ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় (১৭৮৭ – ২০-২১৮৪৮) নারায়ণপুর গ্ৰাম—উখড়া পরগনা। রামজয়। শিক্ষাগত যোগ্যতার বলে বিভিন্ন ইউরোপীয় ব্যবসায়-প্রতিষ্ঠানে এবং বিশপ রেজিন্যাল্ড প্রমুখ ইউরোপীয়দের অধীনে চাকরি করেন। সমাজের প্রতিপত্তিশালী ব্যক্তি হিসাবে ১৮২৮ খ্রী তিনি জুরী নিযুক্ত হন, কিন্তু তাঁর জীবনের প্রধান কৃতিত্ব সাংবাদিকতায়। ১৮২১ খ্রী. থেকে সাপ্তাহিক ‘সংবাদ কৌমুদী’ পত্রিকায় কাজ করেন। রাজা রামমোহন ও তদলীয় লোকজনের সঙ্গে ধর্মমত নিয়ে বিরোধ হওয়ায় একাজ ছাড়তে বাধ্য হন। কলুটোলায় নিজে একটি মুদ্রাযন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে ৫ মার্চ ১৮২২ খ্রী. ‘সমাচার চন্দ্ৰিকা’ প্ৰকাশ করেন। রক্ষণশীল হিন্দুদের শক্তিশালী মুখপত্ররূপে পত্রিকাটি ১৮২৯ খ্রী. থেকে সপ্তাহে দু’বার প্রকাশিত হত। ১৮৩০ খ্রী. রাধাকান্ত দেবের নেতৃত্বে ধৰ্মসভা প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি তাঁর সম্পাদক হন। সতীদাহের বিরুদ্ধে রামমোহনের আন্দোলনের বিরোধিতা করলেও তিনিই প্ৰথম লোক যিনি এদেশের শিল্প-বাণিজ্যে বিদেশী অর্থ বিনিয়োগের এবং বিদেশী প্রথার বিরোধিতা করেন। এ ব্যাপারে তিনি জমিদারদের তাদের সম্পদ দেশের কৃষি ও শিল্প-বাণিজ্য বিস্তারে ব্যবহার করার জন্য আহ্বান জানান, কারণ অন্যথায় দেশ বিদেশী উপনিবেশে পরিণত হবে। গৌড়ীয় সমাজের সদস্যরূপে বাংলা ভাষার উন্নতির জন্য কয়েকটি পাঠ্যপুস্তকের বঙ্গানুবাদ করেন। ‘কলিকাতা কমলালয়’, ‘নববাবুবিলাস’, ‘দূতীবিলাস’, ‘নববিবিবিলাস’ প্রভৃতি তার রচিত গ্রন্থে তদানীন্তন কলিকাতা সমাজের দুর্নীতির আবরণ খুলে দিয়েছিলেন। প্রথমোক্ত দুটি গ্রন্থে হিন্দু সমাজের ‘বাবু’ ও ‘ইয়ং বেঙ্গল’দের তীব্র বিদূপে জর্জরিত করেছিলেন। তাঁর গ্রন্থগুলি বাংলা ভাষায় রচিত প্ৰথম মৌলিক উপাখ্যানরূপে পরিচিত। প্রমথনাথ শৰ্মা ছদ্মনামে ১৮২৫ খ্রী. রচিত ‘নববাবুবিলাস’ গ্ৰন্থটি বাংলা ভাষায় প্রথম কাহিনী।
পূর্ববর্তী:
« ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়
« ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়
পরবর্তী:
ভবানীপ্ৰসাদ ভট্টাচাৰ্য »
ভবানীপ্ৰসাদ ভট্টাচাৰ্য »
Leave a Reply