রমেশচন্দ্র মজুমদার (৪-১২-১৮৮৮ –- ১২-২-১৯৮০) খণ্ডপাড়া-ফরিদপুর। প্ৰখ্যাত ঐতিহাসিক। দারিদ্র্যের মধ্যে শৈশব ও কৈশোর কেটেছে। কটকের র্যাভেনশ কলেজিয়েট স্কুল থেকে ১৯০৫ খ্রী. এস্ট্রান্স এবং রিপন কলেজ (বর্তমান সুরেন্দ্রনাথ কলেজ) থেকে ১৯০৭ খ্ৰী. প্রথম শ্রেণীর বৃত্তিসহ এফ.এ. পাশ করে প্রেসিডেন্সী কলেজে ভর্তি হন ও ১৯০৯ খ্রী. অনার্স সহ বি-এ, এবং ১৯১১ খ্রী. ১ম শ্রেণীতে ২য় হয়ে এমএ পাশ করেন। পরে ১৯১৩ খ্ৰী. গবেষণার জন্য প্রেমচাঁদ-রায়চাঁদ বৃত্তি পান। ঢাকার গভর্ণমেন্ট ট্রেনিং কলেজের লেকচারের কাজ দিয়ে অধ্যাপক জীবনের শুরু। ১৯১৪ খ্রী. থেকে সাত বছর কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে অধ্যাপনা করেন। ‘Corporate life in Ancient India’ নামক নিবন্ধ লিখে তিনি ডক্টরেট উপাধি পান। ১৯২১ খ্রী সদ্য প্রতিষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন। সেখানে অধ্যাপক, বিভাগীয় প্রধান, প্রভোষ্টি ও ১৯৩৭ খ্রী-থেকে পাঁচ বছর তাঁর উপাচাৰ্য পদে থেকে ১৯৪২ খ্রী. অবসর গ্রহণ করেন। ১৯৫০ খ্রী. থেকে দু’বছর কাশী বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ অব ইন্ডোলজির প্রিন্সিপাল ছিলেন। তিনি প্রথম গবেষণা শুরু করেন প্রাচীন ভারত নিয়ে। ১৯২৭ খ্রী ‘Outline of Ancient Indian History and civilisation’ এবং কিছুদিন পরে হিন্দু উপনিবেশের প্ৰথমখণ্ড ‘Champa’ প্রকাশ করেন। ১৯২৮ খ্ৰী উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য ইউরোপের বহু দেশে পড়াশুনা করেন ও ঘুরে দেখেন। দ্বীপময় ভারত পরিভ্রমণ করে। তিনি অনাবিষ্কৃত অথবা অব্যবহৃত বহু তথ্য সংগ্ৰহ করে দেশে ফিরে ১৯২৯ খ্রী. সুবর্ণ দ্বীপ ও পরে কম্বোজ সম্বন্ধে বিস্তৃত ইতিহাস লেখেন। কে. এম. মুন্সীর চেষ্টায় ১৯৩৮ খ্রী. প্রতিষ্ঠিত ভারতীয় বিদ্যাভবনের উদ্যোগে বিস্তৃতভাবে বহুখণ্ডে ভারতের পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস সম্পাদনার কাৰ্যভার গ্ৰহণ করেন। ১৯৫১ খ্রী. থেকে ছবিবশ বছর অক্লান্ত পরিশ্রমে তিনি একাদশ খণ্ডে বৈদিক ভারত থেকে স্বাধীন ভারত পর্যন্ত প্ৰায় তিন হাজার বছরের ভারতের জনগণের সামগ্রিক ইতিহাস পর্যালোচনা করেছেন এবং শ্রেষ্ঠ পণ্ডিতদের সর্বাধুনিক গবেষণালব্ধ ফল উপস্থাপনায় প্ৰয়াসী হয়েছেন। ‘হিষ্টি অ্যান্ড কালচার স্যার অব দি ইন্ডিয়ান পিপল’-এর শেষ খণ্ড ১৯৭৭ খ্রী. যখন প্ৰকাশিত হয় তখন তাঁর বয়স ৮৮। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিন খণ্ডে প্ৰকাশিত বঙ্গদেশের ইতিহাস সম্পাদনা করেন। তাঁর সর্বশেষ গ্ৰন্থ ‘জীবনের স্মৃতিদীপে। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস রচনার জন্য ভারত সরকার কর্তৃক গঠিত সম্পাদক মণ্ডলীর তিনি অন্যতম সদস্য ছিলেন। কিন্তু সিপাহী বিদ্রোহের ইতিহাস ব্যাখ্যা-প্রসঙ্গে তদানীন্তন শিক্ষামন্ত্রী আবুল কালাম আজাদের সঙ্গে মতবিরোধ হওয়ায় তিনি সরকারের কাজ ছেড়ে নিজেই বই প্ৰকাশ করেন—’দি সিপয় মিউটনি অ্যান্ড রিভোল্ট অব ১৮৫৭’। তাঁর মতে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের জনক ইংরেজী শিক্ষিত মধ্যবিত্ত এবং প্রথম স্বাধীনতা আন্দোলনের সূচনা ১৯০৫ খ্ৰী. বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন দিয়ে। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন সম্পর্কে তিনি ইংরেজিতে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন ‘হিস্ট্রি অব ফ্রিডম মুভমেন্ট’ গ্রন্থে।
পূর্ববর্তী:
« রমেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়
« রমেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়
পরবর্তী:
রমেশচন্দ্র সেন »
রমেশচন্দ্র সেন »
Leave a Reply