ব্ৰহ্মবান্ধব উপাধ্যায় (১১-২-১৮৬১ – ২৭-১০-১৯০৭) খন্যান-হুগলী। দেবীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়। ব্ৰহ্মবান্ধবের পূর্বনাম ভবানীচরণ। ১৬ বছর বয়সেই ক্ষাত্রশক্তির সাহায্যে দেশমাতৃকার শৃঙ্খল-মোচনের স্বপ্ন দেখতেন। হুগলী কলেজিয়েট স্কুল থেকে এন্ট্রান্স পাশ করে কলিকাতা জেনারেল অ্যাসেমব্লিজ ইনস্টিটিউশনে ভর্তি হয়েও সমাজ-সেবার জন্য কলেজ ত্যাগ করেন। কেশবচন্দ্র সেনের সংস্পর্শে এসে ১৮৮৭ খ্রী. ব্ৰাহ্মধর্ম নিয়ে ব্ৰাহ্মধর্ম প্রচারের জন্য সিন্ধুদেশে যান। এখানে কয়েকজন রোমান ক্যাথলিক পাদরী এবং খুল্লতাত রোভা, কালীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রভাবে প্ৰথমে প্রটেস্ট্যান্ট ও পরে রোমান ক্যাথলিক সম্প্রদায়ভুক্ত হন। খ্ৰীষ্টধর্ম প্রচারের আকাঙক্ষায় সন্ন্যাস গ্ৰহণ করেন। হিন্দু সন্ন্যাসীর মতই তিনি গৈরিক বসন পরতেন। ক্যাথলিক ধর্মপ্রচারে তিনি একে বিদেশী আবরণ মুক্ত করে সম্পূর্ণ ভারতীয় রূপে প্রতিষ্ঠিত করতে প্ৰয়াসী হয়েছিলেন। হিন্দু ক্যাথলিক বা ঈশাপন্থী হিন্দু সন্ন্যাসী গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে জব্বলপুরে নর্মদার তীরে ‘কান্থলিক মঠ’ স্থাপন করেন। ‘কঙ্কর্ড ক্লাব’ নামে একটি সমিতি ও ‘কঙ্কর্ড’ নামে একটি মাসিক পত্রিকা প্ৰকাশ করেন। তিনি ইউনিয়ন অ্যাকাডেমিতে শিক্ষকতা করতেন। এরপর কিছুদিন করাচীতে ‘ফিনিক্স’ ও ‘হার্মান’ পত্রিকার সম্পাদনা ও নগেন্দ্রনাথ গুপ্তের সহায়তায় কলিকাতায় টুয়েন্টিয়েথ সেঞ্চুরী নামে একটি মাসিক-পত্ৰ প্ৰতিষ্ঠা ও পরিচালনা করেন। ১৮৯৪ খ্ৰী. থেকে ১৮৯৯ খ্রী. পর্যন্ত তিনি করাচীতে ‘সোফিয়া’ নামে একটি মাসিক পত্রিকার প্রকাশ-কাৰ্যও চালান। ১৯০১ খ্রী. স্বামী বিবেকানন্দের প্রভাবে হিন্দুধর্মে প্রত্যাবর্তন করে ব্ৰহ্মবান্ধব উপাধ্যায় নাম নিয়ে ১৯০২–০৩ খ্রী. বেদান্ত-প্রচারার্থ বিলাত যান এবং অক্সফোর্ড ও কেমব্রিজে হিন্দুধর্ম-সম্বন্ধে বক্তৃতা করে প্রসিদ্ধ হন। রবীন্দ্রনাথের ভাষায় তিনি ছিলেন ‘রোমান ক্যাথলিক সন্ন্যাসী, অপরপক্ষে বৈদান্তিক-তেজস্বী, নির্ভীক, ত্যাগী, বহুশ্রুত ও অসামান্য প্ৰতিভাশালী’। তিনি মাতৃভাষায় শিক্ষা-ব্যবস্থার প্রবক্তা ছিলেন। ১৯০১ খ্রী কলিকাতার সিমলায় বৈদিক আদর্শে তিনি আবাসিক বিদ্যালয় ‘সারস্বত আয়তন’ স্থাপন করেন। রবীন্দ্রনাথ শান্তিনিকেতনে ‘ব্ৰহ্মচর্য বিদ্যালয়’ স্থাপনকালে (১৯০১) তাঁর সক্রিয় সাহায্য পান। ব্ৰহ্মবান্ধবের মতে সরকারী নিয়ন্ত্রণে বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে ‘গোলদীঘির গোলামখানা’। স্বামী বিবেকানন্দের মৃত্যুর পর ফিরিঙ্গিজয়ের দুর্জয় সঙ্কল্প নিয়ে তিনি রাজনৈতিক নেতারূপে অবতীর্ণ হন। অগ্নিযুগের অন্যতম পুরোধা ব্ৰহ্মবান্ধব ১৯০৪ খ্রী. প্রতিষ্ঠিত ‘সন্ধ্যা’ দৈনিক পত্রিকার মাধ্যমে। আপসহীন বলিষ্ঠ সংগ্রাম ঘোষণা করেন। ১৯০৭ খ্রী. সরকারের আদেশে ‘সন্ধ্যা’ পত্রিকা বন্ধ করা হয় এবং রাজদ্রোহের অভিযোগে তিনি মুদ্রাকরসহ ধৃত হন। তিনি আদালতে ঘোষণা করেন যে ব্রিটিশ কর্তৃত্ব তিনি মানেন না। মামলা চলাকালে ক্যাম্বেল হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের তিন দিন পর ধনুষ্টঙ্কার রোগে মারা যান। রচিত উল্লেখযোগ্য গ্ৰন্থ : ‘বিলাতযাত্রী সন্ন্যাসীর চিঠি’, ‘ব্ৰহ্মামৃত’, ‘সমাজতত্ত্ব’, ‘আমার ভারত উদ্ধার’, ‘পালপার্বণ’ প্রভৃতি।
পূর্ববর্তী:
« ব্ৰহ্মকুমারী রায়
« ব্ৰহ্মকুমারী রায়
পরবর্তী:
ব্ৰহ্মমোহন মল্লিক »
ব্ৰহ্মমোহন মল্লিক »
Leave a Reply