মজনু শাহ (১৮শ শতাব্দী)। উত্তরবঙ্গের সন্ন্যাসী বিদ্রোহের অন্যতম নায়ক। ১৭৭১ খ্রী. তাঁর পরিচালনায় আড়াই হাজার বিদ্রোহী সৈন্য বিরাট ইংরেজ বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে পরাজিত হলে তিনি মহাস্থানগড়ের সুরক্ষিত দুৰ্গে আশ্রয় নেন। পরে বিদ্রোহের প্রয়োজনে বিহারে যান। নাটোরের রাণী ভবানী বিদ্রোহে যোগদানের আবেদনে সাড়া না দেওয়ায় তাঁর নেতৃত্বে ১৭৭২ খ্ৰী নাটোর অঞ্চলে বিদ্রোহীরা সক্রিয় হয়ে ওঠে। ১৭৭৬ খ্ৰীষ্টাব্দের শেষভাগে তিনি উত্তরবঙ্গে ফিরে এসে ছত্ৰভঙ্গ বিদ্রোহীদের সঙ্ঘবদ্ধ করার ও নূতন লোক সংগ্ৰহ করার চেষ্টা করেন। ১৪ নভেম্বর ১৭৭৬ খ্রী. ইংরেজবাহিনী গোপনপথে ব্ৰহ্মপুত্রতীরে মজনুর ঘাঁটি আক্রমণ করলে তিনি অনুচরসহ জঙ্গলের দিকে পালিয়ে যান। ইংরেজসেনা তাঁর পশ্চাদ্ধাবন করলে তিনি সদলে অতর্কিতে পাল্টা আক্রমণ চালিয়ে শত্রুসৈন্য পর্যুদস্ত করে গভীর জঙ্গলে আত্মগোপন করেন। এইসময় সন্ন্যাসী ও ফকিরদের আত্মকলহ সশস্ত্র রূপ ধারণ করে। ১৭৭৭ খ্রী. বগুড়া জেলায় একদল সন্ন্যাসীর সঙ্গে তাঁর ফকির সম্প্রদায়ের প্রচণ্ড সংঘর্ষ হয়। এইভাবে প্রায় তিন বছর ধরে পূর্ববঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চলে ঘুরে সৈন্যসংগ্রহের জন্য সন্ন্যাসী ও ফকিরদের পুনরায় সঙ্ঘবদ্ধ করতে চেষ্টা চালান এবং সঙ্গে সঙ্গে বিদ্রোহের জন্য অর্থসংগ্রহের উদ্দেশ্যে বগুড়া, ঢাকা এবং ময়মনসিংহের বহু অঞ্চলের জমিদারদের কাছ থেকে ‘কার’ আদায় ও বহু স্থানে ইংরেজ সরকারের কোষাগার লুণ্ঠন করেন। অনুচরদের ওপর তাঁর কঠোর নির্দেশ ছিল তারা যেন জনসাধারণের উপর কোন প্ৰকার অত্যাচার বা বলপ্ৰয়োগ না করে এবং জনসাধারণের স্বেচ্ছার দান ব্যতীত কিছুই গ্ৰহণ না করে। শত্রুপক্ষের বিপুল আয়োজন সত্ত্বেও তিনি ও তাঁর অনুচরগণ সমগ্ৰ উত্তরবঙ্গ, ময়মনসিংহ ও ঢাকা জেলার বিভিন্ন স্থানে প্ৰবল বিক্রমে কাজ চালিয়ে যান। ২৯ ডিসেম্বর ১৭৮৬ খ্রী. পাঁচশত সৈন্যসহ বগুড়া জেলা থেকে পূর্বদিকে যাত্রা করার পথে কালেশ্বর নামক স্থানে ইংরেজ বাহিনীর সম্মুখীন হন। এই যুদ্ধে মজনু মারাত্মকভাবে আহত হলে তাঁর অনুচরেরা রাজশাহী ও মালদহ জেলা অতিক্রম করে বিহারের সীমান্তে যায়। মাখনপুর নামে এক পল্লীতে সন্ন্যাসী বিদ্রোহের এই নায়কের কর্মময় জীবনের অবসান ঘটে।
পূর্ববর্তী:
« মখদুম হাবীব (মখদুম সাহেব)
« মখদুম হাবীব (মখদুম সাহেব)
পরবর্তী:
মজযুবা বিবি »
মজযুবা বিবি »
Leave a Reply