মন্মথনাথ ঘোষ ১ (১০-৭-১৮৮২ – ২০-৩-১৯৪৪) মথুরাপুর-যশোহর। রসিকলাল। ১৯০৫ খ্রী. স্বদেশী আন্দোলনের প্রভাব তাঁর উপর পড়েছিল। স্বদেশের শিল্পোন্নতির উদ্দেশ্যে কলেজের পড়া ছেড়ে যশোহরের নলডাঙ্গার রাজা প্রমথভূষণ দেবরায়ের আনুকূল্যে ১৯০৬ খ্রী. জাপানে গিয়ে সেখানে সেলুলয়েডের কাজ শেখেন। দু বছর পর দেশে ফিরে যশোহরে চিরুণী, বোতাম, মাদুরের কারখানা তৈরী করেন। যশোহরে চিরুণী কারখানা প্ৰতিষ্ঠায় প্রথম উদ্যোগী ছিলেন রাজা প্রথমভূষণ। সহযোগী ছিলেন রায় বাহাদুর যদুনাথ মজুমদার এবং নড়াইলের জমিদার ভবেন্দ্ৰচন্দ্র রায়। মাত্র ৭৫ টাকা পারিশ্রমিক নিয়ে মন্মথনাথ অক্লান্ত পরিশ্রমে কারখানাটিকে গড়ে তোলেন। যন্ত্রপাতি বসান থেকে কারিগরদের শিক্ষাদান সবই নিজের হাতে করতেন এসময়ে মহীশূর রাজ্যে চিরুণী কারখানা প্ৰস্তুত করার জন্য মহারাজের কাছ থেকে হাজার টাকা বেতনের প্রস্তাব তিনি অগ্রাহ্য করেন। তাঁর কর্মদক্ষতায় যশোহরের চিরুণী সুদূর সিংহল, বৰ্মা পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছিল। পরে স্বাস্থ্যের কারণে যশোহর ছেড়ে তিনি কলিকাতায় আসেন। এখানে ওরিয়েন্টাল মেশিনারি সাপ্লাইং এজেন্সি নামে (বর্তমান ওরিয়েন্টাল মেশিনারী) ছোট কলকব্জা তৈরীর এক কারখানা ১৯১৯ খ্রী. স্থাপন করেন। তিনি অনেকগুলি বৈদেশিক কোম্পানীর একক (সোল) এজেন্সি নিয়েছিলেন এবং অনেকগুলি সহজসাধ্য। কল বিদেশ থেকে আনিয়ে এখানে করিয়েছিলেন। সে সময়ে কলিকাতায় ২/৩ টি বিদেশী কোম্পানী থাকলেও একমাত্র তাঁর প্রতিষ্ঠানেই তুলনামূলক অনেক কম দামে কলকব্জা পাওয়া যেত। বাংলার সর্বত্র যে দেশলাইয়ের কল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তাঁর অধিকাংশই তিনি বিদেশ থেকে আনিয়ে দিয়েছেন। গৃহশিল্পের উপযোগী কলকব্জা আনার জন্য ১৯৩৩ খ্রী. তিনি দ্বিতীয়বার জাপান যান। বাংলার যুবকদের শিক্ষার জন্য তিনি ক্যালকাটা টেকনোলোজিক্যাল কলেজ এবং চুঁচুড়া কৃষি বিদ্যালয় স্থাপন করেছিলেন। তাঁর জীবনের অপর উল্লেখযোগ্য ঘটনা—কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তির সহায়তায় যশোহর-ঝিনাইদহ মৃতপ্ৰায় রেললাইনটি সাহেব কোম্পানীর হাত থেকে উদ্ধার করা। সাহিত্যচর্চা করতেন। বিদ্যাবিনোদ উপাধি পেয়েছিলেন। রচিত গ্ৰন্থ: ‘সুপ্ত জাপান’, ‘নব্য জাপান’, ‘জাপান প্রবাসী’ প্রভৃতি। সাহিত্যিক কুমারেশ ঘোষ তাঁর পুত্র।
মন্ময়নাথ ঘোষ ২ (১৮-৯-১৮৮৪ – ৭-৪-১৯৫৯) কলিকাতা। বহুভাষাবিদ সাহিত্যসেবী অতুলচন্দ্র। ‘মধুরা’ কাব্য গ্রন্থের রচয়িত্রী সুরবালা ঘোষ তাঁর মাতা। প্রখ্যাত জীবনীকার। ১৯০০ খ্রী. সেন্ট্রাল কলেজিয়েট স্কুল থেকে প্রথম বিভাগে এন্ট্রান্স, জেনারেল অ্যাসেমগ্ৰীজ ইনস্টিটিউশন থেকে ১৯০২ খ্ৰী. শ্রেষ্ঠ বাংলা রচনার জন্য বঙ্কিমচন্দ্ৰ পদকসহ এফ-এ, ১৯০৪ খ্রী. গণিতে বি-এ এবং পরের বছর বিশুদ্ধ গণিতে এম.এ. পাশ করেন। ১৯০৬ খ্রী. তিনি কস্ট্রোলার-জেনারেলের অফিসে প্রবেশ করে ট্রেজারি কন্ট্রোল অফিসের অন্যতম সুপারিন্টেণ্ডেন্টের পদে অধিষ্ঠিত হন। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ২০। বিগত শতাব্দীর বাংলার সমাজ ও সাহিত্যের লুপ্ত অধ্যায়গুলির পুনরুদ্ধারে ইতিহাসের আলোকে জীবন-চরিত তথা তৎকালীন ঘটনাবলীর নির্ভরযোগ্য আলোচনা-সমন্বিত সাহিত্য রচনায় তিনি বিশিষ্ট। ১৯১১ খ্ৰী. হিন্দু পেট্রিয়ট’ ও ‘বেঙ্গলী’ পত্রিকার প্রবর্তক পিতামহ গিরিশচন্দ্র ঘোষের ইংরেজী জীবনচরিত এবং ইংরেজী বক্তৃতা ও প্রবন্ধসমূহ সংগৃহীত করে প্রকাশ করেন। অন্যান্য উল্লেখযোগ্য জীবনী গ্ৰন্থ: ‘মহাত্মা কালীপ্রসন্ন সিংহ’, ‘রাজা দক্ষিণারঞ্জন মুখোপাধ্যায়’, ‘হেমচন্দ্ৰ’ (৩ খণ্ড), ‘সেকালের লোক’, ‘নিরঞ্জন মুখোপাধ্যায়’, ‘মনীষী ভোলানাথ চন্দ্র’, ‘কৰ্মবীর কিশোরীচাঁদ মিত্র’ (মাতামহ), ‘জ্যোতিরিন্দ্রনাথ’, ‘রঙ্গলাল’, ‘মনীষী রাজকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায়’ প্রভৃতি। গল্প ও কাব্য রচনায়ও পারদর্শিতা ছিল। গ্রন্থাকারে অপ্ৰকাশিত তাঁর রচনাগুলি সাহিত্য, যমুনা, মানসী ও মর্মবাণী প্রভৃতি বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় ছড়িয়ে আছে। তাঁর স্ত্রী বিভাবতীর (৯.৮-১৮৯৫ — ১৬-৮-১৯৮০) লেখা অনেক গল্প ও সরস রচনাদি বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্ৰকাশিত হয়েছে। ১৯১৪ খ্রী. লন্ডনের রয়্যাল স্ট্যাটিসিটক্যাল সোসাইটি এবং রয়্যাল ইকনমিক সোসাইটির ফেলো হন।
মন্ময়নাথ ঘোষ ৩ (১৩-১২-১৯০৮ – ১২-১-১৯৮৩) কলিকাতা। নিখিলবঙ্গ সঙ্গীত সম্মেলনের প্রতিষ্ঠাতা ভূপেন্দ্রকৃষ্ণ। পিতার মত তিনিও সঙ্গীতের পৃষ্ঠপোষকতার সঙ্গে সঙ্গীতের বহুল প্রচারের জন্য নানাভাবে চেষ্টা করেছেন। নিজে সঙ্গীতশিল্পী ছিলেন না কিন্তু সঙ্গীতের পূজারী ছিলেন। পিতৃ-প্রতিষ্ঠিত সঙ্গীত সম্মেলনের ধারক ও বাহক হিসাবে আজীবন সেবা করে গেছেন। দুঃস্থ শিল্পীদের নানাভাবে সাহায্য করেছেন। একসময় ভারতখ্যাত শিল্পীদের অনেকেই তাদের ৪৬ নং পাথুরিয়াঘাটার বাড়িতে বসবাস করেছেন। ঐ বাড়িতেই তিনি ভারতের বিভিন্ন ঘরানার গুণী শিল্পীদের ছবি সংগ্ৰহ করে রেখেছেন। প্রেসিডেন্সী কলেজের স্নাতক। টেনিস, বিলিয়ার্ড প্রভৃতি খেলায় পারদর্শী এবং সুরেশ সঙ্গীত সংসদের সভাপতি ছিলেন।
পূর্ববর্তী:
« মন্মথচন্দ্র বসু মল্লিক
« মন্মথচন্দ্র বসু মল্লিক
পরবর্তী:
মন্মথনাথ চট্টোপাধ্যায়, ডাঃ »
মন্মথনাথ চট্টোপাধ্যায়, ডাঃ »
Leave a Reply