মহেন্দ্ৰচন্দ্ৰ নন্দী, ডাঃ (নভে ১৮৫৫ — জুন ১৯৩২) কালীকচ্ছ-ত্রিপুরা। আনন্দ। ১৮৭১ খ্রী.এস্ট্রান্স ও ১৮৭৩ খ্রী. ঢাকা কলেজ থেকে এল.এ. পাশ করে কলিকাতা মেডিক্যাল কলেজে পাঁচ বছর পড়ার পর পিতার সন্ন্যাস গ্রহণের কথা জানেন। তিন বছর ঢাকা মেডিক্যাল স্কুলে পড়ান। পরে স্বগৃহে ফিরে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা আরম্ভ করে অল্পকালের মধ্যেই খ্যাতিলাভ করেন। ১৮৭২ – ৭৬ খ্রী. কলিকাতা থাকার সময়েই ছাপাখানার কালি, কাপড়ের কল, দেশলাই কল নির্মাণে মন দেন। হিন্দুমেলায় নিজ কারখানায় তৈরী কাপড় ও দেশলাই প্রদর্শন করে উচ্চপ্ৰশংসা লাভ করেন। রবীন্দ্রনাথের ‘জীবনস্মৃতি’ গ্রন্থে এই স্বদেশী বস্ত্ৰ-তৈরির কথার উল্লেখ আছে। তাঁর তৈরী লেখার কালি কলিকাতার বাজারে ‘রায় ব্রাদার্স ইঙ্ক’ নামে বিক্রি হত। নিজ বাসস্থান কালীকচ্ছ গ্রামে ১৮৮৮ খ্রী. প্ৰায় আট বিঘা জঙ্গল পরিষ্কার করে এক লোহার কারখানা স্থাপন করেন। এখানে উৎকৃষ্ট ছুরি, কঁচি, চা-গাছ কাটার কাটারি ইত্যাদি তৈরী হত। অর্থাভাবে কারখানাটি উঠে গেলে নিজ বাড়িতে কাজ চালাতেন। দেশলাই-এর কাঠি ও বাক্স তৈরি করার জন্য কল আবিষ্কার করে কারখানা খোলেন। ভারতে প্ৰথম দেশলাই-এর কল তৈরি করার কৃতিত্ব তাঁরই। স্বদেশী যুগে তাঁর আবিষ্কৃত কল নিয়ে দেশলাই তৈরির কারখানা বহু স্থানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ঝিনুকের ও নারকেল মালার বোতাম তৈরির কারখানাও তিনি তাঁর বাড়িতে করেছিলেন। জোলাদের তিনি সহজে কাপড় বুনবার প্রণালী শিক্ষা দেন। বাড়িতে চরকায় সূতা কাটা হত, আটখানা তাতে কাপড় বোনা হত। স্বগৃহে বোনা মোটা কাপড়ই পরতেন। তাঁর এইসব কার্য ও স্বদেশী প্রচার-উদ্যোগ দেখার জন্য অরবিন্দ ঘোষ, বিপিন পাল প্রভৃতি নেতারা এখানে আসতেন। বিপিন পাল তাঁকে ‘তলস্তয়’ আখ্যা দেন। নিষ্ঠাবান ব্ৰাহ্ম ছিলেন। সমাজ ও আত্মীয়-স্বজন-পরিত্যক্ত বহু নারী তাঁর বাড়িতে আশ্রয় পেয়ে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে পেরেছিলেন। হোমিও চিকিৎসক হিসাবে ‘ধন্বন্তরি’ খ্যাতি লাভ করেন। বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের সময় তাঁর নেতৃত্বে কালীকচ্ছে স্বদেশী আন্দোলন শুরু হয়। ১৯০৮ খ্রী. চাঁদপুরের রাজনৈতিক সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন; অভ্যর্থনা সমিতির সভাপতি ছিলেন। হরদয়াল নাগ। ১৯০৮ খ্রী. তাঁর এক পুত্র অশোক মানিকতলা বোমার মামলায় অভিযুক্ত হয়ে জেলে থাকা কালে যক্ষ্মারোগাক্রান্ত হয়ে মারা যান। তাঁর গৃহ স্বদেশী ও বৈপ্লবিক আন্দোলনের কেন্দ্র ছিল। উল্লাসকর দত্ত ছিলেন তাঁর ভাগিনেয়। তাঁর স্মৃতি-রক্ষার জন্য তাঁর বাড়িতেই মহেন্দ্ৰচন্দ্ৰ অনাথ আশ্রম স্থাপিত হয়।
পূর্ববর্তী:
« মহেন্দ্রলাল বড়ুয়া
« মহেন্দ্রলাল বড়ুয়া
Leave a Reply