মনোমোহন ঘোষ ১ (১৩-৩-১৮৪৪ – ১৬-১০-১৮৯৬) বৈরাগাদি-ঢাকা। রামলোচন। কৃষ্ণনগর কলেজিয়েট স্কুল থেকে ১৮৫৯ খ্রী. প্রবেশিকা পাশ করে কলিকাতায় মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথের আবাসে থেকে প্রেসিডেন্সী কলেজে ভর্তি হন। দেবেন্দ্রনাথের সাহায্যে ‘ইন্ডিয়ান মিরর’ পত্রিকা প্ৰকাশ ও সম্পাদনা করেন (১৮৬১)। ১৮৬২ খ্রী. সত্যেন্দ্রনাথের সঙ্গে সিভিল সার্ভিস পড়বার জন্য বিলাত যান, কিন্তু পরীক্ষায় ব্যর্থকাম হয়ে ব্যারিস্টার হয়ে দেশে ফেরেন। জ্ঞানেন্দ্রমোহন ঠাকুর প্রথম ভারতীয় ব্যারিস্টার হলেও তিনি কোনদিন ভারতে না ফেরায় মনোমোহনই প্ৰথম ভারতীয় ব্যারিস্টার হিসাবে ১৮৬৬ খ্রী. কলিকাতা হাইকোর্টে ব্যবসায় শুরু করেন এবং অল্পদিনেই খ্যাতিমান ও বিত্তবান হন। তিনি একাধিক মামলায় ব্রিটিশ শাসকবর্গের চরিত্র উদঘাটন করে নির্দোষ প্রজাসাধারণকে রক্ষা করেছেন। বিলাতে পড়বার সময় কবি মধুসূদনকে তিনি অর্থসাহায্য করেছিলেন। স্ত্রীশিক্ষার প্রসারে উদ্যোগী ‘বঙ্গ মহিলা বিদ্যালয়ের’ অন্যতম প্ৰতিষ্ঠাতা। প্ৰধানতঃ তাঁর ও বিচারপতি গার্থের চেষ্টায় বেথুন স্কুল ও বঙ্গ মহিলা বিদ্যালয় যুক্ত হয়। ১৮৭৩ খ্রী. বেথুন কলেজের সুপারিন্টেন্ডেন্টরূপে তাঁর কাজ উল্লেখযোগ্য। ১৮৮৫ খ্রী. প্রতিষ্ঠিত ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। ১৮৯০ খ্রী. ষষ্ঠ কলিকাতা কংগ্রেসে অভ্যর্থনা সমিতির সভাপতি হন। শাসন ও বিচার বিভাগ পৃথিকীকরণের জন্য আন্দোলন করেছিলেন। এই বিষয়ে তাঁর রচিত মূল্যবান পুস্তিকা : ‘The Administration of Justice in inida’ কৃষ্ণনগরে ছাত্রজীবনেই (১৮৬০) নীলচাষীদের পক্ষে ‘হিন্দু প্যাট্রিয়ট’ পত্রিকায় লিখতেন। বিলাতে ভারতের অনুকূলে জনমত সৃষ্টির কাজে আরও দু’জনের সঙ্গে ১৮৮৫ খ্রী. ওদেশে যান এবং বহু সভায় বক্ততা দেন। বাল্যবিবাহের বিরোধী হিসাবে ‘বিবাহে সম্মতিদান’ বিল (১৮৯১) সমর্থন করেন।
মনোমোহন ঘোষ ২ (১৯-১-১৮৬৯ – ১৯২৪) বিহারের ভাগলপুরে জন্ম। সিভিল সার্জন কে. ডি. ঘোষ। শ্ৰীঅরবিন্দ ও বিপ্লবী বারীন ঘোষ তাঁর দুই অনুজ। শিক্ষার জন্য পিতা তাকে ১০ বছর বয়সে ইংল্যান্ডে রেখে আসেন। অক্সফোর্ড ক্রাইস্ট চার্চ কলেজে তিনি পড়া শেষ করেন। ছাত্রাবস্থায় সহপাঠী কবিবন্ধুদের সঙ্গে ‘প্রিমাভেরা’ নামে নিজেদের কবিতা-সঙ্কলন-গ্ৰন্থ প্রকাশ করে কবিরূপে স্বীকৃতি পান। ১৮৯৪ খ্ৰী. দেশে ফিরে সরকারী শিক্ষা-বিভাগে যোগদান করেন। তিনি দীর্ঘদিন কলিকাতা প্রেসিডেন্সী কলেজের ইংরেজী সাহিত্যের অধ্যাপক ছিলেন। গ্ৰীক ও ল্যাটিন সাহিত্যেও তাঁর বিশেষ অধিকার ছিল। উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ : ‘অরফিক মিসট্রিজ’, ‘লভ সংস অ্যান্ড এলিজিস’, ‘সংস অফ লাভ অ্যান্ড ডেথ’ প্রভৃতি।
মনোমোহন ঘোষ ৩ (১৮৯৫ — আগস্ট ১৯৭৯)। খ্যাতনামা ভারততত্ত্ববিদ। স্কুলের ছাত্রাবস্থাতেই বিপ্লবী পুলিন দাসের সংস্পর্শে আসেন। আই.এ. পড়ার সময় অনুশীলন দলের সঙ্গে যুক্ত হন। বছরখানেক কারারুদ্ধ থাকেন। মুক্তি পাবার পরও তাকে মোক্তারী পরীক্ষায় বসতে বা ইঞ্জিনীয়ারিং কলেজে ভর্তি হতে দেওয়া হয় না। এ সময় তিনি সুরেন্দ্রনাথ ঠাকুরের অনুপ্রেরণায় শিলাইদহে রবীন্দ্রনাথ-প্রবর্তিত গ্রামীণ পুনর্গঠনের কাজে নিযুক্ত হন। ১৯২২ খ্রী. সুরুলের দোকান ও গুদাম-রক্ষক হিসাবে শান্তিনিকেতনে আসেন। এই কাজের সঙ্গে পড়াশুনাও চালিয়ে যান। ১৯২৬ খ্রী. শান্তিনিকেতনে স্কুলের শিক্ষক হন। ১৯২৯ খ্রী. কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভাষাবিদ্যায় অনার্স সহ বি-এ, ১৯৩১ খ্রী. কৃতিত্বের সঙ্গে তুলনামূলক ভাষাবিজ্ঞানে এবং ১৯৩৩ খ্রী. বাংলায় প্রথম শ্রেণীতে এম.এ. পাশ করেন। শান্তিনিকেতনে বিদ্যাভবনে রিসার্চ ফেলো হিসাবে কাজ করে ১৯৩৮ খ্রী. পি-এইচডি উপাধি পান। অধ্যাপক জীবনের শুরু কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংস্কৃতের অধ্যাপনা দিয়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ও পরে প্রেসিডেন্সী কলেজের বাংলা বিভাগের প্রধান হিসাবে কাজ করে ১৯৫৪ খ্রী. অবসর নেন। ভারত সরকার ১৯৫৭ খ্রী। তাকে বর্তমান কাম্পূচিয়ার নাম-পেন বৌদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ে সংস্কৃত পড়ানর জন্য প্রেরণ করেন। সেখানে তিনি ৬ বছর ছিলেন। রচিত গ্ৰন্থ: ‘বাংলা গদ্যের চার যুগ’, ‘প্রাচীন ভারতের নাট্যকলা’, ‘প্ৰাকৃত সাহিত্য’ প্রভৃতি। অনুদিত ও সম্পাদিত গ্রন্থের মধ্যে নান্দিকেশ্বরের ‘অমিয় দপণ’, ভরতের নাট্যশাস্ত্র, রাজশেখরের ‘কর্পূরমঞ্জরী’ উল্লেখযোগ্য।
পূর্ববর্তী:
« মনোমোহন গঙ্গোপাধ্যায়
« মনোমোহন গঙ্গোপাধ্যায়
পরবর্তী:
মনোমোহন চক্রবর্তী »
মনোমোহন চক্রবর্তী »
Leave a Reply