মহীউদ্দীন চৌধুরী (১৯০৬ — ১৯৭৫) খৈড়া খালপার-ঢাকা। মনীরউদ্দীন চৌধুরী। কবি মহীউদ্দীনের পুরো নাম রকেব আল মহীউদ্দীন, ডাক-নাম রঙ মিয়া। ভারতে কমিউনিস্ট আন্দোলনের প্রথম যুগে যে অল্প কয়েকজন বুদ্ধিজীবী কমিউনিস্ট মতাদর্শে প্রভাবিত হয়েছিলেন তিনি তাদের অন্যতম। ১৯২৩ খ্রী. থেকে খিলাফত আন্দোলনে ও কংগ্রেসের স্বাধীনতা আন্দোলনে স্বেচ্ছাসেবকরূপে তাঁর রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়। ১৯২৫ খ্রী. থেকে শ্রমিক ও কৃষক আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত হন। ১৯৩৭–৪৫ খ্রী. কলিকাতায় ‘ইন্ডিয়ান কোয়ার্টারমাস্টারস ইউনিয়ন’-এর সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। কিছুদিন ‘ইন্ডিয়ান সেলার্স ইউনিয়ন’ এবং ‘বঙ্গীয় প্ৰাদেশিক ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস’-এর সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-কালে বহু ফেরারী রাজনৈতিক নেতা তাঁর কাছে আশ্রয় পেয়েছেন; অনেকের নিরাপত্তার ব্যবস্থাও তিনি করেছেন। নানা কারণে ১৯৪৯ খ্রী. তাকে কলিকাতা ছেড়ে ঢাকায় গিয়ে বাস করতে হয়। ফতুল্লায় তাঁর বাড়ির নাম রেখেছিলেন ‘সাহিত্য শিবির’। ১৯৫৪ খ্রী. থেকে দুই বছর ঈস্ট পাকিস্তান ফেডারেশন অব লেবার সংস্থার রিসার্চ অফিসার ছিলেন। ‘আড়ীয়ান বিল কৃষক সভা’ সংগঠনের পুরোধা হিসাবে যথেষ্ট কাজ করেছেন। এই সংগঠনের উদ্দেশ্য ছিল অনাবাদী জমিকে আবাদযোগ্য করে তুলে দেশের খাদ্য-ঘাটতি পূরণ করা। ১৯৫৮ খ্রী. মিলিটারী শাসনের চাপে তাঁর রাজনৈতিক কর্মধারা বাধাপ্ৰাপ্ত হলে তিনি পুরোপুরি সাহিত্য-সেবায় আত্মনিয়োগ করেন। গীতিকাব্য, কবিতা, নাট্যকাব্য, গদ্যরচনা, নাটক, উপন্যাস ও ছোটগল্পের সংগ্রহ এবং অনুবাদ-সাহিত্য নিয়ে তাঁর রচনার সংখ্যা ৮২। তাঁর মধ্যে ৩৬ খানা প্রকাশিত হয়েছে। অনুদিত গ্ৰন্থ ‘জরথুস্ত্ৰ বললেন’, ‘অনুধ্যান’, ‘তিনজন মুসলিম মনীষী’, ‘ফাউস্ট’ (২ খণ্ড) ও ‘প্ৰাচীন বিজ্ঞানের ইতিহাস’ বাংলা একাডেমী প্ৰকাশ করেছে। তাঁর প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য গ্ৰন্থ: কাব্য—’পথের গান’, ‘স্বপ্নসংঘাত যুদ্ধবিপ্লব’, ‘গরীবের পাঁচালী’, ‘অন্ন চাই, আলো চাই’, ‘জনসাধারণ’, ‘নবভারত’, ‘শিকারে চলেছে প্রভু বাস্যা কলন্দর’, ‘গান্ধীজী নিহত হয়েছেন’, ‘দিগন্তের পথে একা’, ‘অন্ধকারে ষড়যন্ত্র’, ‘এলো বিপ্লব’; উপন্যাস- ‘মহামানবের মহাজাগরণ’, ‘দুৰ্ভিক্ষ’, ‘আলোর পিপাসা’, ‘শাদি মোবারক’, ‘নতুন সূৰ্য’, ‘নির্যাতিত মানবের নামে’, ‘বশির’, ‘শিম্পির স্বপ্ন’, ‘কঙ্কাবতীর তীরে’, ‘কামিনী-কাঞ্চন’; নাটক— ‘রক্তাক্ত পৃথিবী’; ছোটগল্পের সংগ্ৰহ- ‘নিরুদেশের যাত্রী’। ১৯৫৬ খ্রী এক স্টাডি কনফারেন্সে যোগ দিতে তিনি ইংল্যান্ড যান। সেখানকার অভিজ্ঞতাকে ভিত্তি করে রচিত হয় ‘The Poem of Padma and the Prose of Thames’ (১৯৫৭) অন্যান্য ইংরেজী রচনা: ‘Under the Shadow of an Anarchic World’ (১৯৪৩), ‘New Order of Society’ (১৯৪৭) & ‘The Word’ (১৯৭০)
পূর্ববর্তী:
« মহির উদ্দীন
« মহির উদ্দীন
পরবর্তী:
মহীতোষ রায়চৌধুরী »
মহীতোষ রায়চৌধুরী »
Leave a Reply