ভূপেন্দ্ৰকুমার দত্ত (১৮৯৪ — ২৯-১২-১৯৭৯) ঠাকুরপুর—যশোহর। যশোহর নড়াইলের জমিদার এস্টেটের ভারপ্রাপ্ত উচ্চপদস্থ কর্মচারী কৈলাসচন্দ্র। বিপ্লবী যুগান্তর দলের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি। স্বদেশী আন্দোলনের যুগে পনর বছর বয়সে স্বাধীনতার জন্য আত্মোৎসর্গের প্রতিজ্ঞা গ্ৰহণ করেন। ১৯১১ খ্রী. ম্যাট্রিক পাশ করে কিছুদিন কলিকাতা স্কটিশ চার্চ কলেজে পড়েন। পরে খুলনার দৌলতপুর হিন্দু একাডেমীতে ভর্তি হন। ইতিমধ্যে দলের কার্যকলাপে কিছুটা বীতশ্রদ্ধ হয়ে তিনি সেবামূলক কাজ ও শরীরচর্চা ভিত্তি করে সহকর্মী কয়েকজনকে নিয়ে একটি দল গঠন করেন। নিজেদের সংগৃহীত অর্থ দিয়ে সহকর্মীদের জন্য একটি হস্টেল পরিচালনা করতেন। ছাত্রনেতা হিসাবে বিপ্লবী যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের সংস্পর্শে আসেন এবং জার্মান অস্ত্ৰ-সাহায্যে ভারতে সশস্ত্ৰ বৈপ্লবিক অভ্যুত্থানের যে প্ৰস্তুতি যুগান্তর দল গ্রহণ করেছিল তাতে তিনি সক্রিয় ভূমিকা নেন। খুলনা এবং যশোহর কেন্দ্ৰদুটির ভার তাঁর উপর ছিল। এছাড়া দলের আরও যে-সব দায়িত্বপূর্ণ কাজ আত্মগোপন অবস্থায় ঠাকে করতে হত, তা তিনি বালেশ্বর যুদ্ধে যতীন্দ্রনাথের মৃত্যুর পরও চালিয়ে যান। ১৯১৭ খ্রী. তিন আইনে গ্রেপ্তার হন। জেলে স্টেট প্রিজনারদের অনশন ধর্মঘট-কালে তাঁকে বিলাসপুর জেলে পৃথক রাখা হয়। তিনি এ সময় ৭৮ দিন অনশন করেছিলেন। ১৯২০ খ্রী. ছাড়া পেয়ে নাগপুর কংগ্রেসে গান্ধীজীর সঙ্গে আলোচনার পরে গণসংযোগ করার উদ্দেশ্যে যুগান্তর দল সহ তিনি কংগ্রেসে সক্রিয় অংশ গ্ৰহণ করেন। অসহযোগ আন্দোলন বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর দলের অন্যান্যদের সঙ্গে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের স্বরাজ্য পার্টি সংগঠনে সহায়তা করেন। ১৯২৩ খ্রী. গ্রেপ্তার হয়ে ব্ৰহ্মদেশের জেলে আটক থাকেন। সেখানে জেলের ভেতর থেকেই ব্রিটিশ সরকারী নীতির প্রতিবাদ প্রচারে ও ব্ৰহ্মদেশের বিদ্রোহ সংগঠনে সচেষ্ট ছিলেন। ১৯২৮ খ্রী. মুক্তি পেয়ে অস্ত্রসংগ্ৰহ, বোমা তৈরি ও কংগ্রেস স্বেচ্ছাসেবক-বাহিনী সংগঠনে আত্মনিয়োগ করেন। ১৯৩০ খ্রী.বিপ্লবী সূর্য সেনের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার আক্রমণের ঘটনাকে উপলক্ষ করে শ্ৰীসরস্বতী প্রেসে মুদ্রিত ও প্রকাশিত সাপ্তাহিক ‘স্বাধীনতা’ পত্রিকায় ‘ধন্য চট্টগ্রাম’ প্ৰবন্ধ লিখলে সরকার সঙ্গে সঙ্গে পত্রিকাটি বাজেয়াপ্ত করে দেয় এবং কিছু দিনের মধ্যে তিনি ধরা পড়ে কারারুদ্ধ হন। ৮ বছর আটক থাকেন। ১৯৪১ খ্রী পুনরায় গ্রেপ্তার হবার আগে পর্যন্ত ইংরেজী সাপ্তাহিক ‘ফরওয়ার্ড’ পত্রিকা সম্পাদনা করেন। দেশ-বিভাগের পর পাকিস্তানের নাগরিক হয়ে সেখানে আন্দোলন সংগঠনে সচেষ্ট হন। পাকিস্তান পার্লামেন্টের সদস্য হয়েছিলেন। ১৯৬২ খ্রী. সেদেশে রাজনৈতিক ক্রিয়াকলাপ রোধকারী সামরিক আইন জারি হলে তিনি ভারতে ফিরে আসেন এবং প্ৰত্যক্ষ রাজনীতি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। রচিত গ্রন্থঃ ‘বিপ্লবের পদচিহ্ন’, ‘Revolution and the Constructive Programme’। এ ছাড়া বহু স্বাধীনতা-সংগ্ৰামীর জীবনী তিনি লিখেছেন।
পূর্ববর্তী:
« ভূপেন্দ্রনাথ সান্যাল
« ভূপেন্দ্রনাথ সান্যাল
পরবর্তী:
ভূপেন্দ্ৰকৃষ্ণ ঘোষ »
ভূপেন্দ্ৰকৃষ্ণ ঘোষ »
Leave a Reply