যদুনাথ ভট্টাচাৰ্য বা যদুভট্ট (১৮৪০ — ১৮৮৩) বিষ্ণুপুর-বাঁকুড়া। পিতা মধুসূদন ছিলেন ঐ অঞ্চলের প্ৰসিদ্ধ সঙ্গীতজ্ঞ ও সেতার, সুরবাহার প্রভৃতি যন্ত্রবাদক শিল্পী। পিতারকাছে প্রথমে সেতার, সুরবাহার পাখোয়াজ শেখেন। তাঁর সুমধুর কণ্ঠস্বরে আকৃষ্ট হয়ে বৃদ্ধ আচার্য রামশঙ্কর তাকে গান শেখাতে থাকেন। পড়াশুনায় আগ্রহ ছিল না। আচার্যের মৃত্যুর পর ১৫ বছর বয়সে গান শেখার জন্য গৃহত্যাগ করে কলিকাতায় আসেন। শুধু গান শেখা নয়, জীবনধারণের জন্য পাচকের কাজ পর্যন্ত করে তৎকালীন বিখ্যাত শিল্পী গঙ্গানারায়ণ চট্টোপাধ্যায়ের আশ্রয় লাভ করেন। তাঁর শিক্ষাধীনে তিনি খাণ্ডারবাণী ধ্রুপদ শিখতে থাকেন। পরে পশ্চিমাঞ্চলে যান। নানা গুণীর কাছে শিখে নানা সভায় সঙ্গীত পরিবেশন করেন। এইভাবে নানা ঘরানার কলা আয়ত্ত করে কলিকাতায় ফেরেন। তাঁর গানে যেমন ছিল বৈচিত্ৰ্য, তেমনই ছিল সৌন্দর্য। পশ্চিমী চালে ধ্রুপদ যেমন গাইতেন, তেমনই গাইতেন স্বরচিত বাংলা ধ্রুপদ।। বাংলায় নানা দরবারে থেকেছেন, গান গেয়েছেন ও শিখিয়েছেন। রবীন্দ্রনাথ কিছুদিন তাঁর কাছে মাৰ্গ সঙ্গীত শিখেছেন। বঙ্কিমচন্দ্রও তাঁর সঙ্গীত-শিষ্য হয়েছিলেন এবং তিনিই বঙ্কিমচন্দ্রের ‘বন্দেমাতরম’ সঙ্গীতের প্রথম সুর-সংযোজক। ব্ৰাহ্মসমাজ মন্দিরেও গান গেয়েছেন। ত্রিপুরার মহারাজা বীরচন্দ্রমাণিক্যের সভা-গায়ক ছিলেন। তাঁর বহু শিষ্য পরবর্তী জীবনে বিখ্যাত হয়েছেন। রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন—’তাঁর রচিত গানের মধ্যে যে বিশিষ্টতা ছিল তা অন্য কোন হিন্দুস্থানী গানে পাওয়া যায় না। যদুভট্টর মত সঙ্গীত-ভাবুক আধুনিক ভারতে আর কেউ জন্মেছেন কিনা সন্দেহ। অসাধারণ শ্রুতিধর ছিলেন। তাঁর জীবনের ঘটনা এখন কিংবদন্তীতে পরিণত। তাঁর রচিত বাংলা ও হিন্দী গানগুলি ‘সঙ্গীত মঞ্জরী’ গ্রন্থে এবং কয়েকটি গানের পরিচয় রমেশচন্দ্ৰ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘বিষ্ণুপুর’ গ্রন্থে প্রকাশিত হয়েছে।
পূর্ববর্তী:
« যদুনাথ পালিত
« যদুনাথ পালিত
পরবর্তী:
যদুনাথ মজুমদার, রায়বাহাদুর »
যদুনাথ মজুমদার, রায়বাহাদুর »
Leave a Reply