রাধাগোবিন্দ চন্দ্ৰ (১৬-৭-১৮৭৮ — ৩-৪-১৯৭৫) বগচর–যশোহর। গোরাচাঁদ। কোনও বিশ্ববিদ্যালয় বা বিদেশী ডিগ্ৰী দুরের কথা, এস্ট্রান্স পরীক্ষায় অকৃতকাৰ্য, সরকারী অফিসের পনের টাকা মাইনের সামান্য একজন কেরানী রাধাগোবিন্দ চন্দ্র এ-যুগের জ্যোর্তিবিজ্ঞান চর্চায় ভারতের অন্যতম পথিকৃৎ। যশোহর কালেক্টরেট-এর কেরানী রাত জেগে সামান্য তিন ইঞ্চি দূরবীন দিয়ে ৭-৬-১৯১৮ খ্রী. নতুন একটি নক্ষত্ৰ—‘অ্যাকুইলা-৩’ সমগ্র এশিয়া ভূখণ্ডে তিনিই প্রথম প্রত্যক্ষ করেন। জ্যোতিষ্কের গ্ৰহণ, উল্কা-জ্যোতির্বিজ্ঞানের এইসব নানা বিষয়ের মধ্যে তাঁর অধিকাংশ পর্যবেক্ষণই ছিল পরিবর্তনশীল তারা বা ভ্যারিয়েবল স্টার নিয়ে। আমেরিকার হার্ভার্ড মানমন্দির, লন্ডনের ব্রিটিশ অ্যাষ্ট্রোনমিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন, ফ্রান্সের লিয়ঁ মানমন্দিরের ন্যায় আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিজ্ঞানের পত্রিকায় তাঁর পর্যবেক্ষণ-বিষয় নিয়মিত প্ৰকাশিত হত। এইসব সংস্থার তিনি একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন। তাঁর গবেষণা কাজ ভেরিয়েবল স্টারের শ্রেণী বিভাগের সহায়ক ছিল। তাঁর কাজের সাহায্যের জন্য হারভার্ড মানমন্দির ১৯২৬ খ্রী. আমেরিকা থেকে সুদূর যশোহরের পল্লীতে তাকে একটি শক্তিশালী দূরবীণ উপহার পাঠিয়েছিল। তাঁর ব্যবহৃত এই দূরবীণটি বর্তমানে ঐতিহাসিক মূল্য সহকারে ভারতের অন্যতম বৃহৎ মানমন্দির কাভালুতে প্রতিষ্ঠিত আছে। ১৯২৮ খ্ৰী. ফরাসী সরকার অত্যন্ত সম্মানসূচক OARF উপাধি এবং একটি পদক প্ৰদান করে তাকে সম্মানিত করে। এদেশে পঞ্জিকা সংস্কার আন্দোলনেও তাঁর যথেষ্ট অবদান আছে। জ্যোতির্বিজ্ঞান বিষয়ক তাঁর প্রবন্ধাদি জ্ঞান ও বিজ্ঞান, প্রবাসী, দেশ প্রভৃতি পত্রিকায় প্রকাশিত হত। তাঁর রচিত ‘ধূমকেতু’ একমাত্র প্রকাশিত গ্ৰন্থ। ‘সৌরজগৎ’, ‘তারা চিনিবার উপায়’, ‘নক্ষত্র জগৎ’, ‘সবিতা ও ধরণী’ গ্রন্থগুলি এখনও পাণ্ডুলিপি আকারে রয়েছে। উত্তর বারাসতে অত্যন্ত অর্থকষ্টের মধ্যে তাঁর শেষ জীবন কেটেছে।
পূর্ববর্তী:
« রাধাগোবিন্দ কর, ডাঃ
« রাধাগোবিন্দ কর, ডাঃ
পরবর্তী:
রাধাগোবিন্দ নাথ, ড. বিদ্যাবাচস্পতি »
রাধাগোবিন্দ নাথ, ড. বিদ্যাবাচস্পতি »
Leave a Reply