রাধানাথ শিকদার (১৮১৩ -– ১৭-৫-১৮৭০) জোড়াসাঁকো — কলিকাতা। তিতুরাম। গণিতশাস্ত্ৰজ্ঞ, বৈজ্ঞানিক এবং হিমালয় এভারেস্ট শৃঙ্গের আবিষ্কারক। কমল বসুর স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষালাভের পর হিন্দু স্কুলে প্ৰবেশ করেন। সেখানে বিখ্যাত শিক্ষক ডিরোজিওর ভাবধারায় তিনি বিশেষভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন। ড. টাইটলারের প্রিয় ছাত্ররূপে তিনি উচ্চগণিতে বিশেষ ব্যুৎপত্তি অর্জন করেন। ১৮৩২ খ্ৰী. ত্রিকোণমিতিভিত্তিক জরিপ বিভাগে যোগ দেন। কর্নেল জর্জ এভারেস্টের অধীনে কাজ করতেন। জরিপের কাজে এভারেস্ট আবিষ্কৃত ‘এক্স-রে সিস্টেম’-এর তিনিই প্রথম প্রযোক্তা ছিলেন। ১৮৫২ খ্রী তিনি হিমালয় পর্বতে পৃথিবীর সর্বোচ্চ শিখর আবিষ্কার করেন। কিন্তু তৎকালীন সাৰ্ভে-অধিকর্তা এভারেস্ট সাহেবের নামানুসারে এই শিখরের নাম ‘মাউন্ট এভারেস্ট’ রাখা হয়। এই বছরই তিনি চীপ কম্পিউটার পদের সঙ্গে কলিকাতার সরকারী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ অফিসের সুপারিন্টেন্ডেন্ট হন। ৩০ বছর চাকরির পর ১৮৬২ খ্রী. অবসর নেন। তাঁর রচিত ‘Auxiliary Table’ (১৮৫১) এবং ‘The Manual of Surveying’ নিবন্ধ ভারতীয় সার্ভের অপরিহার্য দলিল। ব্যাভেরিয়ার প্রাকৃতিক ঐতিহাসিক সোসাইটির লেখক ও সদস্য ছিলেন। প্রকৃত ডিরোজিয়ান রূপে প্যারীচাঁদ মিত্রের অবৈতনিক স্কুলে শিক্ষকতা করেন। পরবর্তী জীবনে জেনারেল অ্যাসেমব্লীজ ইনস্টিটিউশনের অঙ্কের অধ্যাপক হন। শিল্প প্ৰশিক্ষণে উৎসাহী রাধানাথ ১৮৫৪ খ্ৰী. কলিকাতা আর্ট অ্যান্ড ক্র্যাফটু সোসাইটি স্থাপনের অন্যতম উদ্যোক্তা ছিলেন। এই বছরই বাংলা ভাষায় মহিলাদের জনয প্যারীচাঁদ মিত্রের সহযোগিতায় ‘মাসিক পত্রিকা’ প্ৰকাশ করেন। স্বল্পস্থায়ী এই পত্রিকাটিতেই প্যারীচাঁদের বিখ্যাত ‘আলালের ঘরের দুলাল প্রকাশিত হয়। গ্ৰীক ও ল্যাটিন ভাষাজ্ঞানের সাহায্যে তিনি এই পত্রিকায় প্লুটার্ক, জেনোফোন ইত্যাদির রচনা থেকে উদ্ধৃতির সাহায্যে উচ্চাঙ্গের নিবন্ধ লিখতেন। সামাজিক ব্যাপারে বাল্যবিবাহ ও বহুবিবাহের বিরোধী এবং বিধবা-বিবাহে উৎসাহী ছিলেন। একজন ইংরেজ ম্যাজিষ্ট্রেট কর্তৃক ভারতীয় কুলীকে বেগার খাটানোর বিরুদ্ধে প্ৰতিবাদ করায় তিনি ১৫-৫-১৮৪৩ খ্রী. আদালত কর্তৃক অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হন। এই ঘটনা কিছুদিন পর সংবাদপত্রে প্রকাশিত হলে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিল।
পূর্ববর্তী:
« রাধানাথ মিত্র
« রাধানাথ মিত্র
পরবর্তী:
রাধানাথ সেন »
রাধানাথ সেন »
Leave a Reply