মুরলীধর বন্দ্যোপাধ্যায় (২৪-৪-১৮৬৫ — ৩০-১১-১৯৩৩) খাঁটুরা–চব্বিশ পরগনা। পিতা ধরণীধর শিরোমণি সেকালের শ্রেষ্ঠ কথক হিসাবে খ্যাতি অর্জন করেন। পিতৃব্য শ্ৰীশচন্দ্ৰ বিদ্যারত্ন ৭-১২-১৮৫৬ খ্ৰী. প্রথম বিধবা-বিবাহ করে সমাজ-সংস্কারের একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। তিনি কলিকাতা সংস্কৃত কলেজের বিদ্যালয় বিভাগ থেকে ১৮৮৫ খ্রী. এন্ট্রান্স, ১৮৮৯ খ্রী. প্রেসিডেন্সী কলেজ থেকে সংস্কৃতে অনার্সসহ বি-এ এবং পরের বছর এম.এ পাশ করেন ও ‘বিদ্যারত্ন’ উপাধি পান। ১৮৯১ খ্ৰী. কটক র্যাভেনশ কলেজের ইংরেজীর অধ্যাপক হন। ১৯০৩ খ্ৰী. কলিকাতা সংস্কৃত কলেজে আসেন। এখানে তিনি ইংরেজীর অধ্যাপক পদে থাকলেও ইতিহাস, সংস্কৃত ও দর্শনের অধ্যাপনার কাজও করতেন। ১৯১০ খ্রী। ঐ কলেজের সহকারী অধ্যক্ষ হন। ১৯১৭ খ্রী. কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর বিভাগে প্রাকৃত ভাষার অধ্যাপনায় নিযুক্ত হন। অক্টোবর ১৯২০ খ্ৰী. সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষপদ থেকে অবসর নিয়ে ১৯৩২ খ্রী. পর্যন্ত কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার কাজে নিযুক্ত ছিলেন। তাঁর রচিত গ্রন্থের সংখ্যা অল্প হলেও পরিকল্পনায় মৌলিকতা আছে। নূতন প্ৰণালীতে বর্ণমালা শিক্ষণের জন্য ‘বাংলা অক্ষর পরিচয়’ রচনা করেন। হেমচন্দ্রের প্রাকৃত অভিধানে ‘দেশীনামমালা’র একটি নূতন সংস্করণ তাঁর সম্পাদনায় কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্ৰকাশিত হয়। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশিত প্রবেশিকা পরীক্ষার্থীদের জন্য বাংলা ভাষায় সংস্কৃত ব্যাকরণখনির তিনি আমূল সংস্কার করেন। বিশ্বের দর্শনের তুলনামূলক আলোচনা করে তিনি ‘A Genetic History of the Problems of Philosophy’ গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। সমাজ-সংস্কারমূলক কাজে বিদ্যাসাগরের সুযোগ্য উত্তরাধিকারী ছিলেন। ১৯১৯ খ্রী. প্যাটেল প্ৰস্তাবিত অসবর্ণ বিবাহ বিলের সমর্থনে আন্দোলন করেন। কলিকাতা সমাজ-সংস্কার সমিতির এবং ১৯২০ খ্রী. মেদিনীপুরে আহুত সমাজ সম্মিলনীর সভাপতি ও আরও অন্যান্য জনহিতকর প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তাঁর স্থাপিত বালিগঞ্জ বালিকা বিদ্যালয় বর্তমানে দুইটি পৃথক প্রতিষ্ঠানরূপে বিকাশলাভ করে ‘মুরলীধর বালিকা মহাবিদ্যালয়’ ও ‘মুরলীধর উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়’ নামে পরিচিত। হিরন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর পুত্র।
পূর্ববর্তী:
« মুরলীধর চট্টোপাধ্যায়
« মুরলীধর চট্টোপাধ্যায়
পরবর্তী:
মুরারি গুপ্ত »
মুরারি গুপ্ত »
Leave a Reply