যতীন্দ্ৰনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় বা নিরালম্ব স্বামী (১৯-১১-১৮৭৭ – ৫-৯-১৯৩০) চান্না-বর্ধমান। কালিদাস। সরকারী চাকুরে পিতারসন্তান। বাল্যকালে দুরন্ত প্রকৃতির ছিলেন এবং পড়াশুনায় মন ছিল না। তাঁকে সুশীল-সুবোধ করবার জন্য এক সাধুর কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। সাধুটি নিজেকে ‘অ-বন্দুকবিদ্ধ’ প্রচার করায় বালক যতীন্দ্রনাথ লুকিয়ে পিতারপিস্তল নিয়ে গুলি করে সাধুকে পরখ করতে চান। এইভাবেই সারাজীবন পরীক্ষার মধ্য দিয়ে সব জিনিস বুঝতে চেয়েছেন। এফ.এ. পর্যন্ত পড়েন। হিরন্ময়ী দেবীর সঙ্গে বিবাহ হয়। স্ত্রীও পরে সন্ন্যাস গ্ৰহণ করে চিন্ময়ী দেবী নামে পরিচিতা হন। অসীম বলশালী যতীন্দ্রনাথ সৈনিক হবার আশায় ঘরছাড়া হয়ে এলাহাবাদে কায়স্থ পাঠশালায় ‘প্রবাসী’র সম্পাদক রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়ের কাছে হিন্দী শেখেন এবং সৈন্যদলে ঢোকার জন্য দেশীয় রাজ্যের দরজায় দরজায় ঘুরতে থাকেন। বরোদারাজের প্রাইভেট সেক্রেটারী অরবিন্দ ঘোষের সাহায্যে ভোল বদল করে ‘যতীন্দর উপাধ্যায়’ নাম নিয়ে ১৮৯৭ খ্রী. বরোদার সৈন্যদলে যোগ দিয়ে ঘোড়সওয়ার সৈন্য থেকে মহারাজের দেহরক্ষী হন। পরে অরবিন্দ তাকে বৈপ্লবিক কাজে উদ্ধৃদ্ধ করে বাঙলায় পাঠান। ১৯০২ খ্ৰী. বরোদা থেকে কলিকাতায় এসে ১০৮ সাকুলার রোডে এক বিপ্লবী কেন্দ্ৰ গড়ে তোলেন। ভগিনী নিবেদিতা এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পরবর্তীকালের বিখ্যাত বিপ্লবী-নায়কগণের প্ৰায় সকলেই এখানে পাঠ নিতেন। সখারাম গণেশ পড়াতেন। অর্থনীতি, পি, মিত্ৰ ইতিহাস এবং যতীন্দ্রনাথ রণনীতি। ‘ভারতী’ পত্রিকায় তিনি ইটালীর বিপ্লব বিষয়ে ধারাবাহিক প্ৰবন্ধ লিখতেন। ১৯০৩ খ্রী. যোগেন্দ্ৰ বিদ্যাভূষণের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ হয়। বিদ্যাভূষণের বাড়িতেই তারা ললিতচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ও বাঘা যতীনের সঙ্গে পরিচিত হন। বারীন ঘোষ এই সময় সাকুলার রোডের আড্ডায় যোগ দেন। বঙ্গের সর্বত্র এবং বিহার ও ওড়িশায় দলের শাখা বিস্তার লাভ করে। ১৯০৬ খ্রী. তিনি দেশ-পৰ্যটনে বেরিয়ে পাঞ্জাবে যান। এখানে একটি দেশপ্রেমিক অনুরক্ত দল পেয়েছিলেন। তারা হলেন বিপ্লবী অজিত সিং, সর্দার কিষণ সিং (ভগৎ সিংয়ের পিতা), লালা হরদয়াল, লালা অমরদাস, ওবেদুল্লা সিন্ধি, পেশোয়ারের ডা: চারু ঘোষ, আম্বালার ডা: হরিচরণ মুখোপাধ্যায় প্রভৃতি। এই বছরই তিনি সোহহং স্বামীর গুরু তিব্বতী বাবার কাছে সন্ন্যাস গ্ৰহণ করে নাম নেন। ‘নিরালম্ব স্বামী’। ১৯০৭ খ্রী. ‘সন্ধ্যা’ পত্রিকার সম্পাদক ব্ৰহ্মবান্ধব মারা গেলে তিনি কলিকাতায় কাগজের ভার নিয়ে ‘মরি নাই-আমি আসিয়াছি’ নামে এক জোরালো প্ৰবন্ধ লেখেন। ‘সন্ধ্যা’র পরিচালকগণ এই গরম রাজনীতি পছন্দ করেন নি। মতান্তরের জন্য তিনি অন্নদা কবিরাজের বাড়িতে ওঠেন। সেখান থেকে বন্দেমাতরম পত্রিকার নিখিল রায় মৌলিক, কার্তিক দত্ত, কিরণ মুখোপাধ্যায় প্রমুখের সঙ্গে সাময়িক যোগাযোগ ঘটে। এরপর মায়ের ডাকে স্বগ্রামে ফিরে গ্ৰাম্য শ্মশানের ধারে আশ্রম করে বাস করতে থাকেন। ১৯০৮ খ্রী. মজঃফরপুর বোমার ঘটনায় তিনি ধৃত হন। কিন্তু প্রমাণাভাবে মুক্তি পান। বাঘা যতীন বিপ্লবী কাজে তাঁর পরামর্শ নিতেন। যতীন্দ্রনাথকে বাঙলার বিপ্লবীদের ব্ৰহ্মা বলা হয়।
পূর্ববর্তী:
« যতীন্দ্ৰনাথ ঘোষাল
« যতীন্দ্ৰনাথ ঘোষাল
পরবর্তী:
যতীন্দ্ৰনাথ রায়, কানু »
যতীন্দ্ৰনাথ রায়, কানু »
Leave a Reply