রাসবিহারী বসু (২৫-৫-১৮৮৫ — জানু ১৯৪৫) সুবলদহ — বর্ধমান। পিতা বিনোদবিহারী চন্দননগরে বাস করতেন। মর্টন স্কুলে ও ড়ুপ্লে কলেজে কিছুদিন পড়াশুনা করেন। চন্দননগরে অধ্যাপক চারু রায়ের প্রভাবে কানাই দত্ত, শ্ৰীশ ঘোষ, মতি রায় প্রমুখ যে বিশিষ্ট দল গড়ে তোলেন তাঁর সঙ্গে তিনি যুক্ত ছিলেন। ১৯০৮ খ্রী.আলীপুর বোমা ষড়যন্ত্র মামলার ব্যাপারে তল্লাশী চালাবার সময় তাঁর লেখা দুইটি চিঠি পুলিসের হাতে পড়ায় তিনি গ্রেপ্তার হন। কিন্তু পরে মুক্তি পান। পুলিসের নজর এড়াতে দেরাদুনে যান এবং সেখানে ফরেস্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটে হেডক্লার্কের কাজে যোগ দেন। ক্রমে তিনি দেশবিদেশে বিপ্লবীদের সঙ্গে পরিচিত হয়ে গোপনে গোপনে বাঙলায়, যুক্তপ্রদেশে ও পাঞ্জাবে বৈপ্লবিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে থাকেন। এই কাজের সঙ্গীদের মধ্যে আমীরচাঁদ, দীননাথ চট্টোপাধ্যায়, অবোধবিহারী ও বালমুকুন্দের নাম উল্লেখযোগ্য। ১৯১৫ খ্রী মহাযুদ্ধের সুযোগে তিনি সভায় বক্তৃতা দিয়ে জনসাধারণকে উদ্ধৃদ্ধ করতে থাকেন। অন্যদিকে এইসময়েই তাঁর সঙ্গীরা সৈন্যদের মধ্যেও বিপ্লব প্রচার করেন। এরপর নানা ষড়যন্ত্রের সঙ্গে লিপ্ত সন্দেহে সরকার তাঁকে গ্রেপ্তারের জন্য বহু টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে। ১৯১৪ খ্রী. কাশীতে শচীন্দ্রনাথ সান্যালের সঙ্গে মিলিত হয়ে বেনারস সমিতি পুনর্গঠিত করে যুক্তপ্রদেশে বৈপ্লবিক সংগঠনের বিস্তার ও উত্তরভারতে সশস্ত্ৰ অভ্যুত্থান পরিচালনার জন্য লাহোর যান। গ্রেপ্তার এড়াতে লাহোর থেকে কাশী এবং কাশী থেকে কলিকাতা আসেন। কিন্তু লাহোর ষড়যন্ত্র মামলায় নাম প্ৰকাশ হওয়ায় তিনি রবীন্দ্রনাথের আত্মীয় পরিচয়ে পি.আর. ঠাকুর ছদ্মনামে জাপানে পালিয়ে গিয়ে সেখানে ‘টোকিও-ইন্ডিয়ান-লীগ’ প্ৰতিষ্ঠা করেন। জাপান থেকে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম চালিয়ে যান। ১৯৪১ খ্রী. ডিসেম্বর মাসে জাপান মিত্রপক্ষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলে তিনি ব্রহ্ম, মালয় প্রভৃতি স্থানের ভারতীয়দের নিয়ে ‘আজাদ হিন্দ সঙ্ঘ’ বা ‘ইন্ডিয়ন ইন্ডিপেন্ডেন্স লীগ অফ ঈস্ট এশিয়া’ গঠন করেন। পরে সুভাষচন্দ্ৰ বসু জাপানে গেলে তিনি সুভাষচন্দ্রের হাতে আজাদ হিন্দ। সঙ্ঘের নেতৃত্ব তুলে দেন। জাপানী মহিলাকে বিবাহ করে সেখানেই থেকে যান। মৃত্যুর পূর্বে জাপ সম্রাট এই বিদেশী বিপ্লবীকে জাপানের সর্বোচ্চ সম্মান ‘Second order of the Merit of the Rising Sun’ পদক নিয়ে সম্মানিত করেছিলেন।
পূর্ববর্তী:
« রাসবিহারী ঘোষ, স্যার
« রাসবিহারী ঘোষ, স্যার
পরবর্তী:
রাসবিহারী মিত্র ঠাকুর »
রাসবিহারী মিত্র ঠাকুর »
Leave a Reply