মহেন্দ্রনাথ দে (১৮৭২ – ১৬-৭-১৯১২) জগৎসী-শ্ৰীহট্ট। দোলগোবিন্দ। ১৭ বছর বয়সে এস্ট্রান্স পরীক্ষায় আসামে, ২য় স্থান এবং কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩য় স্থান অধিকার করে এফ.এ. পরীক্ষায় বৃত্তি লাভ করেন। সম্মানের সঙ্গে বিএস-সি পাশ করে কিশোরগঞ্জ হাইস্কুলে প্রধান শিক্ষকের পদে নিযুক্ত হন। এ সময়ে ময়মনসিংহে বঙ্গীয় প্রাদেশিক রাষ্ট্ৰীয় সমিতির যে অধিবেশন হয় তাতে যোগ দিতে স্কুল কর্তৃপক্ষ তাঁর এবং ছাত্রদের উপর নিষেধাজ্ঞা জারী করলে তিনি কর্মত্যাগ করে সরাসরি সম্মেলনে গিয়ে সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ দেশনেতাদের সঙ্গে পরিচিত হন। অঙ্কশাস্ত্রে এমএ পাশ করে একটি বে-সরকারী কলেজে অধ্যাপকের কাজ নেন। গণিত ও জ্যোতিষশাস্ত্রে তাঁর বিশেষ পারদর্শিতা ছিল। সংস্কৃত, বাংলা, ইংরেজী, ফরাসী, গ্ৰীক, লাটিন ইত্যাদি সহ ১২টি ভাষা জানতেন। তাঁর ‘Massage of Hope’ গ্রন্থটিতে গভীর জ্ঞান ও চিন্তার পরিচয় আছে। বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের সময় তিনি সামান্য বেতনে জাতীয় শিক্ষা পরিষদে যোগ দেন। পরবর্তী কালে শ্ৰীহট্টের হবিগঞ্জে জাতীয় বিদ্যালয় স্থাপন করে তার প্রধান শিক্ষক হন। সাপ্তাহিক ‘প্রজাশক্তি’ ও মাসিক ‘মৈত্রী’ পত্রিক ভাগিনেয়। নগেন্দ্ৰনাথ দত্তের সম্পাদনায় প্রকাশ করেন—কিন্তু অধিকাংশ প্রবন্ধ তিনিই রচনা করতেন। এরপর তিনি ও তাঁর অগ্রজ দিগিন্দ্ৰনাথ শিলচর অরুণাচল আশ্রমের প্রতিষ্ঠাতা ঠাকুর দয়ানন্দের শিষ্যত্ব গ্ৰহণ করে যথাক্রমে যোগানন্দ ও অভেদানন্দ নাম গ্ৰহণ করেন এবং স্বগ্রাম জগৎসীর নিজ বাটীতে পিতার নামে ১৯১২ খ্রী. আশ্রম প্ৰতিষ্ঠা করে জগতের মঙ্গলার্থে এক মহাযজ্ঞের অনুষ্ঠান করেন। আশ্রবাসীরা কীর্তন নিয়েই থাকতেন। রাজনীতি ছেড়ে হঠাৎ আধ্যাত্মিক পথ গ্ৰহণ করায় ইংরেজ সরকারের সন্দেহ হয় যে আশ্রমবাসীরা ছদ্মবেশী বিপ্লবী এবং ধর্মানুষ্ঠানের আড়ালে বোমা তৈরী প্রভৃতি সরকার বিরোধী কাজকর্ম চলছে। সন্দেহক্রমে শ্ৰীহট্ট থেকে মি. ব্যোমন্টের নেতৃত্বে সশস্ত্ৰ পুলিস বাহিনী আশ্রম ঘিরে ফেলে ভাঙচুর করতে থাকলে কিছু বাধাপ্ৰাপ্ত হওয়ায় কীর্তনরত আশ্রমবাসীদের উপর গুলি চালনা করলে অন্যান্য কয়েক জনের সঙ্গে তিনি গুরুতর আহত হয়ে শ্ৰীহট্ট জেল হাসপাতালে প্রেরিত হন। দশদিন পরে সেখানেই তাঁর মৃত্যু ঘটে।
পূর্ববর্তী:
« মহেন্দ্র গুপ্ত
« মহেন্দ্র গুপ্ত
পরবর্তী:
মহেন্দ্রনাথ রায়, বিদ্যানিধি »
মহেন্দ্রনাথ রায়, বিদ্যানিধি »
Leave a Reply