যোগেশচন্দ্ৰ চট্টোপাধ্যায় (১৮৯৫ – ২২-৪-১৯৬৯) গাওদিয়া—ঢাকা। বিপিনচন্দ্র। কুমিল্লায় অনুশীলন দলের পূর্ণ চক্রবর্তীর প্রভাবে এই গুপ্ত বিপ্লবী দলের সদস্য হন। ১৯১৩ খ্রী. কুমিল্লায় বঙ্গীয় প্রাদেশিক রাজনৈতিক সম্মেলনে স্বেচ্ছাসেবকরূপে সরকারী আদেশ অমান্য করেন। ১৯১৪ খ্রী. বিশ্বযুদ্ধের পটভূমিকায় ভারতে বিপ্লবী অভ্যুত্থানের একটি অংশরূপে চট্টগ্রাম, নোয়াখালী। ও ত্রিপুরা অঞ্চলে বিদ্রোহ ঘটানোর চেষ্টায় অংশ নেন। ৯-১০-১৯১৬ খ্রী। তিনি কলিকাতায় গ্রেপ্তার হন। ইতিমধ্যে ঢাকা ভিক্টেরিয়া স্কুল থেকে প্রবেশিকা পাশ করে কলেজে পড়ছিলেন। গ্রেপ্তার হয়ে পুলিসের অকথ্য অত্যাচার সহ্য করেন। ১৯২০ খ্রী. মুক্ত হয়ে কংগ্রেসের কলিকাতা সম্মেলনে যোগ দেন। ১৯২২ খ্রী. কয়েকজন বিপ্লবী বন্ধুর সঙ্গে একটি ‘শ্রমিক আবাস’ গঠন করেন এবং একটি রোটারী দেশলাই প্ৰস্তুত কল নির্মাণ করে দেশলাই ও কল বিক্রির চেষ্টা করেন। কুমিল্লার বিখ্যাত ব্যবসায়ী মহেশ ভট্টাচার্যের সাহায্যে ক্রমে এটি একটি বৃহৎ প্রতিষ্ঠান হয়ে ওঠে। ১৯২৩ খ্রী. দলের নির্দেশে প্ৰথমে আসাম ও পরে উত্তর প্রদেশে গিয়ে সংগঠন দৃঢ় করে তিনি মাদ্রাজে মানবেন্দ্রনাথ রায়ের দূতের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কলিকাতায় ফিরতেই ১৮-১০-১৯২৪ খ্রী. গ্রেপ্তার হন। উত্তরপ্রদেশে তাঁর দলভুক্ত হয়েছিলেন। ভগৎ সিং, বটুকেশ্বর দত্ত ও অজয় ঘোষ। ১৯২৫ খ্রী. কাকোরী ষড়যন্ত্র মামলা চলা কালে লক্ষ্ণৌ জেলে স্থানান্তরিত হন। দেড় বছর মামলা চলার সময় জেলে খাদ্য-ব্যবস্থার প্রতিবাদে অনশন শুরু করেন এবং রাজনৈতিক বন্দীর মর্যাদা পাবার পর অনশন ত্যাগ করেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত ‘হিন্দুস্থান রিপাবলিকান অ্যাসোসিয়েশন’ পরে ‘হিন্দুস্থান সোশ্যালিস্ট রিপাবলিকান আর্মি’ নামে উত্তর ভারতে দুঃসাহসিক কার্যাবলীর জন্য বিখ্যাত হয়। ৬-৪, ১৯২৭ খ্রী. কাকোরী ষড়যন্ত্র মামলায় তাঁর দ্বীপান্তর হয়। মামলার রায়-দানের দিন থেকে তিনি এবং অপর ৪ জন ৪২ দিন অনশন করেছিলেন। ১১-৭-১৯৩৪ খ্রী. থেকে ২৯-১১-১৯৩৪ খ্ৰী জীবনের দীর্ঘতম অনশন করেন আগ্রা জেলে। এই অনশনের ফলে সরকার দাবি মানার অঙ্গীকার করেও ইচ্ছাকৃতভাবে পালন না করায় রাজবন্দীদের বিভিন্ন দাবির ভিত্তিতে ১-১০-১৯৩৫ খ্রী. থেকে ১১১ দিন অনশন করে তিনি ২৪-৮-১৯৩৭ খ্রী. মুক্তি পান। ১৩ বছর জেলে থাকার ফলে তিনি দল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান। এরপর ২-১২-১৯৩৭ খ্রী. চীফ কমিশনারের দিল্লীত্যাগের আদেশ অমান্য করায় গ্রেপ্তার হন। এইসময়ে বাঙলার মুসলিম লীগ সরকারও তাকে বাঙলা থেকে বহিষ্কারের আদেশ জারী করে। মানভূমের নেতা রাঘবাচারিয়ার সহায়তায় ১৯৪০ খ্রী. মাক্সীয় দর্শনে বিশ্বাসী বিপ্লবী দল গঠন করে পার্টির গঠনতন্ত্র প্রস্তুতি কমিটির কনভেনর হন। দলের নাম হয় ‘রিভিলিউশনারী সোশ্যালিস্ট পার্টি’ (R.S.P.)। বিপ্লবী কাৰ্যকলাপে তাঁর সঙ্গে সুভাষচন্দ্রের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। ঐ বছরই পুনরায় গ্রেপ্তার হন ও অনশন করে ৬-১১-১৯৪১ খ্রী. মুক্তি পান। তিনি লক্ষ্ণৌতে টাকা ধার করে জীবন-ধারণের জন্য লণ্ড্রী খোলেন। ১৯৪৩ খ্রী.এক সাবইনস্পেক্টর হত্যা-প্রচেষ্টার মামলায় তাকে প্রধান আসামী করা হয় এবং তিনি ৭ বছর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন। অবশেষে ১৬-১-১৯৪৬ — ৬-২-১৯৪৬ খ্রী পর্যন্ত চূড়ান্ত পর্যায়ে অনশন ধর্মঘট করেন এবং নেহেরুর ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় ও সমর্থনীসূচক বিবৃতিদানের ফলে ধর্মঘট তুলে নেন। ১৭৪-১৯৪৬ খ্রী. মুক্তি পেয়ে আরএসপি দলের সংগঠনের কাজে হাত দেন। ১৯৩৮/৩৯ খ্রী. কংগ্রেস সোশালিস্টরূপে কৃষক-শ্রমিক সংগঠনের চেষ্টা করেছিলেন। ১৯৩৯ খ্রী. তিনি উত্তরপ্রদেশ কিষাণসভার সভাপতি ছিলেন। ১৯৫৩ খ্রী. আরএসপি-র সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে বাধ্য হন। তাঁর উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক তৎপরতা-১৩ ও ১৪ ডিসেম্বর ১৯৫৮ খ্ৰী দলমত-নির্বিশেষে পুরানো বিপ্লবীদের সর্বভারতীয় সম্মেলন আহ্বান। এই সম্মেলনে ড. ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত সভাপতি এবং যোগেশচন্দ্ৰ আহ্বায়ক ছিলেন। এখানে উপস্থিত ব্যক্তিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য—বারীন ঘোষ, বাবা সোহন সিং ভাকনা, ড. খানখোজে, ড. ভগবান সিং, ড. ডি. ডি. অঠল্য প্রভৃতি। আর এস. পি. ত্যাগের পর ১৯৫৫ খ্রী. পুনরায় কংগ্রেসে যোগ দিয়ে পরে সরে দাঁড়ান। বিপ্লবী জীবনের ঘটনাবলী নিয়ে তাঁর রচিত গ্রন্থ: ‘In Search of Freedom’।
পূর্ববর্তী:
« যোগেশচন্দ্ৰ ঘোষ
« যোগেশচন্দ্ৰ ঘোষ
পরবর্তী:
যোগেশচন্দ্ৰ চৌধুরী »
যোগেশচন্দ্ৰ চৌধুরী »
Leave a Reply