রামগোপাল ঘোষ (১৮১৫ — ২৫-১-১৮৬৮) বাঘাটি-হুগলী। গোবিন্দচন্দ্র। হিন্দু কলেজে বিখ্যাত ডিরোজিওর ছাত্র। বাঙলার নবজাগরণ আন্দোলনের পুরোধা ও ডিরোজিওর শিষ্যদলের অন্যতমরূপে অ্যাকাডেমিক অ্যাসোসিয়েশনের আলোচনায় তিনি অসাধারণ বাগ্মিরূপে পরিচিত হন। কলেজের পাঠ সমাপ্ত না করে জনৈক ইংরেজ ব্যবসায়ীর সহকারী হয়ে পরে বেনিয়ান হন। এরপর কেলসাল, ঘোষ অ্যান্ড কোং-এর অংশীদার হয়েছিলেন। ১৮৪৮ খ্রী. নিজে ব্যবসায়-প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন। তিনি শিক্ষা-প্রসারের মাধ্যমে দেশের অজ্ঞতা ও কুসংস্কার দূরীকরণে প্রয়াসী ছিলেন। ডেভিড হেয়ারকে স্কুল স্থাপনে, নিজ পল্লীতে একটি স্কুল ও পাঠাগার এবং বেনিভোলেন্ট সোসাইটির সম্পাদকরূপে হিন্দু চ্যারিট্যাবল ইনস্টিটিউশন স্থাপনে সাহায্য করেন। এড়ুকেশন কাউন্সিলের সভ্যরূপে বিদ্যালয় স্থাপনের বেসরকারী প্রচেষ্টায় সরকারী সাহায্যদানের রীতি তাঁরই চেষ্টায় প্রবর্তিত হয়। ১৮৪৯ খ্ৰী. বেথুন সাহেবকে বালিকা বিদ্যালয় স্থাপনে সক্রিয় সাহায্য দান করেন এবং চিকিৎসাবিদ্যায় উচ্চশিক্ষালাভার্থ ৪ জন ছাত্রকে বিলাত প্রেরণের জন্য দ্বারকানাথের পরিকল্পনাকে পূর্ণ সমর্থন জানান। ২৯-৩-১৮৫৪ খ্রী তিনিই প্ৰথম ভারতে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রস্তাব করেন। নব্যবাঙলার মুখপত্ররূপে ‘জ্ঞানান্বেষণ’ ও ‘বেঙ্গল স্পেকটেটর’ পত্রিকার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত ছিলেন। তৎকালীন রাজনীতি অর্থাৎ ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান সোসাইটির বক্তৃতায় তিনি প্রধান অংশ নিতেন। ২৯-৭-১৮৫৩ খ্রী. সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় ভারতীয়দের সুযোগ দেবার জোরালো দাবি তোলেন। ভারতীয়দের আইন ও আদালতে সমানাধিকারের ভিত্তিতে আইনের খসড়ার সপক্ষে তাঁর রচিত ‘A few remarks on certain Draft Acts, commonly called Black Act’ পুস্তিকা উল্লেখযোগ্য। এ পুস্তিকার নীলকর সাহেবদের অত্যাচারের নিন্দার জন্য অ্যাগ্রি-হর্টিকালচারাল সোসাইটির সহ-সভাপতির পদ থেকে তিনি অপসারিত হন। নীলদর্পণ মোকদ্দমা-প্রসঙ্গে একজন ইংরেজ বিচারকের ভারতীয়দের সম্পর্কে কুৎসিত মন্তব্যের প্রতিবাদে ২৬-৮-১৮৬১ খ্রী. অনুষ্ঠিত সভায় অংশ নেন। ধর্মীয় কুসংস্কারের ঘোর বিরোধী এবং স্ত্রীশিক্ষা ও বিধবা-বিবাহের সমর্থক ছিলেন। বাগ্মী ও সমাজ-সংস্কারক রামগোপাল ঘোষকে ‘ইন্ডিয়ান ডিমস্থিনিস’ বলা হত।
পূর্ববর্তী:
« রামগতি সেন
« রামগতি সেন
পরবর্তী:
রামচন্দ্র কবিরাজ »
রামচন্দ্র কবিরাজ »
Leave a Reply