যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্ত ১ (২২-২-১৮৮৫ –- ২৩-৭-১৯৩৩) বরমা-চট্টগ্রাম। চট্টগ্রামের বিশিষ্ট আইনজীবী ও বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক পরিষদের সদস্য যাত্রামোহন। তিনি ১৯০২ খ্রী. প্ৰবেশিকা পাশ করে ১৯০৪ খ্রী. বিলাত যান। ১৯০৮ খ্রী. কেমব্রিজ থেকে বি-এ পাশ করেন এবং ১৯০৯ খ্রী. ব্যারিস্টার হন। ঐ বছরই নেলী গ্রে নামে একজন ইংরেজ মহিলাকে বিবাহ করেন। ১৯১০ খ্রী. কলিকাতা হাইকোর্টে যোগ দিয়ে। ক্ৰমে বিখ্যাত আইনজীবিরূপে পরিগণিত হন। ১৯১২ খ্রী. এবং ১৯২২ খ্রী. চট্টগ্রামে প্ৰাদেশিক রাষ্ট্ৰীয় সমিতির অধিবেশনে অভ্যর্থনা সমিতির সভাপতি ছিলেন। ১৯২১ খ্ৰী. অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দিয়ে ব্যারিস্টারী ত্যাগ করেন। এই বছরই বৰ্মা অয়েল কোম্পানী (চট্টগ্রাম) ও আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে ধর্মঘট পরিচালনা করে সস্ত্রীক কারাদণ্ড ভোগ করেন। এই ঐতিহাসিক শ্রমিক ধর্মঘটই শ্রমিক আন্দোলনের অন্যতম পথপ্ৰদৰ্শক। ধর্মঘটীদের পরিবার প্রতিপালনের জন্য তিনি ৪০ হাজার টাকা ঋণ। করে দেশবাসীর কাছ থেকে ‘দেশপ্ৰিয়’ উপাধি পান। ১৯৩০ খ্রী. ভারতবর্ষ থেকে ব্ৰহ্মদেশকে বিচ্ছিন্ন করার প্রতিবাদে রেঙ্গুনে বক্তৃতা দেবার জন্য পুনরায় গ্রেপ্তার হন। ১৯২২ – ২৩ খ্রী. কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য ছিলেন। এরপর দেশবন্ধুর ‘স্বরাজ্য পার্টি’তে যোগ দেন। ১৯২৩ খ্রী. চট্টগ্রাম থেকে বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক পরিষদে নির্বাচিত হন। পাঁচবার কলিকাতার মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। দেশবন্ধুর মৃত্যুর পর ১৯২৯ খ্রী. পর্যন্ত বঙ্গীয় প্রাদেশিক রাষ্ট্ৰীয় সমিতির সভাপতি ছিলেন। ১৯২৮ খ্রী. কলিকাতা কংগ্রেস অধিবেশনে জওহরলাল নেহেরু, সুভাষচন্দ্ৰ বসু প্রমুখ ব্যক্তিদের উত্থাপিত পূর্ণ স্বাধীনতা প্রস্তাবের পাশাপাশি গান্ধীজী, মতিলাল নেহরু প্রভৃতির ঔপনিবেশিক স্বায়ত্তশাসনের প্রস্তাব রাখা হলে যতীন্দ্রমোহনের প্রচেষ্টায় দ্বিতীয় প্রস্তাবটি গৃহীত হয়। ২৬-১-১৯৩০ খ্রী. কলিকাতা কর্পোরেশন বিল্ডিং-এ জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেছিলেন। ১৯৩১ খ্রী. চট্টগ্রামের বন্যায়, ১৯২৬ খ্রী. কলিকাতায় ও ১৯৩১ খ্রী চট্টগ্রামের সাম্প্রদায়িক হাঙ্গামায় তিনি সর্বত্ৰ ত্ৰাণকার্যের পুরোভাগে ছিলেন। চিত্তরঞ্জন পরিচালিত ফরওয়ার্ড পত্রিকার সঙ্গে তাঁর যোগ ছিল। নিজেও ‘অ্যাডভান্স’ নামে একটি ইংরেজী দৈনিক পত্রিকা প্ৰকাশ করেন। জালিয়ানওয়ালাবাগে আপত্তিকর বক্তৃতার জন্য কারারুদ্ধ হন। কারামুক্তির পর গোলটেবিল বৈঠকে যোগদানের জন্য বিলাত যান। ফেরবার পথে ১৯৩২ খ্রী. জাহাজে গ্রেপ্তার হন। প্ৰথমে যার বেদা জেলে ও পরে দাৰ্জিলিং ও রাঁচিতে তাঁকে বন্দী করে রাখা হয়। রাঁচিতেই মারা যান।
যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্ত ২ (১৮৮০ — ১৯৫২) সেনহাটী-খুলনা। মনোমোহন কবিরত্ন। শিক্ষক ও সাহিত্যিক। ১৯০০ খ্রী. সেনহাটী স্কুল থেকে এন্ট্রান্স পাশ করে বরিশাল ব্ৰজমোহন কলেজে চার বছর পড়েন। এখানে দেশনায়ক অশ্বিনীকুমার দত্ত ও আচার্য জগদীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের সান্নিধ্যে আসেন ও তাদের আদর্শে অনুপ্রাণিত হন। ১৯০৪ খ্ৰী. বি.এ. পরীক্ষায় অকৃতকাৰ্য হন। পরে ১৯১৮ খ্ৰী. বি.এ. পাশ করেন। ১৯০৭ খ্রী. থেকে ২০ বছর তিনি সেনহাটী স্কুলের ইংরেজীর শিক্ষক ও ১৯২৭ থেকে ১৯৩৫ খ্রী. খুলনার মহেশ্বরপাশা হাইস্কুলের প্রধানশিক্ষক ছিলেন। অশ্বিনীকুমার দত্তের ছাত্র সেবা সঙ্ঘের অনুকরণে তিনি সেবাসমিতি গঠন করেছিলেন। তাঁর রচিত গল্পগ্রন্থ: ‘দুর্বদল’, ‘বিল্বদল’ ও ‘পুষ্পদল’। ‘নন্দন পাহাড়’, ‘অশ্রুময়’, ‘গৌরী’ তাঁর তিনখানি উপন্যাস। ‘বিল্বদল’ গ্রন্থের কয়েকটি গল্প জার্মান ভাষায় অনূদিত হয়েছে।
পূর্ববর্তী:
« যতীন্দ্রমোহন সিংহ
« যতীন্দ্রমোহন সিংহ
পরবর্তী:
যতীন্দ্রলোচন মিত্র »
যতীন্দ্রলোচন মিত্র »
Leave a Reply