মনোরঞ্জন ভট্টাচাৰ্য, মহর্ষি (২৬-১-১৮৮৯ – ২০-১-১৯৫৪) কামারখাড়া-বিক্রমপুর-ঢাকা। নবীনচন্দ্ৰ। প্ৰখ্যাত অভিনেতা ও নাট্যকার। ১৯০৮ খ্রী. গ্রামের স্কুল থেকে এস্ট্রান্স পাশ করেন। ছাত্রাবস্থায় ঢাকায় গুপ্ত বিপ্লবী দলে যোগ দেন এবং কলিকাতার ন্যাশনাল কলেজে ভর্তি হন। সেখান থেকে প্রেসিডেন্সী কলেজে আসেন, কিন্তু রাজনৈতিক কারণে ঐ কলেজ থেকে বহিষ্কৃত হয়ে সিটি কলেজ থেকে আইএস-সি এবং ১৯১৬ খ্রী. রিপন কলেজ থেকে অঙ্কে অনার্সসহ বিএস-সি পাশ করেন। এই বছর এমএস-সি পড়বার সময় প্রথমে কুতুবদিয়া (চট্টগ্রাম) ও পরে বদনগঞ্জে (হুগলী) অন্তরীণ থাকেন। শেষে স্বগৃহে দেড় বছর অন্তরীণ থাকার পর ১৯১৯ খ্রী. মুক্ত হয়ে পুনরায় পড়াশুনার চেষ্টা করেন। কিন্তু সংসারের চাপে শিক্ষা বন্ধ রেখে তিনি বেঙ্গল কেমিক্যালে যোগ দেন। অবসর-সময়ে দেশবন্ধুর ব্যক্তিগত সেক্রেটারীর কাজ করতেন। ১৯২১ খ্রী. অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দিয়ে চার মাসের কারাদণ্ড ভোগ করেন। এ সময়ে বহু রাজনৈতিক কর্মীর সঙ্গে রামকৃষ্ণ মিশনের যোগাযোগ ছিল। মিশনের ডা: দুৰ্গাপদ ঘোষের মাধ্যমে শিশিরকুমার ভাদুড়ীর সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। শিশিরকুমারের আহ্বানে তিনি থিয়েটারের দলে যোগ দেন। ‘সীতা’ নাটক দিয়ে তাঁর অভিনেতা-জীবনের শুরু (১৯২৩)। মনোমোহন থিয়েটারে শিশিরকুমারের পরিচালনায় ‘সীতা’ নাটকে ‘বাল্মীকি’ চরিত্রে অভিনয় করে তিনি মহর্ষি নামে পরিচিত হন। ১৯৪৪ খ্রী. পর্যন্ত পেশাদার রঙ্গমঞ্চে শতাধিক চরিত্রে অভিনয় করে নিজ সুনাম অক্ষুন্ন রাখেন। চলচ্চিত্রে তাঁর প্রথম অভিনয় (১৯২৯) ম্যাডান কোম্পানীর রজনী চিত্রে (নির্বাক) ‘শচীন্দ্রনাথ’ চরিত্রে। ৫০ টির অধিক বাংলা ছবিতে অভিনয়-নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রাখেন। প্রধানত পেশাদারী নাটমঞ্চের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও মহর্ষিকে বাঙালী মনে রাখবে অপেশাদার প্রগতিমূলক নাট্য আন্দোলনের পুরোধারূপে। এ যুগের প্রথম প্রগতিশীল নাটক ‘নবান্ন’ অভিনয়ের সময়ে তাঁরই উপদেশে চটের দৃশ্যসজ্জা ব্যবহার করা হয়। পরবর্তী কালে বহুরূপী নাট্যসংস্থার (১৯৪৮) জন্ম থেকে তিনি আমৃত্যু সভাপতিরূপে এই সংস্থাকে দৃঢ়-প্রতিষ্ঠিত করে যান। ১৯৩০ খ্রী. শিশিরকুমারের দলের সভ্যরূপে আমেরিকায় গিয়ে অভিনয় করেন। ১৯৫২ খ্রী. সোভিয়েট সরকারের আমন্ত্রণে প্রতিনিধি দলের নেতারূপে ঐ দেশে যান। প্রথম জীবনে যেমন বিপ্লবী আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন, শেষ-জীবনে তেমনি সাম্যবাদী আন্দোলনে আকৃষ্ট হন। বোম্বাই শহরে অনুষ্ঠিত অ্যান্টি-ফ্যাসিস্ট সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন। তাঁর রচিত ‘চক্রব্যুহ’, ‘বন্দনার বিয়ে’, ‘দেশবন্ধু’ (ছায়াবলম্বনে রচিত) এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জন্য রচিত ‘হোমিওপ্যাখী’ (বহুরূপী পত্রিকায় প্রকাশিত)। শিশিরকুমারের আমেরিকা ভ্ৰমণ সংক্রান্ত শিবরাম চক্রবর্তীর লেখার জবাবে তাঁর রচনাগুলি তথ্যপূর্ণ। ‘অরণি’ পত্রিকায় কবিতা ও প্ৰবন্ধ লিখতেন। প্ৰবন্ধগুলির সঙ্কলনের নাম ‘থিয়েটার প্রসঙ্গ’।
পূর্ববর্তী:
« মনোরঞ্জন ভট্টাচাৰ্য
« মনোরঞ্জন ভট্টাচাৰ্য
পরবর্তী:
মনোরঞ্জন রায় »
মনোরঞ্জন রায় »
Leave a Reply