যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়, বাঘা যতীন (৮-১২-১৮৭৯ –- ১০-৯-১৯১৫) রিশখালি–যশোহর। উমেশচন্দ্ৰ। ১৮৯৮ খ্রী. কৃষ্ণনগর এ. ভি. স্কুল থেকে প্রবেশিকা পাশ করেন। কলিকাতা সেন্ট্রাল কলেজে এফ-এ পড়া ছেড়ে শর্টহ্যান্ড ও টাইপরাইটং শেখেন। কর্মজীবনের সূচনায় Amhuty co-তে ও পরে মজঃফরপুরে কেনেডি সাহেবের স্টেনোগ্রাফার হন। তারপর বেঙ্গল সেক্রেটারিয়েটে কাজ নিয়ে কলিকাতায় আসেন। বাঙলা সরকারের দুই সেক্রেটারী হুইলার এবং ওমালীর স্টেনো ছিলেন। এই কাজ করবার সময় ১৯০৭ খ্রী. কুষ্টিয়ায় একবার ছোরা হতে একটি বাঘ মারেন বলে ‘বাঘা যতীন’ নামে পরিচিত হন। ১৯০৩ খ্রী. অরবিন্দ ঘোষ ও যতীন্দ্ৰনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সংস্পর্শে এসে বৈপ্লবিক কাজে উব্ধুদ্ধ হন। ১৯০৬ খ্রী. কলিকাতা কংগ্রেসের সময় যখন নিখিলবঙ্গ বৈপ্লবিক সম্মেলন হয়েছিল, তখন তিনি তার প্রতিনিধি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন। বিপ্লবী কানাইলাল দত্তের ফাঁসির পর বারীন্দ্ৰকুমার প্রমুখ বিপ্লবী আন্দোলন থেকে সরে দাড়াতে চাইলে অবশিষ্ট বিপ্লবীদের সংগঠিত করে তিনি নেতৃত্ব দিতে থাকেন। ১৯১০ খ্রী. হাওড়া ষড়যন্ত্র মামলায় কারারুদ্ধ হয়ে বিচারে খালাস পান (১৯১১)। পরে ঠিকাদারীর কাজ নিয়ে যশোহর, ঝিনাইদহ প্রভৃতি অঞ্চলে ঘুরতে থাকেন। ১৯১৪ খ্রী. বিশ্বযুদ্ধ আরম্ভ হবার সময় থেকে তাঁর ওপর যুগান্তর সমিতির প্রধান দায়িত্ব ন্যস্ত হয়। এরপর থেকেই তিনি সর্বভারতীয় বৈপ্লবিক দলগুলির যোগাযোগে জাপান ও জার্মানি থেকে অস্ত্ৰ আমদানী করে সশস্ত্ৰ বিপ্লবের পরিকল্পনা করেন। স্থির হয় তিনি জার্মান জাহাজ ‘মেভারিক’ থেকে অস্ত্ৰ নিয়ে বালেশ্বর রেললাইন অধিকার করে ইংরেজ সৈন্যদের কলিকাতা যাবার পথ বন্ধ করবেন। কিন্তু পুলিস সমস্ত পরিকল্পনা জানতে পেরে ৯-৯-১৯১৫ খ্রী. বিরাট বাহিনী নিয়ে যতীন্দ্রনাথ এবং তাঁর চারজন অনুচরকে ঘেরাও করে ফেলে। এইসময় তিনি অনুচরদের সঙ্গে পরামর্শ করে ট্রেঞ্চের মধ্যে থেকে বীর্য-বিক্রমে সম্মুখ-যুদ্ধ আরম্ভ করেন। ট্রেঞ্চ খুঁড়ে বাঙালীর এই প্রথম যুদ্ধ। এই যুদ্ধে ঘটনাস্থলেই নিহত হন চিত্তপ্রিয় রায়চৌধুরী। যতীন্দ্রনাথ নিজে গুরুতরভাবে আহত হয়ে পরদিন বালেশ্বর হাসপাতালে মারা যান। অপর অনুচর মনোরঞ্জন সেনগুপ্ত ও নীরেন দাশগুপ্তর ফাঁসী ও জ্যোতিষ পালের ১৪ বছরের জেলা হয়। শেষোক্ত জন পুলিসের অত্যাচারে উন্মাদ হয়ে গিয়ে ১৯২৪ খ্ৰী. কারাগারেই মারা যান। বুড়িবালামের তীরের এই যুদ্ধটি ইতিহাসে এখনও ‘কোপতিপোদার যুদ্ধ’ নামে বিখ্যাত। এই বিপ্লবীর মৃত্যুর সময় কলিকাতার দুর্ধর্ষ পুলিস কমিশনার চার্লস টেগার্ট অবনত মস্তকে তাকে সম্মান জানিয়েছিলেন। একটি সর্বভারতীয় বিপ্লব সংগঠনের নেতৃত্ব দেবার মত আশ্চর্য ব্যক্তিত্ব তাঁর ছিল। এই বিপ্লবী প্ৰচেষ্টায় তাঁর অন্যতম সহকর্মী ছিলেন উত্তর ভারতের ভারপ্রাপ্ত মহাবিপ্লবী রাসবিহারী বসু।
পূর্ববর্তী:
« যতীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য
« যতীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য
পরবর্তী:
যতীন্দ্রনাথ মৈত্র »
যতীন্দ্রনাথ মৈত্র »
Leave a Reply