ভবদেব ভট্ট (১০ম/১১শ শতাব্দী) সিন্ধল-রাঢ়দেশ। পিতা গোবর্ধন যোদ্ধা ও পণ্ডিত এবং পিতামহ আদিদেব বঙ্গদেশের রাজার মন্ত্রী ছিলেন। ভবদেবের মন্ত্রণা-প্রভাবে পূর্ববঙ্গের তৎকালীন বৰ্মনবংশীয় রাজা হরিবর্মদেব ও তাঁর পুত্র বহুদিন রাজ্যভোগ করতে সমর্থ হন। সম্ভবত সন্ধিবিগ্রাহিক ভবদেব ভট্ট উত্তর রাঢ় অঞ্চলের স্থানীয় শাসক (রাজপ্রতিনিধি) বা রাজারূপে এই অঞ্চলের সর্বময় শাসনকর্তৃত্বে প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। উত্তর রাঢ় অঞ্চলের লোকস্মৃতিতে তিনি ‘ভাট রাজা’-রূপে বিধৃত হয়ে আছেন। সিদ্ধান্ত, তন্ত্র, গণিতশাস্ত্র ও আয়ুর্বেদাদি শাস্ত্ৰে তাঁর বিশেষ বুৎপত্তি ছিল। পূর্বোক্ত ধৰ্মশাস্ত্রের নিবন্ধসমূহের উদ্ধার ছাড়া তিনি নবীন হোরাশাস্ত্র, ভট্টোক্ত মীমাংসানীতি ও ন্যায়শাস্ত্র রচনা করেছিলেন। সমাজ-সংস্কারে মনোযোগী হয়ে তিনি হিন্দুর আচার, ব্যবহার ও প্ৰায়শ্চিত্ত-এই বিষয়ে প্রামাণ্য গ্ৰন্থ রচনা করেন। তাঁর রচিত গ্রন্থের মধ্যে ‘প্ৰায়শ্চিত্ত প্রকরণ’ ও ‘দশকর্ম-পদ্ধতি’–মাত্র এই দুখানি প্রকাশিত হয়েছে। ভারতবর্ষের বহু পণ্ডিত তাঁর মীমাংসা-দর্শনের টীকার উল্লেখ করেছেন। তিনি ব্যবহারিক জীবনে বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের তর্কযুদ্ধে বা অন্যভাবে পরাস্ত করে তাদের বর্ণাশ্রম ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত করেন। বিভিন্ন জীবিকার বৌদ্ধ সম্প্রদায়কে হিন্দু বর্ণাশ্রমভুক্ত করার প্রথম কৃতিত্বও তাঁর প্রাপ্য। তাঁর পদ্ধতি অনুসারে আজও রাটীয় ব্ৰাহ্মণ-সমাজের সংস্কারাদি সম্পন্ন হয়। তিনি ‘ছন্দোগপদ্ধতি’ও রচনা করেন। তাঁর অপর নাম ‘বালবলভীভুজঙ্গ’। রাঢ়দেশের নানাস্থানে জলাভাব দূর করার জন্য তিনি জলাশয় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ওড়িশার অনন্তবাসুদেবের মন্দির ও মন্দির-পার্শ্বস্থ সরোবর তাঁরই যত্নে নির্মিত। বিক্রমপুরে তিনি নারায়ণের মূর্তি ও মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
পূর্ববর্তী:
« ভবতোষ ভট্টাচাৰ্য
« ভবতোষ ভট্টাচাৰ্য
পরবর্তী:
ভবভূষণ মিত্র, জগদগুরু সত্যানন্দ »
ভবভূষণ মিত্র, জগদগুরু সত্যানন্দ »
Leave a Reply