৰ সহায় তখন ছিলেন তাঁর মা কিরণবালা। ১৯৪৩ খ্রী. ভয়াবহ দুৰ্ভিক্ষ ও সামাজিক বিপর্যয়ের পর অসহায় নারীদের আশ্রয়-শিবির ও কর্মকেন্দ্ৰ নারী সেবা সঙ্ঘ স্থাপিত হলে তিনি তাঁর অফিসের কাজে ও অন্যান্য সমাজসেবামূলক কাজে আত্মনিয়োগ করেন। আমৃত্যু এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ২৭ এপ্রিল ১৯৪৯ খ্রী. তখনকার রাজনৈতিক বন্দীমুক্তির আন্দোলনে যে মহিলা মিছিল বার হয় তাতে অংশগ্রহণ করে পুলিসের গুলিতে তিনি এবং অপর তিনজন মহিলা-প্রতিভা গাঙ্গুলী, অমিয়া দত্ত, গীতা সরকার রাস্তাতেই নিহত হন।
পূর্ববর্তী:
« লজ্জাবতী বসু
« লজ্জাবতী বসু
পরবর্তী:
লরেন্স ডিসুজা »
লরেন্স ডিসুজা »
Leave a Reply