রমেশচন্দ্র দত্ত (১৩-৮-১৮৪৮ –- ৩০-১১-১৯০৯) রামবাগান-কলিকাতা। ঈশানচন্দ্ৰ। বিখ্যাত সাহিত্যিক, ঐতিহাসিক ও সিভিলিয়ান। ১৮৬৪ খ্ৰী. কলুটোলা ব্রাঞ্চ স্কুল থেকে এস্ট্রান্স, ১৮৬৬ খ্রী. প্রেসিডেন্সী কলেজ থেকে যথাক্রমে জুনিয়র ও সিনিয়র স্কলারশিপ নিয়ে এফ.এ. পাশ করেন। প্রেসিডেন্সী কলেজেই ৪র্থ বার্ষিক শ্রেণীতে উঠবার পর বিলাত যান। ১৮৬৯ খ্রী. সাফল্যের সঙ্গে আইসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন ও পরে ব্যারিস্টার হয়ে দেশে ফেরেন। একই সঙ্গে বিহারীলাল গুপ্ত ও সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ও আইসিএস হয়েছিলেন। বিভিন্ন উচ্চপদে চাকরি করে তিনি প্রভূত খ্যাতি অর্জন করেন। ১৮৮৩ খ্রী. প্ৰথম ভারতীয় জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট হন। ১৮৯৪–৯৭ খ্রী. প্ৰথম ভারতীয় অস্থায়ী বিভাগীয় কমিশনার ছিলেন। ভারতীয় বলেই উচ্চপদে স্থায়ী হতে পারছেন না অনুভব করে ১৮৯৭ খ্রী. পদত্যাগ করেন। তার দুই বছর আগে বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভার সদস্য হয়েছিলেন। অবসর নিয়ে বিলাত প্ৰবাসকালে তিনি লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস অধ্যাপনা এবং এই সঙ্গে ভারতীয় ইতিহাস ও অর্থনীতি সম্বন্ধে গবেষণা করেন। ১৯০৪ খ্রী. বরোদা রাজ্যের অর্থমন্ত্রিরূপে ভারতে ফেরেন এবং অল্প দিনেই দেওয়ান হন। আইসিএস, রূপে যখন যেখানে ছিলেন, সেখানকার প্রজাদের মঙ্গলসাধনে সচেষ্ট ছিলেন। ১৮৭৩–৭৪ খ্রী. পাবনায় প্ৰজাবিদ্রোহ শুরু হলে ভূমিতে প্ৰজার স্বত্ব নিরাপণের জন্য ‘ARCYDAE’ ছদ্মনামে ‘বেঙ্গল ম্যাগাজিন’ পত্রিকায় বহু ইংরেজী প্ৰবন্ধ প্ৰকাশ করেন। বিদ্যোৎসাহী প্ৰশাসক হিসাবেও খ্যাতি ছিল। দাদাভাই নৌরজী ও উমেশচন্দ্ৰ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ১৮৯৮ খ্রী. রাজনৈতিক আন্দোলনে যোগ দেন। পরের বছর লক্ষ্ণৌ কংগ্ৰেসে সভাপতিত্ব করেন। ১৯০৫ খ্রী. কংগ্রেস অধিবেশনের সঙ্গে স্বদেশী শিল্পের পুনরুজ্জীবন, উন্নতিসাধন এবং স্বদেশজাত দ্রব্যের ব্যবহার বিষয়ে যে শিল্প-সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় (৩১-৫-১৯০৫) তিনি সেই অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন। ১৯০৭ খ্রী. সুরাটে অনুষ্ঠিত ভারতীয় শিল্প-সম্মেলনেও সভাপতি ছিলেন। কারেন্সী কমিটিতে সাক্ষ্যদান করেন। ডি-সেন্ট্রালাইজেশন কমিশনের সদস্য (১৯০৭), বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের প্রথম সভাপতি ও পরে আজীবন সদস্য ছিলেন। ১৮৯২ খ্রী. সিআইই উপাধি পান। তিনিই সমগ্র ঋগ্বেদের প্রথম বঙ্গানুবাদক ও প্ৰকাশক। ইহা ৮ খণ্ডে প্ৰকাশিত (১৮৮৫)। তাঁর রচিত গবেষণামূলক ইতিহাসগ্রন্থ: ‘England and India-A Record of Progress during Hundred Years 1785-1885’। ‘The Peasantry of Bengal’ নামক বিখ্যাত গ্রন্থে কৃষক অভ্যুত্থানের কারণ নির্ণয় এবং ‘Famines and Land Assessments in India’ গ্রন্থে সরকার কর্তৃক ভূমিরাজস্বের অপব্যবহারের সমালোচনা করেন। ‘Economic History of British India’ গ্রন্থে ব্রিটিশ সরকারের ভারত-শোষণ-পদ্ধতি উদঘাটিত করে দেখান। এই বই সম্বন্ধে মন্তব্য : ‘Abook like this does more work than cartloads of Congress resolutions’। তাঁর ‘Civilisation in Ancient India’ একটি উল্লেখযোগ্য গবেষণা গ্ৰন্থ। উল্লেখযোগ্য বাংলা গ্ৰন্থ : ‘বঙ্গবিজেতা’, ‘মাধবীকঙ্কণ’, ‘মহারাষ্ট্র জীবনপ্রভাত’, ‘রাজপুত জীবনসন্ধ্যা’, ‘সংসার’, ‘সমাজ’ প্রভৃতি। তিনি স্কুলের উপযোগী করে বাঙলাদেশ ও ভারতবর্ষের ইতিহাসও লিখেছিলেন। এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকাতেও (১৯০২) তাঁর লেখা কয়েকটি প্ৰবন্ধ আছে। তাঁর কৃত ‘মাধবীকঙ্কণ’ ও ‘সংসার’ উপন্যাস দুটির ইংরেজী অনুবাদ ‘Slave Girl of Agra’ এবং ‘Lake of Palms’ বিলাতে খুব বিক্ৰী হত। তিনি বিধবা ও অসবর্ণ বিবাহের পক্ষপাতী ছিলেন। বিরোদায় প্রধান রাজমন্ত্রী থাকাকালে তাঁর মৃত্যু।
পূর্ববর্তী:
« রমেশচন্দ্র দত্ত
« রমেশচন্দ্র দত্ত
পরবর্তী:
রমেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় »
রমেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় »
Leave a Reply