ভবাণী, রাণী (১১২১ – ১২০০ ব. ?) ছাতিমগ্রাম-রাজশাহী। আত্মারাম চৌধুরী। স্বামী নাটোরের জমিদার রাজা রামকান্ত রায়। বাঙলাদেশে হিন্দুধর্ম ও ব্রাহ্মণ প্রতিপালন এবং দীনদুঃখীর দুৰ্দশা-মোচনের ঐকান্তিক প্রচেষ্টার জন্য রাণী ভবানী স্বনামধন্যা। ১১৫৩ বর্ণ স্বামীর মৃত্যুর পর সম্পত্তির উত্তরাধিকারিণী হন। এই সময় নাটোর জমিদারীর বাৎসরিক আয় ছিল দেড় কোটি টাকা। নবাব-সরকারে রাজস্ব-স্বরূপ। ৭০ লক্ষ টাকা দিয়ে বাকি টাকা তিনি ধর্মীয় কাজে এবং সাধারণ লোকের হিতার্থে ব্যয় করতেন। রাজকার্য পরিচালনায় তিনি দেওয়ান দয়ারামের পরামর্শ ও সহায়তা পেয়েছিলেন। ১৭৫৩ খ্রী. তিনি কাশীধামে ভবানীশ্বর শিব স্থাপন করেন। কাশীর বিখ্যাত দুৰ্গাবাড়ী, দুৰ্গাকুন্ড এবং ‘কুরুক্ষেত্ৰতলা’ নামে জলাশয় তাঁরই কীর্তি। তিনি হাওড়া শহর থেকে কাশীধাম পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণ করেন। সেই প্ৰাচীন রাস্তাটি বর্তমানে বম্বে রোডের অংশবিশেষ। হাওড়া অঞ্চলে প্রাচীনেরা এটিকে রাণী ভবানী রোড বা বেনারস রোড বলে উল্লেখ করেন। বড়নগরে তাঁর নির্মিত ১০০ টি শিবমন্দিরের ৪/৫ টি এখনও বর্তমান। মন্দিরগাত্রে এক ধরনের সুষমামণ্ডিত টেরাকোটা শিল্প উৎকীর্ণ যা বর্তমানে বিরল। তিনি মুর্শিদাবাদের নবাব সিরাজদ্দৌলাকে গদীচ্যুত করার ষড়যন্ত্রে ইংরেজ পক্ষে ষড়যন্ত্রকারীদের ভর্তসনা করেছিলেন। পরবর্তী কালে ঘটনাচক্রে ওয়ারেন হেস্টিংস তাঁর রংপুরস্থিত বাহেরবন্দ জমিদারী বলপূর্বক দখল করে কান্তবাবুকে দান করেন। রাণীর একমাত্র কন্যা অল্প বয়সে বিধবা হন। পুত্রসন্তান না থাকায় তিনি রামকৃষ্ণ নামে যাঁকে দত্তকপুত্র হিসাবে গ্রহণ করেছিলেন, তিনি পরে ‘সাধক রাজযোগী’ বলে খ্যাতিলাভ করেন। রামকৃষ্ণ বয়ঃপ্ৰাপ্ত হলে রাণী তাঁর হাতে রাজ্যভার দিয়ে গঙ্গাতীরবর্তী বড়নগরে কন্যাসহ বাস করতে থাকেন।
পূর্ববর্তী:
« ভবশঙ্করী
« ভবশঙ্করী
পরবর্তী:
ভবাণীচরণ লাহা »
ভবাণীচরণ লাহা »
Leave a Reply