রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব, শ্ৰীশ্ৰী (১৮-২-১৮৩৬ –- ১৬-৮-১৮৮৬) কামারপুকুর-হুগলী। ক্ষুদিরাম চট্টোপাধ্যায়। বাল্যকালে তাঁর নাম ছিল গদাধর। বিদ্যালয়ের শিক্ষা তেমন হয় নি, কিন্তু বাল্যকাল থেকেই ধর্মভাবাপন্ন ছিলেন। যৌবনে রাণী রাসমণি-প্রতিষ্ঠিত দক্ষিণেশ্বর কালীবাড়ির পুরোহিত নিযুক্ত হন (১৮৫৫)। এখানে কালীসাধনায় তাঁর সিদ্ধিলাভ ঘটে। ৷ ১৯ বছরের স্ত্রী সারদামণি দক্ষিণেশ্বরে এলে তিনি তাকে সাক্ষাৎ জগদম্বাজ্ঞানে পূজা করেন। মান-অপমান, কামিনী-কাঞ্চন প্রভৃতি ত্যাগ করে তিনি ‘পরমহংসদেব’ নামে অভিহিত হন। সর্বধর্মের মূল জানিবার জন্য সর্বধর্মীয় মতে উপাসনা করেছেন। অতি সরলভাষায় দৃষ্টান্ত সহকারে তিনি ধর্মের কঠিন তত্ত্ব বুঝিয়ে দিতেন। স্বামী বিবেকানন্দ তাঁর প্রিয় শিষ্য। তাঁর লীলাভূমি হিসাবে দক্ষিণেশ্বর তীর্থস্থানে পরিণত হয়েছে। শিবনাথ শাস্ত্রী, কেশবচন্দ্ৰ সেন, ডা. মহেন্দ্রলাল সরকার, গিরিশচন্দ্ৰ ঘোষ প্রমুখ তৎকালীন বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ তাঁর সংস্পর্শে আসেন। তাঁর সাধনায় একজন ভৈরবী ও তোতাপুরী নামে এক যোগী সহায়তা করেন। হিন্দুধর্মের অনুরাগীদের তিনি সংস্কার ও আড়ম্বরমুক্ত এক সরল ধৰ্মজীবন যাপনের উপদেশ দেন। তাঁর মতে জীব, শিব–অর্থাৎ সার্থকভাবে জীবনধারণ বা সমাজের মঙ্গল ও সেবার মধ্যে বাঁচার আদর্শাই ঈশ্বরলাভের প্রকৃষ্টপথ। ‘সত্য একটাই-ঋষিরাই বলেন বহু’। তিনি প্রচার করলেন : ‘সব ধর্মই সত্য, যত মত তত পথ’। তাঁর কথিত ‘শক্তি’ উপাসনাই ভবিষ্যতে বিপ্লবীদের অস্ত্ৰধারণ করার মনোবল যোগায়। ‘The Face of Silence’ বইটি পড়ে মনীষী রম্যাঁ রলাঁ রামকৃষ্ণদেবের একটি বৃহৎ জীবনী রচনা করেন। তাতে তিনি রামকৃষ্ণকে ‘ত্ৰিশ কোটি মানুষের দু’হাজার বছরের আধ্যাত্মিক জীবনের সার’ বলে বর্ণনা করেছেন।
পূর্ববর্তী:
« রামকৃষ্ণ দাস
« রামকৃষ্ণ দাস
পরবর্তী:
রামকৃষ্ণ বিশ্বাস »
রামকৃষ্ণ বিশ্বাস »
Leave a Reply