রাজনারায়ণ বসু (৭-৯-১৮২৬ –- ১৮-৯-১৮৯৯) বোড়াল–চব্বিশ পরগনা। নন্দকিশোর। হেয়ার স্কুল ও হিন্দু কলেজের (১৮৪০–৪৩) খ্যাতনামা ছাত্র। অস্বাস্থ্যের জন্য কলেজ ত্যাগ করে উপনিষদের ইংরেজী অনুবাদকরূপে তত্ত্ববোধিনী সভায় ১৮৪৬ – ৪৯ খ্রী. কাজ করেন। ১৮৪৯ খ্রী. সংস্কৃত কলেজে ইংরেজী শিক্ষক এবং ১৮৫১ খ্রী. মেদিনীপুর জেলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক হন। ১৮৬৮ খ্রী. সরকারী কর্ম থেকে অবসর নেন। অন্যত্র পদোন্নতির সম্ভাবনা সত্ত্বেও প্রিয় কর্মকেন্দ্র মেদিনীপুর ত্যাগ করেন নি। এড়ুকেশন কাউন্সিল স্বীকার করেন, রাজনারায়ণের প্রভাবেই মেদিনীপুরের ছাত্ৰগণের প্রভূত উন্নতি সাধিত হয়। এখানে বিতর্কসভা প্রতিষ্ঠা করে ছাত্রদের মানসিক সৌকুমাৰ্য সাধনের চেষ্টা করেন। পাঠ্যপুস্তক ছাড়াও জ্ঞানার্জনের জন্য বাইরের বই পড়বার অভ্যাস করান। এই উদ্দেশ্যে একটি পাঠাগারও স্থাপিত হয়। শ্রমিক-কৃষকদের শিক্ষার জন্য একটি রাত্রিকালীন বিদ্যালয় এবং স্ত্রীশিক্ষার জন্য একটি বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। একজন দেশপ্রেমিক হিসাবে তিনি মনে করতেন, দেশীয় ভাষার চর্চা দ্বারাই দেশীয় সাহিত্যের উন্নতি সম্ভব। ধর্মমতে তিনি ব্ৰাহ্ম ছিলেন। জাতিবর্ণভেদ বিশ্বাস না করলেও সমাজে গভীর পরিবর্তনের বিরোধী ছিলেন। তাঁর পরিকল্পনায় উদ্দীপিত হয়ে নবগোপাল মিত্র হিন্দু মেলা সৃষ্টি করেন। ১৮৭৫ খ্রী. এই মেলার তিনি উদ্বোধক ছিলেন। হিন্দু মেলার পরে ন্যাশনাল সোসাইটি স্থাপিত হলে তিনি এখানে তিনটি নিবন্ধ পাঠ করেন। এই ন্যাশনাল সোসাইটির তত্ত্বাবধানে ন্যাশনাল স্কুল স্থাপিত হয় এবং সেখানে সার্ভে, ইঞ্জিনীয়ারিং, রসায়ন এবং সঙ্গীতের সঙ্গে ব্যায়াম, অশ্বারোহণ ও বন্দুক-চালনা শেখানো হত। বাঙালীরা যদি শিক্ষক, উকিল ও চাকুরের জাতিতে পরিণত হয় এবং ব্যবসায়-বাণিজ্য ত্যাগ করে—তবে জাতি দরিদ্রতর হবে—এ ছিল তাঁর বিশ্বাস। ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন স্থাপিত হলে তিনি তাঁর সভ্য হন এবং ১৮৭৮ খ্রী লিটনের দেশীয় ভাষা সংক্রান্ত আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে যোগ দেন। ‘সঞ্জীবনী সভা’ নামে গুপ্ত রাজনৈতিক সমিতি, প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি তার সভাপতি হন। রবীন্দ্ৰনাথ ও জ্যোতিরিন্দ্ৰনাথ তাঁর দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন। এই সভাকে অনেকে বাঙলার বিপ্লবী সংগঠনের ও ব্রিটিশের অধীনতামুক্ত জাতীয় চেতনা প্রসারের অগ্রদূত বলে মনে করেন। ‘ঋষি’ আখ্যায় অভিহিত বঙ্গ সংস্কৃতির একজন প্রধান পুরোধা রাজনারায়ণ এক সময়ে রবীন্দ্রনাথের গৃহশিক্ষকতাও করেছিলেন। তাঁর রচিত উল্লেখযোগ্য গ্ৰন্থ: ‘আত্মচরিত’, ‘সেকাল আর একাল’, ‘হিন্দু বা প্রেসিডেন্সী কলেজের ইতিবৃত্ত’, ‘সায়েন্স অফ রিলিজিয়ন’, ‘রিলিজিয়ন অফ লাভ’ প্রভৃতি। তিনি ইংরেজীতে ব্ৰাহ্মধর্ম এবং আদি ব্ৰাহ্মসমাজ সম্পর্কেও গ্ৰন্থ রচনা করেছেন। শেষ-জীবনে দেওঘরে বাস করতেন।
পূর্ববর্তী:
« রাজনারায়ণ বসু
« রাজনারায়ণ বসু
পরবর্তী:
রাজবল্লভ সেন, মহারাজ »
রাজবল্লভ সেন, মহারাজ »
Leave a Reply