মেঘনাদ সাহা, ড. (৬-১০-১৮৯৩ – ১৬-২-১৯৫৬) সেওড়াতলী-ঢাকা। জগন্নাথ। বিশিষ্ট বিজ্ঞানী, শিক্ষাবিদ ও দেশসেবক। দরিদ্র পিতার সন্তান। কষ্টে পড়াশুনা করেন। ১৯০৫ খ্রী. ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলে ভর্তি হন। বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের প্রতিবাদ-সভায় যোগ দেওয়ার জন্য স্কুল থেকে বিতাড়িত হয়ে জুবিলী স্কুলে আসেন এবং এখানে বিনা ব্যয়ে পড়ার সুযোগ পান। একটি খ্রিষ্টান মিশনের পরীক্ষায় বয়োজেষ্ঠ ছাত্রদের পরাজিত করে ১০০ টাকা পুরস্কার লাভ করেন। ১৯০৯ খ্ৰীঃ পূর্ববঙ্গের ছাত্রদের মধ্যে প্রথম এবং অঙ্কসমেত চার বিষয়ে সকল পরীক্ষার্থীর মধ্যে প্ৰথম স্থান অধিকার করে এন্ট্রান্স পাশ করেন। ঢাকা কলেজ থেকে আইএস-সি-তে তৃতীয়, কলিকাতা প্রেসিডেন্সী কলেজ থেকে ১৯১৩ খ্রী. গণিতে অনার্সসহ বিএস-সি-তে দ্বিতীয় এবং ১৯১৫ খ্রী. এম-এস-সি. পরীক্ষায় ফলিত গণিতে প্ৰথম শ্রেণীতে দ্বিতীয় হন। এ বছরের ছাত্রদলের মধ্যে সত্যেন বসু, জ্ঞান ঘোষ, জে. এন. মুখার্জী, নিখিল সেন প্রমুখ বিখ্যাত বৈজ্ঞানিকবৃন্দ ছিলেন। এই সময় বাঘা যতীন, পুলিন দাস প্রভৃতি বিপ্লবীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার অপরাধে তিনি ফিনান্স পরীক্ষা দেওয়ার অনুমতিলাভে বঞ্চিত হন। কয়েক বছর অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকার পর ১৯১৮ খ্রী. নবগঠিত বিজ্ঞান কলেজে অধ্যাপনার কাজ পান। এখানে গবেষণা করে পর পর দুই বছরে ডিএস-সি, ও পি.আর.এস হন। গবেষণার বিষয় ছিল রিলেটিভিটি, প্রেসার অফ লাইট ও অ্যাষ্ট্রোফিজিক্স। এরপর ১৯২০ খ্রী. ‘থিওরি অফ থার্মাল আয়নিজেশন’ বিষয়ে গবেষণার জন্য আন্তর্জাতিক খ্যাতি ও পরিচিতি পান। গবেষণা দ্বারা তিনি যে তত্ত্ব আবিষ্কার করলেন সেটি বীক্ষণাগারে ব্যবহারিক প্রয়োগ প্ৰদৰ্শনের আমন্ত্রণ পেলেন লন্ডন ও বার্লিন থেকে। দুই বছর পর ভারতে ফিরে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিক্স বিভাগে প্ৰথম ‘খয়রা অধ্যাপক’ নিযুক্ত হন। ১৯২৩ খ্রী. এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন এবং সেখানে ১৫ বছর কাজ করে ‘স্কুল অফ ফিজিক্স’ নাম দিয়ে পদার্থবিদ্যার শিক্ষাকেন্দ্ৰ ও গবেষণাগার গড়ে তোলেন। শিক্ষক হিসাবে তিনি পৃথিবীজোড়া খ্যাতি পেয়েছেন। তাঁর সম্পর্কে আইনস্টাইন বলেন, ‘Dr. M. N. Saha has won an honoured name.’। ১৯৩৮ খ্রী কলিকাতায় এসে বিজ্ঞান কলেজের পালিত অধ্যাপক হন ও পরে গড়ে তোলেন ‘ইনস্টিটিউট অফ নিউক্লিয়ার ফিজিক্স’ (বর্তমানে তাঁর নামাঙ্কিত)। ১৯৩৪ খ্রী. বিজ্ঞান কংগ্রেসের সভাপতি হয়ে তিনি সর্বপ্ৰথম ভারতের সার্বিক উন্নতিতে বিজ্ঞান প্রয়োগের কথা বলেন। বক্তৃতায় সীমাবদ্ধ না রেখে ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স’ প্রতিষ্ঠা করেন এবং পণ্ডিত জওহরলালকে ‘শিল্প প্রসার ও জাতীয় পরিকল্পনা’র কথা জানান। ‘সায়েন্স অ্যান্ড কালচার’ পত্রিকা মারফত দামোদর উপত্যক সংস্কার, ওড়িশার উন্নয়ন, খাদ্য ও দুর্ভিক্ষ, ভারতের জাতীয় গবেষণা সমিতি, নদী-উপত্যক উন্নয়ন ইত্যাদি ভারতের বিভিন্ন সমস্যা বিষয়েও দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। দামোদর ভ্যালী কর্পোরেশনের প্রথম সূত্র এমনি একটি প্রবন্ধ এবং এই রকম আর একটি প্রবন্ধের জন্যই ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি সুভাষচন্দ্ৰ (১৯৩৮) নেহেরুকে সভাপতি করে একটি জাতীয় পরিকল্পনা কমিটি গঠন করেন। তিনি ছাত্রজীবনে ১৯১৪ খ্রী. বন্যাত্রাণের স্বেচ্ছাসেবক এবং ১৯২৩ খ্রী. বেঙ্গল রিলিফ কমিটিতে আচার্য রায়ের সহযোগী ছিলেন। ১৯৫০ খ্রী.উদ্বাস্তুদের জন্য ঈস্ট বেঙ্গল রিলিফ কমিটি গঠন করেন। লন্ডনের রয়্যাল সোসাইটি, ফ্রেঞ্চ অ্যাষ্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটি, বোস্টন অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্স প্রভৃতির ফেলো, ইন্তারন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিয়ন, ভারতীয় বিজ্ঞানোৎকর্ষিণী সমিতি, কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ও সিন্ডিকেট প্রভৃতির এবং ১৯৪৫ খ্রী. বিশ্ববিদ্যালয়-সংক্রান্ত রাধাকৃষ্ণণ কমিশনের সদস্য ছিলেন। তাঁর সভাপতিত্বে ভারত সরকারের ক্যালেন্ডার রিফর্ম কমিটি গঠিত হয়। তিনি নিউটন-ত্রিশততম বার্ষিকীতে ১৯৪৭ খ্রী. লন্ডন রয়্যাল সোসাইটির আমন্ত্রণে লন্ডনে যান। এর আগে ১৯৪৪ খ্রী. ভারত সরকারের বৈজ্ঞানিক শুভেচ্ছা কমিশনের সদস্যরূপে ইউরোপ, আমেরিকা এবং ১৯৪৫ খ্রী. সোভিয়েট সরকারের আমন্ত্রণে রাশিয়া সফর করেন। আলেকজান্দ্ৰা ভোলাটার শতবার্ষিকীতে ইতালী সরকারের অতিথি ছিলেন। তাঁর চেষ্টায় ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দি কালটিভেশন অফ সায়েন্স (ভারতীয় বিজ্ঞানোৎকর্ষিণী সভা) ও গ্লাস সেরামিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট ভারতে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সারাজীবনে অসংখ্য নিবন্ধ লিখেছেন। রচিত গ্রন্থ: ‘The Principle of Relativity’,’Treatise on Heat’, ‘Treatise on Modern Physics’, ‘Junior Textbook of Heat with Meteorology’ প্রভৃতি। লোকসভার সদস্য ছিলেন। দিল্লীর রাষ্ট্রপতি ভবনে পরিকল্পনা কমিশনের সভায় যাবার পথে মৃত্যু।
পূর্ববর্তী:
« মৃন্ময়ী রায়
« মৃন্ময়ী রায়
পরবর্তী:
মেরি কার্পেন্টার »
মেরি কার্পেন্টার »
Leave a Reply