মতিলাল রায় ১ (১৮৪২ — ১৯০৮) ভাতশালা-বর্ধমান। মনোহর। যাত্রার প্রখ্যাত পালাকার ও অভিনয়শিল্পী। ধর্মীয় কাহিনী ছাড়াও ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক কাহিনী অবলম্বনে যারা পালা রচনা শুরু করেছিলেন তিনি তাঁদের অন্যতম। নবদ্বীপে মিশনারী স্কুলে ও পরে বারাসতে হাইস্কুলে অধ্যয়ন করেন। কিছুদিন কেরানীর কাজ ও শিক্ষকতা করার পর জেনারেল পোস্ট অফিসে চাকরি নেন। ঈশ্বর গুপ্তের ‘সংবাদ প্রভাকরা’ পত্রিকার লেখক ছিলেন। নবদ্বীপে যাত্রার দল গঠন করে এবং গীতাভিনয়-যাত্রা রচনা করে প্রভূত যশ ও অর্থের অধিকারী হন। রচিত উল্লেখযোগ্য পালা : ‘সীতাহরণ’, ‘ভদ্রতাগমন’, ‘দ্ৰৌপদীর বস্ত্ৰহরিণ’, ‘পাণ্ডব নির্বাসিন’, ‘নিমাই সন্ন্যাস’, ‘ভীষ্মের শরশয্যা’, ‘রামরাজা’, ‘কৰ্ণবধ’, ‘ব্রজলীলা’ প্রভৃতি।
মতিলাল রায় ২ (৫-১-১৮৮৩ — ১০-৪-১৯৫৯) বোড়াইচণ্ডীতলা-ফরাসী চন্দননগর। পিতা উত্তর প্রদেশের চৌহানবংশীয় ছেত্রী রাজপুত বিহারীলাল সিংহ রায়। মতিলাল ফ্রী চার্চ ইনস্টিটিউশনে শিক্ষাপ্রাপ্ত হন। একমাত্র শিশুকন্যার মৃত্যুতে সস্ত্রীক বৈষ্ণবী শক্তিমন্ত্রে দীক্ষা নেন ও ১৯০২ খ্রী. সৎপন্থাবলম্বী সম্প্রদায় গঠন করে দরিদ্র নারায়ণ সেবায় আত্মনিয়োগ করেন। ১৯০৫ খ্রী. বঙ্গভঙ্গ-রোধ আন্দোলনে যোগ দেন। ১৭০৬-১৯০৬ শ্ৰী জনৈক অবধূতের নির্দেশে সস্ত্রীক ব্ৰহ্মচর্যে দীক্ষিত হন। ফেব্রুয়ারী ১৯১০ খ্ৰী. শ্ৰীঅরবিন্দ চন্দননগরে মতিলালের আবাসে আত্মগোপনকালে তাকে জ্ঞান, ভক্তি, কর্ম ও সবশেষে আত্মসম্পন্ন মহাযোগে দীক্ষিত করেন। ১৯০৮ খ্রী. নরেন গোসাইকে হত্যা করার জন্য তিনিই কানাইলাল দত্তকে রিভলভার দিয়েছিলেন। বারীন ঘোষের দল ভেঙ্গে গেলে শ্ৰীশ ঘোষ, অমর চট্টোপাধ্যায় ও বাবুরাম পরাকরের নেতৃত্বে তিনি চন্দননগরে বিপ্লবী সংগঠনের কাজ করে যান। ১৯১৪ খ্রী. ‘প্রবর্তক সঙ্ঘ প্রতিষ্ঠিত এবং ১৯১৫ খ্রী. সঙ্ঘের মুখপত্র হিসাবে ‘প্রবর্তক’ পত্রিকা প্ৰকাশিত হয়। এইসময় থেকে চন্দনগরে প্রবর্তক সঙ্ঘ সারা বাঙলার বিপ্লবীদের আশ্রয়দান ও যোগাযোগ রক্ষার কাজে ব্যাপৃত ছিল। বাঙলা তথা ভারতের শ্রেষ্ঠ বিপ্লবীরা কোন না কোন সময় এই আশ্রয়ে গোপনে বাস করেছেন। শতাধিক স্মরণীয় বিপ্লবীর নাম আজও ঐ সঙ্ঘে পাথরের ফলকে উৎকীর্ণ আছে। মহাত্মা গান্ধীর অসহযোগ আন্দোলনের সময় অনেকে প্রবর্তক বিদ্যাপীঠে যোগ দেন। ১৯২৫ খ্রী তিনি সঙ্ঘ-গুরু পদে বৃত হন। ১৯২৯ খ্রী. সঙ্ঘ-মাতা মতিলালের সহধর্মিণী রাধারাণী দেবীর মৃত্যু হয়। সঙ্ঘ ও জাতিকে স্বাবলম্বনের কর্মদীক্ষায় দীক্ষিত করার উদ্দেশ্যে তিনি ‘প্রবর্তক ট্রাস্ট’ গঠন করেন এবং এই ট্রাস্টের পরিচালনায় গ্রন্থাগার, পাঠশালা, জুনিয়র বেসিক স্কুল, ছাত্র-ছাত্রীদের আবাসসহ বিদ্যার্থিভবন, আশ্রম, শ্ৰীমন্দির, মহিলাসদন, ব্যাঙ্ক, প্ৰকাশন-সংস্থা, আসবাবপত্র ও ছাপাখানা-সংক্রান্ত ব্যবসায়-প্রতিষ্ঠান, জুট মিল ইত্যাদি প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রবর্তক সঙেঘর এই বহুব্যাপ্ত কর্মধারা তাঁর সংগঠন-শক্তি ও নেতৃত্বের পরিচায়ক।
পূর্ববর্তী:
« মতিলাল মল্লিক
« মতিলাল মল্লিক
পরবর্তী:
মতিলাল শীল »
মতিলাল শীল »
Leave a Reply