রেবতীমোহন বৰ্মণ (১৯০৩ — ৬-৫-১৯৫২) শিমুলকান্দি–ময়মনসিংহ। স্কুলে পড়ার সময় পড়া ছেড়ে তিনি অসহযোগ আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়েন এবং যতীন্দ্রমোহনের নেতৃত্বে পরিচালিত ঈষ্ট বেঙ্গল রেল ধর্মঘটে অংশ নেন। পরে ১৯২২ খ্রী. কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যাট্রিক পরীক্ষায় বসে শীর্ষস্থান অধিকার করেন। ঐ বছর প্রমোদরঞ্জন চক্রবর্তী এবং গৌরচন্দ্ৰ মণ্ডলও তাঁর সঙ্গে একই নম্বর পেয়ে প্রথম হয়েছিলেন। ছাত্রাবস্থায় ঢাকার শ্ৰীসঙ্ঘের সভ্য হিসাবে কলিকাতা, বাঁকুড়া ও বীরভূম জেলায় সঙ্ঘের কাজ চালিয়ে যান। বৈপ্লবিক কর্মব্যস্ততার মধ্যেও তিনি কৃতিত্বের সঙ্গে এম.এ. পাশ করেন। বাংলা ও ইংরেজী ভাষায় একজন সুলেখক ছিলেন। কিছুদিন ‘বেণু’ মাসিক পত্রিকা সম্পাদনা করেন। ১৯২১ খ্রী. তাঁর রচিত ‘তরুণ রুশ’ গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়। বর্তমান শতাব্দীর তৃতীয় দশকে বাঙলার হাজার হাজার রাজনৈতিক কামীদের মত তিনিও বিনা বিচারে বন্দী হন। ১৯৩৮ খ্রী. পর্যন্ত বিভিন্ন বন্দীশিবিরে বাসকালে মার্ক্সবাদের মূল সাহিত্য পাঠের মাধ্যমে তিনি কমিউনিস্ট মতবাদ গ্ৰহণ করেন। ১৯৩৮ খ্ৰী. হুগলী জেলার বড়ায় অনুষ্ঠিত বঙ্গীয় প্রাদেশিক কৃষকসভার দ্বিতীয় সম্মেলনে সভাপতি পরিষদের পক্ষ থেকে পঠিত প্ৰবন্ধটির তিনি রচয়িতা ছিলেন। এই প্ৰবন্ধটি পরে ‘ভারতে কৃষকের সংগ্রাম ও আন্দোলন’ নামে পুস্তাকাকারে প্রকাশিত হয়। মার্ক্সবাদী সাহিত্য সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ‘গণসাহিত্যচক্ৰ’ নামে ঢাকায় একটি প্রকাশন-ভবন স্থাপন করেন। মুজফফর আহমদের তথ্যে প্রকাশ যে ‘ন্যাশনাল বুক এজেন্সী’ স্থাপনের পিছনেও ‘কমরেড বর্মণের অনেকখানি প্রেরণা ছিল’। ১৯৩৮ থেকে ১৯৪৬ খ্রী. মধ্যে রচিত তাঁর গ্রন্থ: ‘সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি’, ‘মার্ক্স প্রবেশিকা’, ‘কৃষক ও জমিদার’, ‘সাম্রাজ্যবাদের সঙ্কট’, ‘হেগেল ও মার্ক্স’, ‘ক্যাপিটাল’ (সংক্ষিপ্তসার), ‘লেনিন ও বলশেভিক পার্টি’, ‘সমাজের বিকাশ’, ‘সোভিয়েট ইউনিয়ন’, ‘শান্তিকামী সোভিয়েট’, ‘অর্থনীতির গোড়ার কথা’, ‘Society and its Development’, ‘Marxist View of Capital’ প্রভৃতি। কয়েকটি মার্ক্সীয় গ্ৰন্থ অনুবাদও করেছিলেন। বন্দীশিবিরে বাসকালে দুরারোগ্য কুষ্ঠ ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে শেষ দিন পর্যন্ত কষ্ট ভোগ করেছেন। ত্রিপুরা রাজ্যে মৃত্যু।
পূর্ববর্তী:
« রেবতীচরণ নাগ
« রেবতীচরণ নাগ
পরবর্তী:
রেবতীমোহন রায় »
রেবতীমোহন রায় »
Leave a Reply