রাজশেখর বসু, পরশুরাম (১৬-৩-১৮৮০ — ২৭-৪-১৯৬০) বীরনগর (উলা)-নদীয়া। দ্বারভাঙ্গা রাজ-এস্টেটের ম্যানেজার দার্শনিক পণ্ডিত চন্দ্ৰশেখর। ১৮৯৫ খ্রী তিনি দ্বারভাঙ্গা রাজস্কুল থেকে এস্ট্রান্স, ১৮৯৭ খ্রী. পাটনা কলেজ থেকে এফ.এ. এবং ১৮৯৯ খ্রী.কলিকাতা প্রেসিডেন্সী কলেজ থেকে রসায়ন ও পদার্থবিজ্ঞানে অনার্সসহ বি.এ পাশ করেন। তখনও এমএস-সি কোর্স চালু না হওয়ায় রসায়নে এম-এ পরীক্ষা দেন ও প্রথম হন (১৯০০)। ১৯০২ খ্রী. রিপন কলেজ থেকে বি.এল. পাশ করে কিছুদিন আইন ব্যবসা করেছেন। ১৯০৬ খ্রী. জাতীয় শিক্ষা পরিষদ গঠিত হলে তিনি তাতে সক্রিয় অংশ নিয়েছিলেন। ১৯০৩ খ্রী বেঙ্গল কেমিক্যাল অ্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যাল ওয়ার্কসে সামান্য বেতনে নিযুক্ত হয়ে স্বীয় দক্ষতায় অল্পদিনেই আচাৰ্য প্ৰফুল্লচন্দ্র ও তৎকালীন ম্যানেজিং ডিরেক্টর ডা. কার্তিক বসুর প্ৰিয়পাত্র হন। কালক্রমে উক্ত কোম্পানীর পরিচালক হন। একদিকে গবেষণার কাজ অন্যদিকে ব্যবসা পরিচালনা-উভয় ক্ষেত্রেই তিনি অসাধারণ দক্ষতার পরিচয় দেন। কেমিষ্ট্রি ও ফিজিওলজির মধ্যে যোগ স্থাপন করে তিনি এক নতুন পদ্ধতির উদ্ভাবন করেন। ১৯৩২ খ্রী. অবসর নিলেও উপদেষ্টা ও ডিরেক্টররূপে আমৃত্যু এই কোম্পানীর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।, নিয়মানুবর্তিতা ও সুশৃঙ্খল অভ্যাসের জন্য তাঁর জীবন-যাপন-পদ্ধতি কিংবদন্তীতে পরিণত হয়েছিল। বাংলা সাহিত্যে ‘পরশুরাম’ ছদ্মনামে রসরচনার জন্য তিনি খ্যাতিমান। তুলনায় বেশী বয়সে সাহিত্য-জীবন শুরু হলেও ‘গড্ডলিকা’, ‘কজ্জলী’ ও ;হনুমানের স্বপ্ন’ গ্ৰন্থ বাঙলার রসিক-মহলকে আলোড়িত করেছিল। রসরচনা ছাড়া ‘লঘুগুরু’, ‘বিচিন্তা’, ‘ভারতের খনিজ’, ‘কুটির শিল্প’ নামে প্ৰবন্ধ-গ্ৰস্থাদিও বিখ্যাত। ১৯৩৭ খ্রী. তাঁর অসামান্য কীর্তি বাংলা অভিধান চলন্তিক’ প্ৰকাশিত হয়। অনুবাদ-গ্ৰন্থ : ‘বাল্মীকি রামায়ণ’, ‘মহাভারত’, ‘মেঘদূত’, ‘হিতোপদেশের গল্প’ প্রভৃতি। মোট রচিত গ্রন্থের সংখ্যা ২১টি। সংখ্যা অপেক্ষা রচনার কারণে ও গুরুত্বে রাজশেখর স্মরণীয় পুরুষ। তিনি রবীন্দ্র পুরস্কার ও ‘আকাদেমী পুরস্কার’-প্রাপ্ত এবং ‘পদ্মভূষণ’ উপাধি-ভূষিত ছিলেন। ১৯৩৫ খ্রী. কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক গঠিত বানান-সংস্কার সমিতি এবং ১৯৪৮ খ্রী. পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পরিভাষা সংসদের সভাপতি ছিলেন। ১৯৫৭ — ৫৮ খ্ৰীঃ যথাক্রমে কলিকাতা ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ‘ডক্টরেট’ উপাধি ভূষিত করেন।
পূর্ববর্তী:
« রাজলক্ষ্মী সেন
« রাজলক্ষ্মী সেন
পরবর্তী:
রাজা বসু »
রাজা বসু »
Leave a Reply